নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-১ (কোকে)
কেরল ব্লাস্টার্স-০
নর্থইস্টের জয়ের দিন মাঠে ঠিক হাজির হয়ে গেলেন আটলেটিকোর গুপ্তচর!
ঘড়ির কাঁটায় রাতে সাড়ে ন’টা। স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোনোর মুখে নর্থইস্টের ফেস্টুনটা হাতে তুলে গাড়ির পা-দানিতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন জন আব্রাহাম। ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের সামনে তাঁকে ঘিরে ধরা ফুটবল জনতার একের পর এক উড়ন্ত চুম্বন তখন ছুটে আসছে বলিউডের মাচো অভিনেতার দিকে। মুখে তৃপ্তির হাসি আইবর, রবিন গুরুঙ্গদের টিম মালিকের। কিন্তু জানতেন কি, তাঁর দলের স্ট্র্যাটেজি মগজ-বন্দী করে নিয়ে গেলেন আটলেটিকো দে কলকাতার সহকারী কোচ!
হুটার বাজিয়ে এক সময় হোটেলের দিকে চলতে শুরু করল জনের দুধ-সাদা গাড়ি। পিছনে ‘কোকে’, ‘কোকে’ কলরব। স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে সেই গাড়ি আসতেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তা দেখলেন আটলেটিকো দে কলকাতার গুপ্তচর-- হোসে রামিরেজ ব্যারেটো।
জনের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই মুখে তৃপ্তির হাসি সৌরভের দলের সহকারী কোচের। বললেন, “এমন জায়গায় বসেছিলাম যে কেউ দেখতেই পাবে না। খেলা শেষ হওয়ার আগেই উঠে এসেছি। দু’টো টিমেরই প্রচুর ভুলভ্রান্তি চোখে পড়ল। এ বার আমাদের তা কাজে লাগানোর পালা।”
রবিবারের ম্যাচে জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এ দিন দুপুরের উড়ানে পাড়ি দিয়েছিলেন গুয়াহাটি। কলকাতা ফিরছেন মঙ্গলবার দুপুরে। তার আগে নিজের মিশনে পুরোপুরি সফল ব্যারেটো। পুজোর সময় দেখে এসেছেন বেশ কয়েকটি দলের অনুশীলন ম্যাচ। এ দিন দেখে গেলেন কাপদেভিয়াদের জয়ের রোড ম্যাপও।
কী দেখলেন? কলকাতায় বসেই খবর রেখেছিলেন, নর্থইস্টের বিশ্বকাপার কোচ রিকি হারবার্ট গোয়ায় গিয়ে যে সব প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছিলেন, সেখানে তাঁর অস্ত্র ছিল প্রতি-আক্রমণ। ট্রেভর মর্গ্যানের দলের বিরুদ্ধে সেই প্রতি-আক্রমণের স্ট্র্যাটেজিই এ দিন নিয়েছিলেন নর্থ-ইস্ট কোচ। আক্রমণে জেমস কিনকে পিছন থেকে বারবার অপারেট করাচ্ছিলেন। আর তার আগে রাখছিলেন তাঁর স্প্যানিশ স্ট্রাইকার কোকেকে। লক্ষ্য ছিল একটাই বল পেলেই উইংয়ে ঠেলো। তার পর যেন তেন প্রকারে বল বক্সে পাঠাও। কোকে বা জেমসের কেউ এক জন ডামি রান দেবেন। আর এক জন শিকারি বেড়ালের মতো ওঁত পেতে থাকবেন সেকেন্ড বলটা কখন উড়ে আসবে। আইবরের থ্রো থেকে কোকের গোলটা এল ঠিক এই ট্যাকটিক্সেই।
ভারতীয় ফুটবলে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের পোড়খাওয়া ব্রিগেডকে পকেটে পুরতে জনের দল স্টপারে রেখেছিল কাপদেভিয়া এবং মিগুয়েল গার্সিয়াকে। রাইট ব্যাকে আইবর আর লেফট ব্যাকে রবিন গুরুঙ্গ। স্ট্রাইকিং ফোর্সে একে নিজেদের ব্যর্থতা আর অন্য দিকে রবিনদের মরিয়া লড়াই, সঙ্গে হাজার পঁয়ত্রিশের শব্দব্রহ্ম আর ম্যাচে দাঁত ফোটাতে দেয়নি সচিন তেন্ডুলকরের দলকে। শেষ মুহূর্তে রবিন গুরুঙ্গের ব্যাকভলিতে গোললাইন সেভে তারই প্রতিচ্ছবি। হারবার্ট সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, “আমার দলের দ্বাদশ ফুটবলার এখানকার দর্শক।”
সচিনের দল প্রথম ম্যাচেই হারের ধাক্কা খেল আক্রমণে গোল করার লোকের অভাবে। শুরুর দিকে কেরল অধিনায়ক পেন যে লোড নিয়ে বল বাড়াচ্ছিলেন, তা থেকে গোল করতে পারলে ম্যাচের রংটাই বদলে যেতে পারত। তাঁদের মার্কি ফুটবলার ডেভিড জেমস বলেও গেলেন, “হিউমের গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হল। আর সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতাই আমাদের জিততে দিল না। ম্যাচটা ড্র রাখতে পারলেও এত হতাশা আসত না।”
ম্যাচের আগে টিম হোটেলে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের আর এক মালিক লারসিং মিং বলছিলেন, “কলকাতার ম্যাচের জোশটা আজ চাই।” মাঠে সেটা তিনি পুরোপুরিই পেয়ে গেলেন প্রথম ম্যাচে। তিন পয়েন্ট, সঙ্গীত তারকা জুবিন-পাপনদের কনসার্ট, সঙ্গে মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। আর তার পর একদম নব্বই মিনিটের ফুটবল কার্নিভ্যাল।
দিনের শেষে জনের দলের কাছে কাঁটা এক জনই। তিনি আর কেউ নন। হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। নোটবুকে অনেক কিছুই যে টুকে নিয়ে গেলেন তিনি। দর্শক গ্যালারিতে বসে। চুপিচুপি!