Sport News

এখানেই থামবেন না রাফা

রবিবার রলঁ গারোসে দোমিনিক থিমকে হারিয়ে যে ১১ নম্বর ফরাসি ওপেন খেতাব জিতল সেটা নাদাল নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।  নাদাল যখন প্রথম ফরাসি ওপেন জেতে, থিম ১১ বছর বয়সি কিশোর।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০৩:৩২
Share:

ছবি: রয়টার্স।

গ্রেট চ্যাম্পিয়নদের দাপট কম দেখেনি টেনিস বিশ্ব।

Advertisement

উইম্বলডনে রজার ফেডেরার-পিট সাম্প্রাস যুগ (ফেডেরার ৮ ও সাম্প্রাস ৭ বারের খেতাবজয়ী), অস্ট্রেলীয় ওপেনে রয় এমার্সন ও নোভাক জোকোভিচ যুগ (দু’জনেই ছ’বার করে জিতেছেন) বা রলঁ গারোসে বিয়র্ন বর্গ যুগ (ছ’বার জয়ী)। কিন্তু ২০০৫ সালে মায়োরকার এক তরুণ যখন থেকে লাল মাটির কোর্টে প্রবেশ করেছেন, তার পরে এ সব যুগকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন। আধিপত্য আসলে কী, সেটা ওই তরুণ বুঝিয়ে দিয়েছেন টেনিস দুনিয়াকে। সেই যুগ ফরাসি ওপেনে এখনও চলছে— রাফা যুগ।

রবিবার রলঁ গারোসে দোমিনিক থিমকে হারিয়ে যে ১১ নম্বর ফরাসি ওপেন খেতাব জিতল সেটা নাদাল নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। নাদাল যখন প্রথম ফরাসি ওপেন জেতে, থিম ১১ বছর বয়সি কিশোর। নাদালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসব দেখেছিল টিভিতে। মাঝখানে কেটে গিয়েছে ১৩টা বছর। নাদাল আরও ১৬টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ফেলেছেন। কিন্তু ফরাসি ওপেনে সেই দাপট এক চুলও কমেনি।

Advertisement

রবিবার নাদালের ৬-৪, ৬-৩, ৬-২-এ ১১ নম্বর খেতাব জয় দেখে তাই অবাক হওয়ার কিছু আছে কি? আমার মনে হয়, না। যে লোকটা রলঁ গারোসে ৮৮টা ম্যাচের মধ্যে ৮৬টাই জিতেছে, এগারোবার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠে কখনও হারেনি, তাঁকে সর্বকালের সেরা ক্লে-কোর্ট খেলোয়াড় বলে কুর্নিশ করতে তাই বিন্দুমাত্র
দ্বিধা নেই। কেন রাফায়েল নাদাল ক্লে-কোর্টে অপ্রতিরোধ্য? কেন রলঁ গারোসে সেমিফাইনালে ওঠার পরে কখনও ট্রফি হাতছাড়া করেননি তিনি? আমার মনে হয়, নাদালের খেলার ধরন ক্লে-কোর্টের জন্য একেবারে উপযুক্ত। বিষাক্ত টপস্পিন, ইঞ্চি মাপা ফোরহ্যান্ড, নেট-প্লে, সঙ্গে দুর্ধর্ষ শারীরিক সক্ষমতা নাদালকে ফরাসি ওপেনে বরাবরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রেখেছে। টেনিস বিশ্বে তিনি প্রথম খেলোয়া়ড়, যিনি এটিপি-র তিনটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১১ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজির গড়ে ফেললেন। বাকি দু’টি অবশ্য ক্লে-কোর্টেরই প্রতিযোগিতা। বার্সোলোনা এবং মন্টি কার্লো।

নাদালের আরও বড় কৃতিত্ব হল, এই বয়সেও খেতাব জেতার খিদেটা ধরে রাখতে পারা। এক জন খেলোয়াড় যখন সব বড় ট্রফি জিতে যায়, সব বড় সম্মান অর্জন করে ফেলে তার পরে সে জেতার খিদেটাই হারিয়ে ফেলতে থাকে। তখন মনে হয়, তার তো কিছুই বাকি নেই জেতার। এখানেই কিন্তু রজার ফেডেরার, নাদালরা একেবারে আলাদা। এঁদের সবচেয়ে বড় গুণ, বছরের পর বছর জেতার খিদেটা ধরে রাখতে পারেন। নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত শক্তি। যা সবার থাকে না।

তা ছাড়া, গত কয়েক মরসুমেই নাদালকে চোটের সমস্যা ভোগাচ্ছে। রবিবারও তো তৃতীয় সেটে ও সমস্যায় পড়েছিল। টিভিতে দেখে মনে হল, পেশির সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এ সব সমস্যা কিন্তু নাদালের একাগ্রতায় চিড় ধরাতে পারেনি। তাই বয়সে আট বছরের ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেও রবিবার তাঁকে এক বারও হাঁফাতে দেখলাম না। উল্টে থিমকেই মনে হচ্ছিল ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

গত মাসে নাদালকে মাদ্রিদ মাস্টার্সে হারিয়েছিলেন থিম। গত বছরেও রোম মাস্টার্সে নাদালকে হারিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার পারলেন না কেন? কারণ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাদ্রিদের উচ্চতা প্যারিসের চেয়ে বেশি। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে কোর্টের গতিও বাড়ে। থিমের খেলার ধরনই হল, উইনার মেরে প্রতিপক্ষকে দ্রুত চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা। রোলঁ গারোসে কোর্টের গতি কম বলে সেই তাঁর সেই কৌশল প্যারিসে কাজে আসেনি। উল্টে উইনার মারতে গিয়ে ‘আনফোর্সড এরর’-এর ফাঁদে বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন। নাদাল আসলে একটা দেওয়ালের মতো। ওর বিরুদ্ধে যে শটই মারো না কেন, যত শক্তিশালীই হোক সেটা, তত জোরেই প্রতিপক্ষের কাছে ফিরে আসে।

১৭টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে গেল নাদালের। কোথায় গিয়ে থামবেন তিনি? আমার মনে হয়, যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন, আরও দুটো ফরাসি ওপেন খেতাব জিততে পারেন নাদাল। দু’বছর পরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যাটা ১৯ হতেই পারে। যত দিন রাফা যুগ চলছে, ফেডেরারের ২০টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ডও অক্ষত থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন