ইডেনে বোলারদের নিয়ে ওয়াকার-ওয়ার্কশপ। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
পাকিস্তান আজ যে শুধু জিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করতে চাইছে তাই নয়। অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদির কলকাতা পৌঁছনোর পর প্রথম সরকারি মন্তব্যের যাবতীয় ঝড়ঝাপ্টা পিছনে ফেলে রেখেও কাপ-অভিযান শুরু করতে বদ্ধপরিকর তারা।
আফ্রিদির মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে পাকিস্তানে। বরং সে দিন পাক্কা কূটনৈতিকের মতো বলেছিলেন পাক ক্যাপ্টেন। ভারতে যা ভালবাসা পেয়েছেন সেটা পাকিস্তানেও পাননি বলে আফ্রিদি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, প্রতিবেশী দেশের প্রতি তাঁর আবেগ-অনুরাগ অপরিসীম! পাক আওয়ামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আফ্রিদি। যে জন্য এমনও মনে হচ্ছে, বুধবার ইডেনে পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচে গ্যালারির সমর্থন ফিফটি-ফিফটি থাকবে। এমনিতে এ-পার আর ও-পার বাংলার মানুষ একই ভাষায় কথা বলেন। সংস্কৃতি এক। তাই আজ বাংলাদেশের সমর্থন বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আফ্রিদির ওই মন্তব্যের পরে পাকিস্তানের জন্য সমর্থনও মনে হয় গ্যালারিতে বাড়বে।
পাকিস্তান হেড কোচ ওয়াকার ইউনিসও মনে করেন, আফ্রিদির ওই মন্তব্যের রেশ পিছনে ফেলে টিম বুধবার বিকেলে ইডেনে নামবে। তাঁর আরও বিশ্বাস, আফ্রিদি তাঁর সেই পরিচিত বিধ্বংসী ব্যাটিং ফর্ম ফিরে পাওয়া থেকে স্রেফ একটা ইনিংস দূরে। ‘‘একটা বড় ইনিংসই আফ্রিদিকে ওর পুরনো ফর্মে এনে দেবে। সেটা আশা করি বিশ্বকাপের গোড়ায় ঘটবে,’’ বলেছেন পাকিস্তান কোচ।
গত মাসে এশিয়া কাপে পাকিস্তান কোচ আর অধিনায়ককে যেমন একই পিচে আছেন বলে মনে হচ্ছিল না, বিশ্বকাপে হয়তো তেমনটা হবে না। এশিয়া কাপে তো টস জিতলে আগে ব্যাটিং না বোলিং, কী করা হবে সেটা নিয়েও কোচ-ক্যাপ্টেনের বোঝাপড়ায় অভাব ছিল। ঘটনা হল, পাকিস্তান দল ভারতে রওনা হওয়ার আগে পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান সাপোর্ট স্টাফ সহ গোটা টিমকে নিয়ে বসেছিলেন। আলাদা করে আফ্রিদি আর ওয়াকারের সঙ্গেও কথা বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স ভাল হওয়া চাই-ই। মিনিমাম সেমিফাইনাল।
আফ্রিদি বিশ্বকাপের পরেও চূড়ান্ত অবসর নেবেন কি না এখনই বলা মুশকিল। তবে যেহেতু তাঁর টেস্ট দলে সুযোগ নেই, তাই বিশ্বকাপের পরপরই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওঁর বোধহয় না ভাবলেও চলবে। কিন্তু ওয়াকারের কোচিং কেরিয়ারের সেই সুযোগ থাকছে না। কারণ, সামনের জুলাইয়ে পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ ইংল্যান্ড সফর। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবং বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অন্তত একটা ভদ্রস্থ (মানে সেমিফাইনালে ওঠা) রেজাল্ট না হলে খুব সম্ভবত ইংল্যান্ড সফরের আগেই ওয়াকার কোচের চাকরি খোয়াবেন। এই বিশ্বকাপই ওঁর শেষ সুযোগ।
এহেন আবহে ওয়াকার বলেছেন, এশিয়া কাপে পাক ব্যাটিং বিপর্যয়ের একটা বড় কারণ ঢাকার উইকেট, কন্ডিশন ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল ছিল না। ভারতে নাকি সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইডেন উইকেট দেখেও ওয়াকারের মনে হয়েছে, ব্যাটিংয়ের উপযোগী।
আফ্রিদি আবার মঙ্গলবার সারা দিন জ্বরে ভুগলেও রাতের দিকের খবর, তিনি সেরে উঠেছেন। বুধবার খেলবেনও। ড্রেসিংরুমের যা খবর, কলকাতায় প্রথম দিনের প্র্যাকটিসে পায়ে আঘাত পাওয়া মহম্মদ সামিকে বুধবার বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। তবে তিন পেসার-এক স্পিনার কম্বিনেশন থাকছে। মহম্মদ আমের, ওয়াহাব রিয়াজ, মহম্মদ ইরফানের সঙ্গে স্পিনার-অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। ওয়াসিমের ব্যাটের হাত খুব ভাল। সোমবারের ওয়ার্ম আপ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ছন্দে আছেন।
যদিও ইডেনে নামতে সবার চেয়ে উত্তেজিত বোধহয় আমের। ভারতেই আজ তাঁর প্রথম ম্যাচ। তাও আবার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে। দুই মিলে আমের একেবারে টগবগ করছেন। এমনিতেই তিনি পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পেস বোলিং করে এসেছেন। আমেরের গনগনে বোলিং ফর্ম আর টগবগে মেজাজ পাকিস্তানের কাছে আজ সেরা অস্ত্র।
বাংলাদেশের এক নম্বর পেসার মুস্তাফিজুর রহমান বুধবার খেলবেন কি না, সেটা ম্যাচের দিন সকালে ঠিক হবে। এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে চোট পাওয়ার পর এখনও কোনও ম্যাচ খেলেননি মুস্তাফিজুর। মঙ্গলবার নেটে বেশ ভাল বল করলেও তাঁর ফিটনেস নিয়ে বোধহয় নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশ গত দেড় বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। তবে হালফিলের মধ্যে ওরা আজই প্রথম নিজেদের দেশের বাইরে কোনও বড় ম্যাচ খেলতে নামছে। পাকিস্তান গত বছর বাংলাদেশ সফরে ওয়ান ডে সিরিজে যে ০-৩ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল, তাতে প্রধান ঘাতক ছিলেন মুস্তাফিজুরই। আজ তাঁর খেলা-না খেলা অবশ্যই বিরাট ইমপ্যাক্ট তৈরি করবে।
আজ জিতলে পাকিস্তান কিন্তু শনিবার ভারতের বিরুদ্ধে একেবারে আগুনে মেজাজে নামবে! এমনিতেই গত প্রায় তিরিশ বছর ইডেন ওয়ান ডে-তে পাকিস্তানের লাকি গ্রাউন্ড। সেই সাতাশিতে কপিল দেবকে এক ওভারে সেলিম মালিকের পাঁচটা বাউন্ডারি মেরে যে শাসনের শুরু, সেটা ঊননব্বইয়ে নেহরু কাপ জেতা থেকে ২০০৪-এ সলমন বাটের ব্যাটের দাপট হয়ে, ২০১৩-এ নাসির জামশেদের ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরিতে অব্যাহত। তাই ইডেনে অন্তত সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে ভারতকে ছেড়ে কথা বলবে না পাকিস্তান। গ্যারান্টি!