রোনাল্ডোর কিক নিতে না আসা বিস্ময়কর

পর্তুগালকে প্রথমবার ইউরো কাপে চ্যাম্পিয়ন করা থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো— রোনাল্ডো নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এই মরসুমে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৪:২০
Share:

চিলে ০ (৩) : পর্তুগাল ০ (০)

Advertisement

কনফেডারেশন্স কাপের সেমিফাইনালটা টাইব্রেকারে গড়ানোর পরে ভেবেছিলাম, শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলবে পর্তুগাল-ই। কারণ, এই মুহূর্তে স্বপ্নের ফর্মে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করল সি আর সেভেন।

পর্তুগালকে প্রথমবার ইউরো কাপে চ্যাম্পিয়ন করা থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো— রোনাল্ডো নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এই মরসুমে। তার ওপর ও এমন একজন ফুটবলার যে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। তাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যখন দেখলাম, চিলের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ও কিক নিতেই গেল না।

Advertisement

পর্তুগালের হয়তো স্ট্র্যাটেজি ছিল টাইব্রেকারে শেষ কিকটা নেবে সেরা স্ট্রাইকার। কিন্তু বুধবার রাতে পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল রিকার্ডো কোয়ারেসমা ও জোয়াও মৌতিনহো-র কিক চিলে গোলরক্ষক ক্লদিও ব্র্যাভো আটকে দেওয়ায়। রীতিমতো মরণবাঁচন পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে তৃতীয় কিকে গোল করতে না পারা মানেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। ভেবেছিলাম, এই পরিস্থিতিতে পর্তুগালের রক্ষাকর্তা হয়ে অবতীর্ণ হবে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্টাইকার। হারের আতঙ্কে ভুগতে থাকা সতীর্থদের রোনাল্ডো বলবে, তোমরা চিন্তা কোরো না। আমি গোল করে দলকে আবার লড়াইয়ে ফেরাব।

কিন্তু কোথায়? দেখে বিস্মিত হলাম রোনাল্ডো নয়, লুইস কার্লোস আলমেদিয়া ডি’কুনহা (নানি) এগিয়ে যাচ্ছে পেনাল্টি স্পটের দিকে। ওকে দেখেই মনে হচ্ছিল মানসিক ভাবে প্রচণ্ড চাপে রয়েছে। নানির কিকও দুর্দান্ত ভাবে বাঁচিয়ে দিল ব্র্যাভো।

পর্তুগাল বনাম চিলে ম্যাচটা দেখতে দেখতে ১৯৭৮ সালের ফেডারেশন কাপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। কোয়েম্বাত্তূরে কেরল পুলিসের বিরুদ্ধে ম্যাচটা টাইব্রেকারে গড়ায়। আমাদের প্রথম দু’টো কিক বাঁচিয়ে দিয়েছিল ওদের গোলরক্ষক। তৃতীয় কিকে গোল না করতে পারলে আমরা ছিটকে যাব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কোচ আমাকে পাঠালেন। আমি গোল করার পরেই পুরো দলটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল। তার পর আমরা পরপর দু’টো গোল করি। আর ওরা দু’টো গোল নষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত আমরাই কিন্তু জিতেছিলাম।

লিওনেল মেসি-র ভক্তরা চিলের জয়ের পর থেকেই রোনাল্ডোকে কটাক্ষ করতে শুরু করে দিয়েছে। বলছে, মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করতে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য ও কখনওই রোনাল্ডোর মতো পালিয়ে যায়নি।

আরও পড়ুন:

স্মৃতির দাপটে জিতল ভারত

আমি অবশ্য মেসি-ভক্তদের সঙ্গে একমত নই। রোনাল্ডো এই উচ্চতায় পৌঁছেছে প্রচুর লড়াই করে। ও পালিয়ে যাওয়ার মতো ফুটবলার নয়। আসলে দিনটাই রোনাল্ডোর ছিল না।

শুধু টাইব্রেকারে কিক না নেওয়া নয়, চিলের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোকে একবারের জন্যও চেনা মেজাজে পাওয়া যায়নি। সামনে একা ব্র্যাভোকে পেয়েও গোলে বল ঠেলতে পারেনি। বারবারই নেমে যাচ্ছিল মাঝমাঠে। খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ওর মনটা যেন অন্য কোথাও রয়েছে।

রোনাল্ডোর ভাল খেলতে না পারার আরও একটা কারণ হচ্ছে, সতীর্থদের থেকে সাহায্য না পাওয়া। পর্তুগাল দলটা পুরোপুরি রোনাল্ডোর ওপর নির্ভরশীল। বল ধরেই সকলে সি আর সেভেনকে খোঁজে পাস দেওয়ার জন্য। কিন্তু চিলে কোচ খুয়ান আন্তোনিও পিজ্জির মূল স্ট্র্যাটেজি ছিল, রোনাল্ডোকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে না দেওয়া। তাই সব সময়ই ওর জন্য ডায়গোনাল কভারিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। অবশ্য শুধু পিজ্জি একা নন, রোনাল্ডো-মেসি-র মতো ফুটবলারদের ছেড়ে রাখার বিলাসিতা কোনও কোচই দেখান না।

রিয়ালের হয়ে যখন মাঠে নামে রোনাল্ডো, তখনও প্রতিপক্ষের কোচ একই স্ট্র্যাটেজি নেন। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে গ্যারেথ বেল, করিম বেঞ্জেমা-র মতো সতীর্থদের ও পাশে পায়। যারা ওকে চক্র্যব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। কিন্তু পর্তুগাল দলে রোনাল্ডোর অবস্থা অভিমন্যুর মতোই! রোনাল্ডোর ব্যর্থতার হতাশা কিছুটা অবশ্য দূর করে দিয়েছে ব্র্যাভোর নাটকীয় উত্থান। বার্সেলোনা ছেড়ে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-তে যাওয়ার পর থেকেই ওর সময় ভাল যাচ্ছে না। তার ওপর চোট পেয়ে কনফেডারেশন্স কাপেও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। পর্তুগালের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন