দুশ্চিন্তা: হারের পরে প্রশ্নের মুখে জিদানের স্ট্র্যাটেজি। ছবি: এএফপি।
বছরখানেক আগেও ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম। ১৯ মাসে সাতটা ট্রফি। কয়েক দিন আগে ফিফার বর্ষসেরা ম্যানেজারের পুরস্কার। জিনেদিন জিদান আর রিয়াল মাদ্রিদের জুটিকে তখন একটা বাক্যতেই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল— ‘মেড ফর ইচ আদার’।
কিন্তু লা লিগায় পরের পর ধাক্কা। জিততে না পারা। বার্সেলোনার কাছে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়া। গোল করতে না পারার ব্যর্থতা। চার দিনে দু’টো ম্যাচে হার। সব মিলিয়ে জিদান এবং রিয়ালের মধুচন্দ্রিমা এখন যেন অতীত হয়ে গিয়েছে। স্প্যানিশ এবং ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে, জিদানের ভাগ্য এখন সঙ্কটে।
ওয়েম্বলিতে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে দেখা যায়, রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ড্রেসিংরুমে গিয়ে হাজির হয়েছেন। সরকারি ভাবে যার ব্যাখ্যা হল, ফুটবলারদের চাঙ্গা করতেই গিয়েছিলেন ক্লাব মহাকর্তা। কিন্তু যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্লাব সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিহাল, তাঁদের বক্তব্য হল, এ রকম ঘটনা টিমের ম্যানেজারদের কাছে মোটেই শুভ সংবাদ নিয়ে আসে না।
হঠাৎ করে এমন কালো মেঘ কী করে হাজির হল জিদানের আকাশে? রিয়ালের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা যে সব কারণ তুলে আনছেন, তা এ রকম: এক, গোল পাচ্ছেন না স্ট্রাইকাররা।
দুই, গ্যারেথ বেল চোট পাওয়ায় সঙ্কট আরও বেড়েছে। তাঁর বিকল্প পাওয়া যায়নি।
তিন, তিন জন সেন্টার ব্যাক, উইং ব্যাক নিয়ে যে সব টিম খেলছে, তাদের ডিফেন্স ভাঙতে পারছে না জিদানের স্ট্র্যাটেজি। শেষ দু’টো ম্যাচেই হেরেছে রিয়াল। আর তাদের প্রতিপক্ষ জিরোনা এবং টটেনহ্যাম— দু’টো দলই তিনটে সেন্টার ব্যাক এবং দু’টো উইং ব্যাক নিয়ে খেলেছে। জিদান দু’টো দলের বিরুদ্ধেই একই প্রথম একাদশ এবং পরে একই পরিবর্ত ফুটবলার নামান। যা দেখে মনে হয়নি, এই স্ট্র্যাটেজি ভাঙার কোনও রকম পরিকল্পনা করতে পেরেছেন জিদান।
রিয়াল ম্যানেজার নিজে কী বলছেন? টটেনহ্যাম ম্যাচের পরে জিদান বলেছেন, ‘‘কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা গোলের সুযোগ তৈরি করছি ঠিকই, কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের এখন সব খুটিয়ে দেখতে হবে।’’
ব্রিটিশ এবং স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যম আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, কোনও ভাবে যদি জিদান-কে সরানো হয়, তা হলে পেরেজের প্রথম পছন্দ হতে পারে টটেনহ্যামেরই কোচ মরিসিও পোচেত্তিনো। জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ মহলে পোচেত্তিনো-কে ‘মাই ডিয়ার পোচে’ বলে ডাকেন রিয়াল প্রেসিডেন্ট। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কটাও খুব ভাল। ফলে কারও কারও ধারণা, পেরেজের মাথায় পোচেত্তিনোর নামটাও আছে। রিয়াল কি একটা বড় সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন করা হয়েছিল জিদানকে। যা শুনে রিয়াল ম্যানেজারের জবাব, ‘‘আমি বলব না, এটা একটা সঙ্কট। হয়তো সাময়িক খারাপ ফর্ম যাচ্ছে। আমরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স করতে পারছি না।’’ এর পরের প্রশ্নেই আবার কিছুটা মেজাজ হারান জিদান। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি এই হারের ফলে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন? জিদান বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা বারবার আমাকে একই প্রশ্ন করেন কেন? আমি একদমই চিন্তিত নই। আমি চিন্তিত হবও না। আমি শুধু বলব, আমরা এমন একটা টিমের কাছে হেরেছি, যারা আমাদের চেয়ে ভাল খেলেছে।’’