এআইটিএ বৃহস্পতিবার একটা ঠিক আর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিল। আমি অন্তত তাই মনে করছি।
আগে ঠিক সিদ্ধান্তটার কথা বলি। মহেশ ভূপতিকে ভারতের ডেভিস কাপ দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন করার সিদ্ধান্তটা একেবারে সঠিক। গত কয়েক দিন কাগজে পড়ছিলাম, রমেশ কৃষ্ণন এই হটসিটের দৌড়ে সবার আগে। এমনকী হয়তো আনন্দ অমৃতরাজকেও আরও অল্প কিছু সময়ের জন্য রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু মহেশের নামটা সে ভাবে শোনা যায়নি। সন্ধের দিকে নিউজ চ্যানেলে আনন্দকেও ইন্টারভিউয়ে বলতে শুনলাম, ও-ও নাকি আগের দিন পর্যন্ত জানতই না, মহেশ ওর চেয়ারে বসতে আগ্রহী!
যাক গে সে সব। আমার মতে রমেশ ক্যাপ্টেন হলেও খারাপ হতো না। বিরাট মাপের প্লেয়ার। বিশাল ডেভিস কাপ অভিজ্ঞতা। কিন্তু ওর চেয়ে মহেশ এগিয়ে থাকবে আধুনিক টেনিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কারণে। টেনিস ট্যুর জুড়ে ঘুরে বেড়ায় প্রায় বছরভর। ওর আইপিটিএলের নানা কাজে। প্রায় সমস্ত টপ ক্লাস প্লেয়ারের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ। তার উপর বহু বছর যাবত দেশের নানা জায়গায় নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি চালিয়ে আসছে। এ বছরও এটিপি ট্যুরে গোটা কয়েক টুর্নামেন্ট খেলেছে। তার মধ্যে যত দূর মনে পড়ছে একটা মাস্টার্স ডাবলসও আছে। তার মানে এখনও দারুণ ফিট ও। ক্যাপ্টেন হলেও ডেভিস কাপ টিমে প্লেয়ারদের তাই নিজে কোচিং দিতে পারবে। হাতে-কলমে দেখিয়ে দেবে। কোচ জিশানের পাশাপাশি। স্লথ হয়ে পড়া অনেক নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের পক্ষে যেটা সম্ভব হয় না।
সমস্ত টপ ক্লাস প্লেয়ারের সঙ্গে মহেশের ওঠাপড়া বলে নিজের টিমের ছেলেদের সেই সব বিশ্বমানের প্লেয়ারদের টেকনিক, স্ট্র্যাটেজির ‘ইনপুটস’ দিতে পারবে। যা হয়তো রমেশ, এমনকী আনন্দের পক্ষেও সম্ভব নয়। যতই বড় প্লেয়ার হোক না কেন ওরা! মহেশের দলের লকাররুম আমার মতে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক টেনিসমনস্ক ভারতীয় ডেভিস কাপ শিবির হবে।
কিন্তু সেটা কি নিউজিল্যান্ড টাই থেকেই এআইটিএ শুরু করে দিতে পারত না? মহেশকে যদি ওরা ২০১৭-১৮ মরসুমের জন্য ক্যাপ্টেন করার কথা ভেবে থাকে, তা হলে সেটা মরসুমের গোড়া থেকে নয় কেন? কেন ফেব্রুয়ারির বদলে এপ্রিল, মরসুমের প্রায় মাঝখান থেকে মহেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবে? এটা তো ওকে কাজে নামার আগেই এক রকম সমস্যায় ফেলে দেওয়া হল!
তার চেয়েও আমাকে অবাক করছে, আনন্দ অমৃতরাজকে এই ফেয়ারওয়েল-টোয়েল দেওয়ার ব্যাপারটা। আনন্দ কি তিন বছর ‘অনারারি’ ক্যাপ্টেন ছিল? টাকা নেয়নি? তা হলে আবার ফেয়ারওয়েল ম্যাচ কী? তার চেয়েও বড় কথা, পেশাদারি খেলার জগতে বিদায়ী ম্যাচ-ট্যাচ বলে কিছু হয় নাকি? তোমাকে একটা কাজের দায়িত্বে বসানো হয়েছে। তার জন্য ন্যায্য টাকা পাচ্ছ। ব্যস, যত দিন চাকরি, তত দিন মাইনে। ফুরিয়ে গেল। ফুটবল, বাস্কেটবল, রাগবি, এমনকী ক্রিকেটেও তাই। কোচ বা ম্যানেজার আর কোথায় ফেয়ারওয়েল ম্যাচ পায়! টেনিসে তো বটেই।
আমার আরও একটা প্রশ্ন দেশের টেনিস কর্তাদের কাছে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে আনন্দ ক্যাপ্টেন থাকল বলেই কি রোহন বোপান্নাকে বাদ দিয়ে লিয়েন্ডারকে রেখে দেওয়া হল টিমে? মহেশ ক্যাপ্টেন হয়ে এলে কি উল্টোটা হবে? ভারতীয় টেনিসমহলে কারও আর অজানা নেই যে, লি-হেশ সম্পর্ক বহু দিন যাবত খারাপ। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, আগের চেয়ে সম্পর্কটা নাকি অনেক ভাল হয়েছে। ভাল হলেই ভাল। কিন্তু সেটা গুজব হলে ভারতীয় দলের জন্য মোটেই সুখবর নয়। রাতারাতি লকাররুমে দু’জনে আবার ওদের কেরিয়ারের গোড়ার দিকের মতো গভীর বন্ধু হয়ে যাবে এতটা ভাবা হয়তো একটু মুস্কিল!
তা হলে কি মহেশ ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব নেওয়ার পর লিয়েন্ডার ডেভিস কাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে? জানি না। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডাবলস জিতলে লিয়েন্ডার ডেভিস কাপে সবচেয়ে বেশি ডাবলস ম্যাচ জেতার বিশ্বরেকর্ড করবে। তার পর টেনিস ট্যুর থেকে না হোক, দেশের জার্সি তুলে রাখতেই পারে ও।
লিয়েন্ডারকেও সেটা বোধহয় অনেকটা টেনশনমুক্ত করবে। বয়সে ও মহেশের থেকেও এক বছরের বড়। টিমে এখনও খেলা মানে অনেক জবাবদিহির ব্যাপার থাকে। পেশাদার ট্যুরে খেলায় যে ঝক্কিটা নেই। সেখানে তো প্লেয়ার নিজেই নিজের মর্জির মালিক !