ভক্তদের ভিড়ে সনি। ছবি: উৎপল সরকার।
সনি নর্ডির বিশ্বাস তিনি যে ক্লাবে, ট্রফিও সেখানেই।
‘‘কাল আমার শটটা পোস্টে লেগে ফিরে এল। বলবন্তের নিশ্চিত গোলটাও ওরা বাঁচিয়ে দিল। কিছুতেই আর গোল হচ্ছে না। তখন মনে হচ্ছিল, তা হলে কি আমার রেকর্ড ভেঙে যাবে?’’ সোমবার সকালে বাগানের টিম হোটেলের লবিতে যখন তাঁর সতীর্থরা আই লিগের ট্রফি নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত, তখন তিনি সনি নর্ডি মগ্ন আগের সন্ধের অঘোষিত ফাইনালের কথায়। ‘‘বৃষ্টিতে ঘাসের নীচে এমন জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যে বুটটাই ডুবে যাচ্ছিল। এ ভাবে খেলা যায়! কিন্তু যে কোনও মূল্যে ট্রফিটা পেতেই হবে সেটা তো আমরা সবাই হাফটাইমেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।’’
কাপ নিয়ে নিজের ছবি রবিবার রাতেই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিয়েছেন মায়ের কাছে। সঙ্গে টেক্সট—‘আবার একটা ট্রফি পেলাম। ভিসার জন্য তুমি আসতে পারোনি তো কী! আমি কিন্তু সফল হয়েছি। পরের বার আই লিগ ফাইনাল খেলব। তখন তোমাকে নিয়ে যাবই মাঠে।’
মাত্র দশ ঘণ্টা আগে ভারতের সেরা ফুটবল ট্রফি জয় করেছেন। কিন্তু বাগানের নতুন হার্টথ্রব এখনও যেন ঘোরের মধ্যে। হিসাব দিচ্ছিলেন নিজের ট্রফি জয়ের। বোকা জুনিয়র্সে খেলার সময় তিনটে ট্রফি জিতেছেন। মেক্সিকোতে খেলার সময় একটা। বাংলাদেশে দু’টো ক্লাবে খেলে দু’বার সেই দেশের সেরা হয়েছেন। ভারতে প্রথম বার খেলেই আই লিগ জয়। হোসে ব্যারেটো, ওডাফাও যা পাননি বাগানে। ‘‘কাল বেলোর গোলটা হতেই আমার মায়ের মুখটা মনে পড়ল। তা হলে এ বারও আমি পারলাম। ওই কর্নারটা করেছিলাম সটান বেলোর মাথা টার্গেট করেই। ও ঠিক সময় উঠে এসেছিল। বেলো গোলটা করতে না পারলে আমার কোনও ক্লাবে খেলে প্রথমবারই ট্রফি জেতার রেকর্ডটা ভেঙে যেত,’’ অনর্গল সনি।
কলকাতা ফেরত আসার জন্য শিল্টন, প্রীতম, কাতসুমিরা হোটেলের লবিতে নেমে এসেছিলেন সকাল আটটাতেই। এসেই জড়িয়ে ধরলেন বেলো রজ্জাককে। আগের দিন বেলো সোনার গোলটা করার সময় যেমন এঁরাই তাঁকে করেছিলেন। ‘‘জানেন ওর লিডারশিপে আমাদের ডিফেন্স লিগে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে। এই বয়সে কী ফুটবলটাই খেলল গোটা মরসুম। সবাই আমার কথা বলছে, কাতসুমি-বোয়ার কথা বলছে। কিন্তু আমাদের ডিফেন্সও কী খেলল বলুন!’’ বলে দিলেন সনি।
তার পরে আবার ফিরে যান কালকের চ্যাম্পিয়নশিপ গোলের সেট পিস প্রসঙ্গে। ‘‘জানেন, আমি যখন বোকা জুনিয়র্স বি-তে খেলতাম তখন ‘এ’ টিমে খেলত রিকেলমে। ওর সঙ্গে অনেক প্র্যাকটিস করেছি। ও দারুণ সেট পিস মারত। আমার এ রকম কর্নার মারতে শেখা ওর থেকেই।’’
ওডাফার বদলি হিসেবে আপনাকে বাগান এনেছিল। ‘‘ওডাফার বিরুদ্ধে খেলেছি। তারও আগে নাম শুনেছি। ভাল ফুটবলার। বাগানকে ট্রফি পারেনি। হয়তো আমাদের মতো একটা টিম ওর সময়ে হয়ে উঠতে পারেনি বাগান। আর আমার মতো ভাগ্যও ক’জনের আছে? শেষ তিন বছরে বাংলাদেশ আর ভারতের তিনটে ক্লাবে খেললাম। তিন বারই আমার টিম চ্যাম্পিয়ন। পরের বার ফের আই লিগ পেতে হবে। আর সেটাই বাগানে আমার নতুন চ্যালেঞ্জ।’’ বোঝাই যায় পরের মরসুমের কথা এখনই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন সনি।
সেরারা এ রকমই হয়। একটা সফল ভাবে শেষ করেই পরের লক্ষ্যটা ঠিক করে ফেলে।