যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট উৎসবেও লোঢা ছায়া ছাড়ছে না বোর্ডকে

মার্কিন মুলুকেও যে শেষ পর্যন্ত কোনও এক রাজেন্দ্র মাল লোঢা এসে উপস্থিত হবেন, কে জানত! এক দিক থেকে ভাবলে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট-উৎসবে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপস্থিতি থাকার কথা নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

ব্রোওয়ার্ড কাউন্টির মেয়রের দেওয়া নৈশভোজে অশ্বিন, কুম্বলেরা। ছবি :টুইটার

মার্কিন মুলুকেও যে শেষ পর্যন্ত কোনও এক রাজেন্দ্র মাল লোঢা এসে উপস্থিত হবেন, কে জানত!

Advertisement

এক দিক থেকে ভাবলে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট-উৎসবে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপস্থিতি থাকার কথা নয়। একে তো বেসবলের স্বর্গভূমিতে ক্রিকেটের প্রথম এত বড় পদার্পণ। যার শুরুটাই হয়ে গেল শনিবার রুদ্ধশ্বাস এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। তার উপর মাদকতা। ক্রিকেটারদের ঘিরে, ক্রিকেটারদের নিয়ে অনুষ্ঠানকে ঘিরে। অন্য কোনও কিছুর তো ঢোকা উচিত নয় এমন আবহে।

শুক্রবার সন্ধেয় যেমন। ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি মেয়রের দেওয়া নৈশভোজ অনুষ্ঠান দ্রুত জমজমাট চেহারা নিয়ে ফেলল। ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ— দু’টো টিমই নিজ নিজ বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আমন্ত্রিত ছিল ওই ডিনারে। যুক্তরাষ্ট্রে ফোন করে শোনা গেল, অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই অধিনায়কের হাতে স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী স্মারক তুলে দেওয়া হয়। মেয়র তারপর ছোটখাটো বক্তৃতায় বলে দেন যে, আমেরিকাকে সবাই বেসবলের দেশ বলে জানে। কিন্তু ক্রিকেটও যে জায়গা করে নেবে, তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত। বলা হয়, এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারত দু’টো টি-টোয়েন্টি খেলল। কিন্তু পরের বছর চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজনের ইচ্ছে রাখে আমেরিকা। এমএসডি— মাইক হাতে তিনিও বা কম গেলেন কোথায়? শোনা গেল, ধোনি প্রথমেই বলে দেন, ক্রিকেট আর বেসবলের নিয়মকানুন আলাদা হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটাই এক। বেসবলেও বলকে হিট করতে হয়, ক্রিকেটেও তাই! ধোনি নাকি বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খেলতে নামবেন ভেবে তিনি উত্তেজিত। এর আগে মার্কিন মুলুকে তিনি যাননি, তা নয়। গিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যেক বারই বেড়াতে। সেই একই ভূখণ্ডে এ বার তিনি বাইশ গজের যুদ্ধে নামবেন, ভাবলেই নাকি শিরশিরানি হচ্ছে।

Advertisement

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, গত সন্ধেয় এমএসডি শুধু বক্তৃতায় মোহিত করে ছাড়েননি। তাঁকে ঘিরে ভক্তকুলের আকুতিটাও দেখার মতো ছিল। এনসিসি প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে ফোনে বলছিলেন, ‘‘এক এক সময় তো মনে হচ্ছে, সমর্থনের যুদ্ধে এখানে বিরাট দুই। ধোনি এক!’’ তাঁকে এক ঝলক দেখতে পাওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিম হোটেলে পড়ে থাকা, দেখা পেলে অকাতর সেলফির আবদার— প্রবাসী ভক্তকুলের ‘অত্যাচার’ ভাল রকম চলছে ভারত অধিনায়কের উপর। এমন রঙিন আবহে রাজেন্দ্র মাল লোঢা কখনও ঢুকে পড়তে পারেন?

পারেন। পারছেনও।

শোনা গেল, বোর্ড প্রচুর খরচ করে সমস্ত অনুমোদিত সংস্থা থেকে একজন করে কর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে ঠিকই, কিন্তু কর্তারা খুব স্বস্তিতে নেই। গত সন্ধের নৈশভোজে তো বটেই, এ দিনও ম্যাচ চলাকালীন নাকি লোঢা কমিশনের নির্দেশিকা ঘিরে কর্তাদের ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো, টেনশনে আক্রান্ত হয়ে পড়া, সবই ঘটেছে। দাক্ষিণাত্যের এক কর্তা (যিনি আগে ক্রিকেটার ছিলেন) এ দিন নাকি ম্যাচ দেখতে দেখতে ঘনিষ্ঠদের কাছে ক্ষুব্ধ অনুযোগ করেছেন, ক্রিকেট সংস্থার পদাধিকারী আবার একই সঙ্গে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিও চালান বলে তাঁকে এখন কাঠগড়ায় উঠতে হচ্ছে। কেউ বুঝতে চাইছে না যে, তিনি ক্রিকেটার। তাঁর পক্ষে কবাডি সংস্থা চালানো সম্ভব নয়। কেউ কেউ আবার বলছেন যে, তিন বছর ক্রিকেট প্রশাসনে কাটানোর পর কী করে কাউকে ‘কুলিং অফে’ পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে? ন’বছরের পর প্রশাসনে থাকা যাবে না, এটাও যুক্তিহীন। লোঢা কমিশন যে আগামী ২৮ অগস্ট বৈঠকে বসছে, তার পরিণাম নিয়েও কেউ কেউ টেনশনে। কমিশন পাল্টা কী দেবে, তা নিয়ে চিন্তা।

ঘুরেফিরে কী দাঁড়াল?

নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে বোর্ড বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠালো ঠিকই। কিন্তু পিছু-পিছু লোঢা-ছায়াও এল, টেনশনও এল। এত কিছু করেও সেটা হঠানো গেল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন