বৃষ্টির বিরক্তি ভুলে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন মাতল জোকারে

রজারের নতুন স্ট্র্যাটেজি তো মাত্র দু’শতাংশ পয়েন্ট আনল

আমার শিষ্যের হয়তো এর চেয়ে ভাল ভাবে মরসুমটা শেষ হওয়া সম্ভব ছিল না— টানা চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল আর বছরের তিন নম্বর স্ল্যাম! তবে ফাইনালে পরাজিত ফেডেরারেরও এই বছরটা অনবদ্য গিয়েছে। বিশেষ করে চৌত্রিশ বছর বয়সেও ও যে ভাবে খেলছে তার কেবল প্রশংসাই করতে পারে এক জন। এক সপ্তাহ আগে আমি যে কথাটা বলেছিলাম সেটা এই সপ্তাহান্তে ঘুরেফিরে এমন হতাশ ভাবে এল যে, সবার মনে হতে পারে, আমি গ্রেট সুইস চ্যাম্পিয়কে অবমাননা করছি।

Advertisement

বরিস বেকার

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

কোচের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন। পাশে জকোভিচের স্ত্রী ইয়েলেনা। ছবি: রয়টার্স

আমার শিষ্যের হয়তো এর চেয়ে ভাল ভাবে মরসুমটা শেষ হওয়া সম্ভব ছিল না— টানা চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল আর বছরের তিন নম্বর স্ল্যাম!
তবে ফাইনালে পরাজিত ফেডেরারেরও এই বছরটা অনবদ্য গিয়েছে। বিশেষ করে চৌত্রিশ বছর বয়সেও ও যে ভাবে খেলছে তার কেবল প্রশংসাই করতে পারে এক জন। এক সপ্তাহ আগে আমি যে কথাটা বলেছিলাম সেটা এই সপ্তাহান্তে ঘুরেফিরে এমন হতাশ ভাবে এল যে, সবার মনে হতে পারে, আমি গ্রেট সুইস চ্যাম্পিয়কে অবমাননা করছি।
আমি বলেছিলাম, বিপক্ষের দ্বিতীয় সার্ভে ফেডেরারের অতটা বেসলাইন ছেড়ে নেটের দিকে এগিয়ে আসাটাকে যেন দেখাচ্ছে, প্রতিপক্ষ প্লেয়ারকে অবমাননা করা হচ্ছে! আমি সে দিন সঙ্গে এটাও কিন্তু বলেছিলাম যে, অতীতে একই কাজ ম্যাকেনরো, এডবার্গ এবং আরও কয়েক জন প্লেয়ার করেছে। আর শেষ পর্যন্ত এ রকম একটা স্ট্র্যাটেজি গেম-চেঞ্জার হয়ে ওঠেনি। কিন্তু কোনও অজানা কারণে শুধু আমার বলা ‘অবমাননা’ কথাটাই খবরের কাগজে বেরোল। বাকি পর্যবেক্ষণগুলো নয়!
দিনের শেষে ফেডেরারের ওই নতুন স্টাইলের সার্ভিস রিটার্ন ফ্লাশিং মেডোয় ও মোট যত পয়েন্ট পেয়েছে তার মাত্র দুই শতাংশ এনে দিয়েছে। এই স্ট্র্যাটেজি ফেডেরারকে ফাইনালে হারায়নি, জেতায়ওনি। এবং টেনিস খেলাটার উপর একবিন্দু ছাপ রাখেনি, ভবিষ্যতেও রাখবে না। মনে হয়, প্রচারমাধ্যম আর ফ্যানরা সব সময় কোনও না কোনও নতুন তর্কের বিষয়ের খোঁজ করে বেড়ায়। এবং আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাদের সে রকমের একটা বিষয় দিয়ে বসেছি।
ফ্লাশিং মেডোর ফাইনাল অনেক দিক দিয়েই কয়েক মাস আগের উইম্বলডন ফাইনালের প্রতিধ্বনি। যে ম্যাচে ফেডেরার ফের অনেক সুযোগ পেয়েও সেগুলো খুইয়েছে। এ রকম ম্যাচে আপনি ২৩টা ব্রেক পয়েন্ট পেয়ে তার মাত্র চারটে কাজে লাগিয়ে আর যা করুন, জেতার আশা অন্তত করতে পারেন না! ঘটনা এটাই যে, ফেডেরার এখন গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলতে নামলেই ওর উপর আঠেরো নম্বর স্ল্যাম-প্রত্যাশার চাপ প্রচণ্ড বেশি বসছে। উল্টো দিকে কে ওর প্রতিদ্বন্দ্বী সেই ভাবনাও উবে যাচ্ছে ওর ফ্যানদের— এমনকী সেই প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বের এক নম্বর কিংবা শীর্য বাছাই হলেও!

Advertisement

নোভাকের কথায় ফেরা যাক। গোটা বছরটা ও অতুলনীয় ফর্মে ছিল। ফিটনেসের উন্নতি ঘটিয়েছে। ফোকাস বাড়িয়েছে। আর খেলাটার উপর ওর গ্রেট অ্যাটিটিউড তো বরাবরের মতো আছেই। পেশাদার ট্যুরের বিচারে মরসুমটা এখনও শেষ হয়নি। সাংহাই আর বেজিংয়ে এখনও নোভাক খেলবে। কিন্তু আমি মনে করি, ওর যে একটা খুব ভাল বছর কেটেছে, সেটা এখনই বলে দেওয়ায় কোনও ঝুঁকি নেই। এই লেখাটা শেষ করে আমরা গুরু-শিষ্য দুজনে কাছাকাছিই কোথাও গিয়ে একসঙ্গে বসে বিয়ার খেয়ে বিজয়োৎসব করব।

Advertisement

দশম স্ল্যামের পিছনে

এসএবিআরের জন্য জোকার দাওয়াই

যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে বিপক্ষের দ্বিতীয় সার্ভিস নেটের কাছে দৌড়ে এসে ফেডেরারের রিটার্ন করার নাম হয়েছিল ‘স্নিক অ্যাটাক বাই রজার’ বা ‘এসএবিআর’। যে অভিনব স্ট্র্যাটেজি ফাইনালে উড়ে গিয়েছে জকোভিচের অ্যান্টিডোটে। দ্বিতীয় সার্ভের গতিও অনেক বাড়িয়ে ফেডেরারকে বেসলাইন থেকে এগিয়ে আসতে দেননি জকোভিচ।

‘দিস ইজ স্পার্টা’

ফাইনালের আগের রাতে হলিউড ব্লকবাস্টার ‘থ্রি হান্ড্রেড’ দেখে নিজেকে তাতান জকোভিচ। এমনকী জেতার পরে স্টেডিয়ামের বক্সে বসে থাকা ওই সিনেমার বিখ্যাত নায়ক জেরার বাটলারের সামনে গিয়ে হুঙ্কার দেন ‘দিস ইজ স্পার্টা’। যা ওই সিনেমার একটি বিখ্যাত সংলাপ।

জোকার যখন হাঙর

শেষ দু’সেটে জকোভিচ-শাসন দেখে ধারাভাষ্যে গোরান ইভানিসেভিচ বলেন, ‘‘জকোভিচ হাঙরের মতো। রক্তের স্বাদ পেলে শিকারকে ছিঁড়ে ফেলে।’’

বেহিসেবি ফেডেরার

জকোভিচের বিরুদ্ধে ২৩টা ব্রেক পয়েন্ট পেয়ে মাত্র চারটে কাজে লাগিয়েছেন ফেডেরার। যাকে ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট ভাবা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন