তারার খোঁজে: রিকি লালওমাওমা

মায়ের প্রেরণাতেই স্বপ্নপূরণ রিকির

রিকির উত্থান মিজোরামের আন্তঃগ্রাম ফুটবল লিগ থেকে। এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেই সুযোগ পান আইজল এফসি-তে। যদিও ভারতীয় ফুটবলে আইজল এফসি তখনও সেভাবে সমীহ আদায় করে নেয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৪২
Share:

মোহনবাগান রক্ষণের ভরসা রিকি। নিজস্ব চিত্র

মোহনবাগান ডিফেন্ডার রিকি লালওমাওমা-র ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত, যদি না মা পাশে থাকতেন।

Advertisement

১৯৯১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আইজলে জন্ম রিকির। বাবা কৃষক ছিলেন। রিকি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু শুরুতেই বিপর্যয়। বাবার আকস্মিক প্রয়াণে অন্ধকার নেমে আসে রিকির জীবনে।

এক দিকে প্রবল দারিদ্র। অন্য দিকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। অসহায় রিকিকে সেই সময় ভরসা জোগালেন মা। বলেছিলেন, ‘‘সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না। খেলায় মন দাও। তুমি সফল হলে সংসারের অভাবও দূর হবে।’’ মায়ের অনুপ্রেরণায় ফুটবলকেই বেছে নেন রিকি।

Advertisement

রিকির উত্থান মিজোরামের আন্তঃগ্রাম ফুটবল লিগ থেকে। এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেই সুযোগ পান আইজল এফসি-তে। যদিও ভারতীয় ফুটবলে আইজল এফসি তখনও সেভাবে সমীহ আদায় করে নেয়নি। কয়েক বছর খেলার পর সই করেন চানমারি এফসি-তে। ২০১৫ মরসুমে আইজল এফসি আই লিগ প্রথম ডিভিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলে তিনি ফিরে আসেন পুরনো ক্লাবে। বারাসত স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের ম্যাচে জিততে না পারলেও দুর্দান্ত খেলে নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। তখনই চোখে পড়ে গিয়েছিলেন মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্টের। কিন্তু মিজো ডিফেন্ডারকে ডিএসকে শিবাজিয়ান্স এফসি-তে নিয়ে যান ডেভ রজার্স। এ বছর তিনি সই করেছেন মোহনবাগানে। আর অভিষেকেই নজর কেড়ে নিয়েছেন।

লেফ‌্ট ব্যাট হলেও ২৫ বছর বয়সি রিকির আদর্শ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সি আর সেভেনের মতোই দ্রুত গতিতে উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠেন। রবিবার টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে ম্যাচের পর মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘রিকি ফুটবলটা খেলে মস্তিষ্ক দিয়ে। দুর্দান্ত কভারিং। রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণেও সাহায্য করে। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’’

টালিগঞ্জ অগ্রগামীর অ্যান্থনি উলফ-এর মতো তারকাকে রিকি এ দিন যে ভাবে সামলালেন, তাতে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন তারকা বিদেশ বসু। তিনি বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা দারুণ প্রতিভাবান। কখনও ভয়ে গুটিয়ে যায় না। ও যদি নিজেকে ধরে রাখতে পারে, তা হলে অনেক দূর যাবে।’’

সবুজ-মেরুন লেফ‌্ট ব্যাকের বিশেষত্ব কী? বিদেশের ব্যাখ্যা, ‘‘মাথা ঠান্ডা রেখে নিখুঁত ট্যাকল করতে পারে। দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতা। আর হার না মানা মানসিকতা।’’

রিকি-কে দেখে বিদেশের আবার ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন লেফ‌্ট ব্যাক রবার্ট লালথালমুয়ানা-র কথা মনে পড়ে গিয়েছে। বললেন, ‘‘অনেকটা রবার্টের মতোই খেলার ধরন রিকির। ওর মতোই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে। তবে অভিজ্ঞতা কম থাকায় এ দিন বেশ কয়েক বার ভুল করলেও দ্রুত তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টাও করেছে।’’

ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রিকির। এ বার তাঁর লক্ষ্য সবুজ-মেরুন জার্সিতে আই লিগ খেলা। আর তাই নিজেকে প্রমাণ করতে বেছে নিয়েছেন কলকাতা প্রিমিয়ার লিগকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement