‘পর্তুগাল মানেই তো শক্তি, পাসিং ফুটবল এবং ইউসেবিয়ো’

খেলোয়াড় জীবনে পর্তুগালকে চিনেছিলাম ইউসেবিয়োর জন্যই। পেলের খেলোয়াড় জীবন তখন শেষের দিকে। আমারও।

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০৪:১৮
Share:

হতাশ: ’৬৬-র সেমিফাইনাল হেরে ইউসেবিয়োর কান্না। ফাইল চিত্র

তখন টিভি দেখার সুযোগ ছিল না। সে ভাবে বিশ্ব ফুটবলের খবরও প্রকাশিত হত না কাগজে। ‘ওয়ার্ল্ড সকার’ বই ছিল আমাদের কাছে ফুটবল তারকাদের চেনার এক মাত্র রাস্তা। সেখান থেকেই পর্তুগাল ফুটবলের কিংবদন্তির মুখ চেনা। ইউসেবিয়ো দ্য সিলভা পেরিরার খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানা সেখান থেকেই। ইউসেবিয়ো প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করছেন পড়তাম। দেশের জার্সিতে ৬৪ ম্যাচে ৪১ গোল করা সহজ নয়।

Advertisement

খেলোয়াড় জীবনে পর্তুগালকে চিনেছিলাম ইউসেবিয়োর জন্যই। পেলের খেলোয়াড় জীবন তখন শেষের দিকে। আমারও। সেই সময়ই ১৯৬৬-র বিশ্বকাপে ইউসোবিয়ো তাঁর দেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সে বার ববি মুর, ববি চার্লটনদের ইংল্যান্ড ওরকম অসাধারণ ফুটবল না খেললে পর্তুগাল ফাইনালে যেতই। নয় গোল করে সোনার বুট পাওয়া সত্ত্বেও সেমিফাইনালে নিজের খেলা খেলতে পারেনি ইউসেবিয়ো। হেরে তিন নম্বর হয়েছিল পর্তুগাল। লুইস ফিগো, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা ক্লাব ফুটবলে যত ঝলমলে হয়ে উঠুন, তাঁরা কেউই নিজের দেশকে ইউসেবিয়োর মত জায়গায় নিয়ে যেতে পারেননি। এর অন্যতম কারণ ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, জার্মানির মতো এক ঝাঁক সফল ফুটবলার কখনও একসঙ্গে উঠে আসেনি পর্তুগালে। সে জন্য প্রতিবারই হইহই ফেলে ওঁরা বিশ্বকাপ খেলতে আসেন, তারপর বিদায়ও নেন। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন না। চ্যাম্পিয়ন হওয়া যে একটা ইউসেবিয়ো, ফিগো, রোনাল্ডো দিয়ে হয় না। ইউসেবিয়োর উত্থান পেলের বিদায় নেওয়ার সময়টা এক হয়ে গিয়েছিল। আমি তুলনায় যেতে চাই না তবে এটা লিখছি যে, বিশ্বের সর্বকালের সেরা দশ বাছতে দিলে পেলে, দিয়েগো মারাদোনাদের সঙ্গে আমি ইউসেবিয়োকে রাখব। ওঁর সমসাময়িক মারিয়ো কলুনা বলে মাঝমাঠের একজন ফুটবলার খেলত, তাঁর কথাও তখন খুব শুনতাম। বড় চেহারার ফুটবলার ছিলেন ইউসেবিয়ো। স্কিল তেমন ছিল না, কিন্তু শটে জোর ছিল প্রচণ্ড। আঠারো গজ বক্সের বাইরে থেকে অসংখ্য গোল করেছেন।

পর্তুগালের খেলার ধরনটা বারাবরই স্পেন বা ফ্রান্সের মতো। পাসিং ফুটবলের পাশে ব্যবহার করে শক্তি। ইউসেবিয়োর খেলার তার প্রভাব ছিল। ওর খেলা দেখে সাংবাদিকরা কেউ ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, কেউ ‘ব্ল্যাক পার্ল’ বা ‘দ্য কিং’ লিখত। নিজের ফুটবলার জীবনের হিরো হিসাবে ইউসেবিয়োকে ভাবিনি কখনও। কিন্তু নিজে স্ট্রাইকার ছিলাম বলে ওঁর গোলের পর গোল করে যাওয়ার খবর পড়ে রোমাঞ্চিত হতাম। এ বারও পর্তুগাল দারুণ কিছু করবে বলে মনে হয় না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা যদি বিশ্বকাপে ইউসেবিয়োর কৃতিত্বকে ছুঁতে পারেন, সেটাই বড় ব্যাপার হবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন