আজ থেকে বলব না রড লেভার শ্রেষ্ঠ, এখন রাজা শুধু রজার

জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেডেরার সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিল আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে। আমাকেও। কিন্তু উইম্বলডনে এ বার যেটা করে দেখাল, জানি না টেনিস ইতিহাসে সেই নজির আর আছে কি না।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৫:৫৪
Share:

চ্যাম্পিয়ন: ফের উইম্বলডন ট্রফি ঘরে তুললেন রজার ফেডেরার। এই নিয়ে আট বার। ছবি: গেটি ইমেজেস

আমার কাছে সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় রড লেভার। এত দিন পর্যন্ত ছিল। ওর মতো অলরাউন্ড দক্ষতা আমি দেখিনি। রবিবার উইম্বলডনের ফাইনালের পরে আমার সর্বকালের সেরার তালিকায় লেভার দু’নম্বরে নেমে গেল। এক নম্বরে রজার ফেডেরার ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না যে।

Advertisement

দু’বছর আগে যখন বলেছিলাম ফেডেরার শেষ হয়ে গিয়েছে। ও আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবে না, এক বারের জন্যও তখন মনে হয়নি টেনিসের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন দেখব ঠিক দু’বছর পরেই। ফেডেরার এক মরসুমে দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবে!

জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেডেরার সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিল আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে। আমাকেও। কিন্তু উইম্বলডনে এ বার যেটা করে দেখাল, জানি না টেনিস ইতিহাসে সেই নজির আর আছে কি না। শুধু কোনও সেট না হেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই নয়, গোটা টুর্নামেন্টে একটাও সার্ভিস গেম হারেনি ফেডেরার। যেটা অবিশ্বাস্য একটা রেকর্ড।

Advertisement

অনেকে বলবেন, ফাইনালে প্রথম সেটেই মারিন চিলিচ চোটটা না পেলে ৬-৩, ৬-১, ৬-৪-এ এত সহজে ফেডেরার হয়তো জিতত না। আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। চিলিচ দেখলাম দ্বিতীয় সেটের মাঝামাঝি চোটের জন্য প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল। হয়তো আর পারছিল না চোট সামলে খেলতে। বাহবা দিতে হবে ওকে তবু ম্যাচটা ছেড়ে দেয়নি। তবে ফেডেরার যে ফর্মে খেলছে তাতে চিলিচ সুস্থ থাকলেও রেজাল্ট অন্যরকম হতো বলে মনে হয় না। এক জন ভাল টোনিস খেলোয়াড় একটা সময় টেনিস বলটাকে কোর্টে খেলতে খেলতে ফুটবলের মতো দেখে। আমার মনে হয় ফেডেরারও এ বারের উইম্বলডনে সেই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। কোনও চিলিচের সাধ্য ছিল না ফাইনালে এই ফেডেরারকে হারানোর।

আরও পড়ুন: জিতে আবেগে ভাসলেন উইম্বলডনের নতুন রানি

৩৬ বছর বয়সে একটা খেলোয়াড় কী দুরন্ত খেলছে! কী ফিট! পিঠের চোট, হাঁটুর চোট সারিয়ে ফিরে এসে পেশাদার টেনিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ রকম দুর্ধর্ষ পারফর্ম করছে, ভাবাই যায় না। সবচেয়ে বড় কথা সার্ভিস। ফেডেরারের এ রকম ভয়ঙ্কর সার্ভিস জীবনে দেখিনি আমি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই সার্ভিসটা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল, যে ওকে কেউ ছুঁতে পারেনি। সেমিফাইনালেই তো বার্ডিচের বিরুদ্ধে ১৫-৪০ পয়েন্টে পিছিয়ে গিয়েও পরপর চারটে এস মেরে একটা গেম জিতেছিল। আত্মবিশ্বাসের শীর্ষে না থাকলে এ রকম টানা নিখুঁত সার্ভিস করে যাওয়া সম্ভব নয় কারও।

নিজেকে তৈরি করতেও ঠিক ততটাই নিখুঁত রুটিন মেনে চলে ফেডেরার। আমার বন্ধু মানে ফেডেরারের প্রাক্তন কোচ টনি রোচের মুখেই শুনেছি যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের প্রস্তুতি নিতে ও উইম্বলডনের পরে দুবাই চলে যেত। যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চলার সময় যে রকম গরম থাকে ওখানে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতেই দুবাইয়ে প্র্যাকটিস করত। সঙ্গে নিয়ে যেত তিন-চার জন প্র্যাকটিস পার্টনারকে। এক জন বা দু’জন প্র্যাকটিস পার্টনার খেটে পারত না ফেডেরারের সঙ্গে। তাই আন্দাজ করতে পারছি ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় ইভান লুবিচিচকে কোচিং টিমে আনার পরে ফেডেরার নিজের সার্ভিস নিয়ে কতটা খেটেছে।

সংখ্যায় অতিমানব

পেলে: ১০০০ গোল

১৯ নভেম্বর, ১৯৬৯ ভাস্কো দ্য গামার বিরুদ্ধে রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে।

সচিন: ১০০ সেঞ্চুরি

১৬ মার্চ, ২০১২

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার শের ই বাংলা স্টেডিয়ামে।

উডস: টানা ৪ মেজর

২০০০-২০০১ মরসুম টানা চারটি মেজর খেতাব জয়ের রেকর্ড।

ইউএস ওপেন, দ্য ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ, পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপস, মাস্টার্স টুর্নামেন্ট।

বোল্ট: ৮ অলিম্পিক্স সোনা

স্প্রিন্টে সোনা জেতার রেকর্ড।

বেজিং ২০০৮ (২), লন্ডন ২০১২ (৩), রিও দে জেনেইরো ২০১৬ (৩)।

মানসিক প্রস্তুতিকেও ফেডেরার অসম্ভব গুরুত্ব দেয়। সেই কারণেই উইম্বলডনে খেলতে এসে দুটো ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। একটা নিজের জন্য আর একটা পরিবারের জন্য। নিজের জন্য ফ্ল্যাটটায় শুধু ফোকাস করে খেলার উপরে, কোচিং, প্রস্তুতি নিয়ে। সবকিছু ছেড়ে তখন ফেডেরারের সামনে একটাই লক্ষ্য, উইম্বলডন।

আজকের ম্যাচটা ফাইনাল হিসেবে তেমন জমল না। একঘেয়ে লাগল। ফেডেরারের সার্ভিসটাই পার্থক্য গড়ে দিল। তাও ভুললে চলবে না এমন একজন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যে কি না এস সার্ভিস মারার দিক থেকে ফাইনালের আগে দু’নম্বরে ছিল। মানে চিলিচ।

আর কতগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফেডেরার জিতবে প্রশ্ন উঠতে পারে। উইম্বলডনেই দেখলাম রবিবার ও ম্যাচের পরে বলল যে আগামী বছর ফের খেলতে চায় এখানে। মজা করে এটাও বলল যে, আরও লম্বা বিশ্রাম নিতে চায়। তবে আমার কিন্তু মনে হয় মজা করে বললেও এটাই ফেডেরার করবে এর পরে। আরও বিশ্রাম নেবে হয়তো। বেছে বেছে টুর্নামেন্ট খেলবে।

জানি না যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে খেলবে কি না। হয়তো এর পরে কয়েক মাস বিশ্রাম নেবে। একটা-দুটো টুর্নামেন্ট খেলবে তার পরে ঠিক করবে ওর পরবর্তী লক্ষ্য। কোন টুর্নামেন্টে শারীরিক আর মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি তরতাজা হয়ে নামতে পারবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে ও নামবে বলে মনে হয় না। এই ফেডেরারকে আবার কোর্টে দেখতে মুখিয়ে রইলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন