Rameshbabu Praggnanandhaa

Rameshbabu Praggnanandhaa: স্যর, বিশ্বচ্যাম্পিয়নকেই আমি হারিয়ে দিয়েছি...

প্রজ্ঞানন্দ আবার এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ। সোমবার বিকেলে যখন তাঁর কোচ আর বি রমেশের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হল তখন রজনীকান্তের ভক্ত তৈরি হচ্ছিল পরের ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৬
Share:

অবিশ্বাস্য: ৩৯ চালেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেনকে হারাল ভারতের খুদে প্রতিভা প্রজ্ঞানন্দ। ফাইল চিত্র।

শিশুসুলভ মুখ। বুদ্ধিদীপ্ত দু’চোখে শান্ত চাহনি। বয়স মোটে ১৬। কিন্তু মগজাস্ত্রে ঠাসা ভারতের এই কিশোর দাবাড়ু আর প্রজ্ঞানন্দই সোমবার ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। অনলাইন র‌্যাপিড দাবা প্রতিযোগিতা এয়ারথিংস মাস্টার্সের অষ্টম রাউন্ডে বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসেনকে অষ্টম রাউন্ডে হারিয়ে চেন্নাইয়ের এই প্রজ্ঞানন্দ এমন চমক দিয়েছে, যা দেখে মুগ্ধ সচিন তেন্ডুলকর, দাবা কিংবদন্তি বিশ্বনাথন আনন্দেরাও। যেন বিন্দুতেই সিন্ধুর দর্শন পেয়েছেন।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ আবার এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ। সোমবার বিকেলে যখন তাঁর কোচ আর বি রমেশের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হল তখন রজনীকান্তের ভক্ত তৈরি হচ্ছিল পরের ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য। বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারানো ভারতীয় বিস্ময় প্রতিভা বলে দিল, ‍‘‍‘দাবার জগতে আমি দু’জনকে আদর্শ মনে করি। ম্যাগনাস কার্লসেন ও বিশ্বনাথন আনন্দ। তাই কার্লসেনকে হারানোর মাঝে ৩৯ চাল আমি উপভোগ করেছি। প্রথম দিকে একটু চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। মাঝখানে প্রতি-আক্রমণ করতে শুরু করি। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে খেলে গিয়েছি।’’

অবসরে টেবল টেনিস ও ক্রিকেটের ভক্ত প্রজ্ঞা যোগ করে, ‍‘‍‘কাজটা সহজ ছিল না। প্রথম দিন আমার ভাল যায়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে জয়। তা-ও আবার কার্লসেনের বিরুদ্ধে! ভাল তো লাগবেই। খেলার পরেই ঘুমোতে চলে গিয়েছিলাম। বেলা সাড়ে বারোটায় ঘুম থেকে উঠেছি। অনেক ম্যাচ বাকি। তার আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ল। আগামী দিনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’’

Advertisement

পশ্চিম চেন্নাইয়ের পাডি এলাকায় বড় হয়ে ওঠা প্রজ্ঞানন্দের। দিদি বৈশালীও ভারতীয় দলের সদস্য। তিনিও দাবা খেলেন। আন্তর্জাতিক মাস্টার। দু’জনকেই হাতে করে তৈরি করেছেন কোচ আর বি রমেশ। তাঁর কাছেই ছ’বছর বয়সে প্রথম দাবা শিখতে এসেছিল ছোট্ট প্রজ্ঞা। আর দু’বছরের মধ্যেই ২০১৩ সালে বিশ্ব যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-৮ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ২০১৮ সালে ১২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার। রমেশ বলছিলেন, ‍‘‍‘ছেলেটা খুব পরিশ্রমী। আর বিস্ময়কর প্রতিভা। সাধারণত এ রকম দেখতে পাওয়া যায় না। প্রতিভাবানরা খাটতে চায় না। প্রাগের ক্ষেত্রে কিন্তু তা বলা যাবে না একদমই।’’ যোগ করেন, ‘‘যখন অন্য বাচ্চারা ওপেনিং নিয়ে সময় ব্যয় করে, তখন প্রাগ মিডল বা এন্ড গেম নিয়ে আমার কাছে শিখত। আর মাথাটা কম্পিউটারের মত।’’

কার্লসেনের ম্যাচের সময় কী করছিলেন? রমেশ বলেন, ‍‘‍‘কার্লসেন তিনটে ম্যাচ জিতে প্রাগের সামনে পড়েছিল। আমি দু’টো পর্যন্ত জেগেছিলাম। তার পরে ঘুমিয়ে পড়ি। পাঁচটা নাগাদ জেগে উঠে দেখি ও কার্লসেনকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছে। গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল। কিন্তু তখন কথা হয়নি। প্রাগ ঘুমোচ্ছিল। সাড়ে বারোটার পরে ও ফোন করে বলল, স্যর বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিয়েছি। কথাটা কানে বাজছে।’’

বাড়িতে মা নাগলক্ষ্মী ও বোন বৈশালী পুরো ম্যাচ দেখেছেন। রাত জেগে ছেলের খেলা দেখেছেন বাবা রমেশবাবুও। অনলাইন এই ম্যাচ বাড়িতে বসেই খেলছিল প্রজ্ঞানন্দ। বাবা বলছিলেন, ‍‘‍‘দাবার বাইরে কোনও কিছু ভাবতে পারে না আমার ছেলে। কার্লসেনকে হারিয়ে এসে দিদির সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করেই বলল, এ বার ঘুমোতে যাই। অন্য ম্যাচ জিততে হবে তো।’’ গর্বিত বাবা যোগ করেন, ‘‘খুব চকোলেট খেতে ভালবাসে। সকালে উঠে তাই এক বাক্স চকোলেট কিনে দিয়েছি বিশ্বের এক নম্বরকে হারানোর উপহার হিসেবে। ওর লক্ষ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই লক্ষ্যেই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন