বার্সেলোনা মাঠে নামা মানে সাধারণত কী আশা থাকে ফুটবলপ্রেমীদের? মেসির ঈশ্বরপ্রদত্ত স্কিল। নেইমারের চোখ ধাঁধানো ড্রিবল। সুয়ারেজের দারুণ ফিনিশ।
ন্যু কাম্প হোক বা ওয়েম্বলি। ভিসেন্তে কলদেরন হোক বা সান্তিয়াগো বের্নাবাও। প্রতিটা মাঠেই এক টুকরো শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রেখে গিয়েছে বার্সা। বার্সা মানেই তো অবিসংবাদিত দাপট। ঘরের মাঠ হোক কী অ্যাওয়ে। তিকিতাকার ফুলঝুড়ি ফুটলে বিপক্ষ আর কোনও জবাব খুঁজে পায় না। এই তালিকায় শুধু একটা নামই রাখা যাচ্ছে না— সান সেবাস্তিয়ান অঞ্চলের অ্যানোইতা। আরও ভাল ভাবে বললে, রিয়েল সোসিয়েদাদের ঘরের মাঠ। গত ন’বছর ধরে বার্সাকে যে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মাথা নিচু করে ও একরাশ হতাশা নিয়ে। কোনও জয় ছাড়াই। রবিবার রাতেও যে ধারা বজায় থাকল।
মালাগার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর তিন পয়েন্ট তুলতেই হত বার্সাকে। কিন্তু অপয়া অ্যানোইতা আবার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল মেসিদের। ১-১ ড্র করে শীর্ষে থাকা রিয়ালের থেকে এখন ছ’পয়েন্ট নীচে বার্সা। ফলে এল ক্লাসিকো এখন কার্যত ‘ফাইনাল’ হয়ে দাঁড়াল বার্সার জন্য।
বার্সেলোনা যতই ভাল ফর্মে থাক না কেন, অ্যানোইতায় খেলতে আসলে ফুটবলাররা তাঁদের প্রতিভা যেন মাঠের বাইরেই রেখে দিয়ে আসেন। রবিবারের লা লিগা ম্যাচেও হল ঠিক তাই। শুরুর থেকে রিয়েলই বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। বার্সা দল এখন চোট সমস্যায় জর্জরিত। চোটের জন্য নেই দলের অন্যতম কারিগর আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। আর তাতে বার্সা মাঝমাঠও যেন ভুলে গিয়েছে সুযোগ তৈরি করতে। প্রথমার্ধে দু’একটা সুযোগ তৈরি করেও এগোতে পারেনি রিয়েল। বিরতির পর ছবি পাল্টায়। দা সিলভার গোলে যোগ্য দল হিসেবে ১-০ এগিয়ে যায় সোসিয়েদাদ।
বার্সা ভক্তদের আবার সেই আশঙ্কা ফিরে আসে। অ্যাওয়ে স্ট্যান্ড তখন নীরব। যেন ভাবছে, অ্যানোইতায় ফের আর এক অন্ধকার অধ্যায়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে তারা। কিন্তু দলে যে একজন দশ নম্বর আছেন। যাঁর বাঁ পা অপয়া মাঠ থেকেও অন্তত এক পয়েন্ট তুলে আনতে পারে। ম্যাচ যখন হারের দিকে যাচ্ছে, নেইমারের দুর্দান্ত একটা সোলো রান আটকাতে ব্যর্থ হয় রিয়েল। মেসিকে বল সাজিয়ে দেন ওয়ান্ডারকিড। এলএম টেনও নিঁখুত ফিনিশে ১-১ করেন।
ড্র করলেও ম্যাচ শেষে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন লুইস এনরিকে। এমএসএন-এর মতো বিশ্বমানের আক্রমণ নিয়েও কী করে বার্সা ড্র করল, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। নিষ্প্রাণ ড্র দেখার পরে লুইস এনরিকেও একহাত নিলেন তাঁর দলকে। জানিয়ে দিলেন, তাঁর কোচিংয়ে এটাই বার্সার সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। ভাগ্য সহায় ছিল বলে বার্সা এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। ‘‘আর কিছু বলার নেই। আমার মনে হয় ১-১ ড্র করাই একটা বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল,’’ বলছেন এনরিকে। বার্সা মানেই তো তিকিতাকা। অর্থাৎ সুন্দর পাসিং। এনরিকের মতে, রবিবার রাতে সেই ব্যাপারটাই ধরা পড়ল না খেলায়। ‘‘আমরা পাঁচটা সঠিক পাসও দিতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে তাও যা একটু চেষ্টা করেছে দল। আহামরি কিছুই করতে পারেনি। ওরা ছ’জন নিয়ে প্রেস করছিল। আর আমরাও মাঝমাঠ থেকে সঠিক পাস খেলতে পারিনি।’’ ম্যাচ ড্র করাটাকেই এনরিকে বলছেন, ভাগ্যের জোরে হয়েছে। ‘‘এক পয়েন্ট নেওয়ারও আমরা যোগ্য ছিলাম না। রিয়েলকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই,’’ বলেছেন বার্সা কোচ।
আপাতত ১৩ ম্যাচ পরেই গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা রিয়াল মাদ্রিদের থেকে ছ’পয়েন্ট নিচে। এল ক্লাসিকোয় যদি হেরে যায় বার্সা, তা হলে ন’পয়েন্ট পিছিয়ে পড়বে। বার্সা ডিফেন্ডার জেরার পিকে অবশ্য বলছেন, এখনও অনেক সময় আছে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর। ‘‘মাত্র কয়েকটা ম্যাচ হয়েছে। আমরা লা লিগায় আত্মসমর্পণ করে দিচ্ছি বলাটা একটু বাড়াবাড়ি।’’ পাঁচ দিন বাদে এল ক্লাসিকোয় নামছে বার্সা। যার আগে পিকে সমর্থকদের আশ্বস্ত করছেন, ‘‘আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। এটুকু বলতে পারি ক্লাসিকোতে অন্য আর এক বার্সাকে দেখতে পাবে সবাই।’’ বার্সা ভক্তদের স্বস্তিতে রাখতে পারে আরও একটা খবর। আন্দ্রে ইনিয়েস্তা প্র্যাকটিস শুরু করেছেন।