সন্তোষের কাছে হেরে অসন্তোষ ইস্টবেঙ্গলে

তিন বছর আগের কথা। সে দিন আই লিগে শিলংয়েই তাঁর কলকাতায় কোচিং ইনিংসের সমাপ্তি পড়ে ফেলেছিলেন বর্তমান রয়্যাল ওয়াহিংডো কোচ সন্তোষ কাশ্যপ। মঙ্গলবার সেই শিলংয়ে সন্তোষের টিমের কাছে হেরে কলকাতার বড় দলে তাঁর শেষের কবিতা পড়ার দিকে কি এগিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরি? লাল-হলুদে আগমনের মাত্র মাসদেড়েকের মধ্যেই এলকোর সম্ভাব্য বিসর্জনের প্রশ্নে বিরক্ত ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

এলকো। ৪০ দিনেই প্রশ্নের মুখে।

রয়্যাল ওয়াহিংডো-১ (গডউইন) : ইস্টবেঙ্গল-০

Advertisement

তিন বছর আগের কথা। সে দিন আই লিগে শিলংয়েই তাঁর কলকাতায় কোচিং ইনিংসের সমাপ্তি পড়ে ফেলেছিলেন বর্তমান রয়্যাল ওয়াহিংডো কোচ সন্তোষ কাশ্যপ।

Advertisement

মঙ্গলবার সেই শিলংয়ে সন্তোষের টিমের কাছে হেরে কলকাতার বড় দলে তাঁর শেষের কবিতা পড়ার দিকে কি এগিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরি?

লাল-হলুদে আগমনের মাত্র মাসদেড়েকের মধ্যেই এলকোর সম্ভাব্য বিসর্জনের প্রশ্নে বিরক্ত ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার। ‘‘পরপর দু’টো ম্যাচ হারতেই অযৌক্তিক সব প্রশ্ন উঠছে। কোচ বদলের কোনও পরিকল্পনা নেই আমাদের।’’

কিন্তু আপনার কোচ ডার্বি হারের দু’দিনের মধ্যেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নতুন চাকরি খোঁজার আভাস দিয়েছেন! এটা শুনে অবশ্য লাল-হলুদ সচিব ডিফেন্সিভ, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও কথা বলব না। আজকের খেলা টিভিতে দেখার পর একটা কথাই ফুটবলার আর কোচকে ফিরে এলে বলব— এ রকম পারফরম্যান্স চললে পরের মরসুমে কিন্তু স্পনসর পাওয়াই সমস্যা হয়ে যাবে ক্লাবের।’’

কিছু দিন আগেই প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো এ দিন তাঁর পুরনো ছাত্রদের খেলা দেখে বিস্মিত। ‘‘আমি তো কেবল সালগাওকর ম্যাচটা হেরেছিলাম। ইস্টবেঙ্গলকে একের পর এক ম্যাচে হারতে দেখে ভাল লাগছে না,’’ ফোনে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিলেও গোয়ায় ঘনিষ্ঠ মহলে আর্মান্দো এ দিন বলেছেন, নতুন কোচ কি টিমটাকে সামলাতে পারছে না?

এ দিন পাহাড় থেকে পতনের পর ১০ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল এগারো দলের আই লিগের ছয় নম্বরে নেমে যাওয়ার দিন ময়দানে বেশি করে ঘুরপাক খাচ্ছে ক্লাবের বিতাড়িত গোয়ান কোচের প্রশ্নটাই। টিমের ‘অশান্ত’ পরিবেশ সামলাতে আর্মান্দোকে সরিয়ে এলকো সতৌরিকে এনেছে ক্লাব। কিন্তু এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নতুন কোচের কোচিং পদ্ধতি নিয়েও। ডার্বি জিতলেও মেহতাব আর হরমনজ্যোৎ খাবরার বিক্রমে লাল-হলুদ রক্ষণে সে ভাবে মাস্তানি করে আসতে পারেননি সনি-বলবন্তরা। তার পরেও এলকো ডার্বির সাংবাদিক সম্মেলনে এসেই মেহতাবের খেলা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। টিমের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মিডিওকে ‘কাফ মাসল চোট’-এর কারণে দলের সঙ্গে শিলং নিয়েই যাননি। এ দিন ওয়াহিংডোর বিরুদ্ধে যাঁকে মেহতাবের বদলে খেলালেন এলকো, তাঁকে নিয়ে এ বার কী বলবেন?

সেই সুখবিন্দর এ দিন ম্যাচের শুরু থেকেই দুই স্টপার সুসাক এবং অর্ণবের সঙ্গে বারবার এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন। মাঝমাঠ আর রক্ষণের মাঝে পনেরো-কুড়ি গজের ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছিল যা কাজে লাগিয়ে লাল-হলুদ রক্ষণে দাপিয়ে বেড়ালেন জাকিচাঁদ-কিম ইয়ংরা। তেমনই দুরাবস্থা লাল-হলুদ রক্ষণের। এলকো জমানায় এই নিয়ে নয় গোল সেট পিস থেকে হজম করল ইস্টবেঙ্গল। বল উইং থেকে উড়ে এলেই কাঁপুনি শুরু হচ্ছে সুসাকদের। এ দিনও কর্নার থেকে গডউইন যখন গোলটা করে গেলেন, তাঁকে ব্লক করতে ইস্টবেঙ্গলের কোনও ডিফেন্ডার এগোলেনই না। লালরিন্দিকার বল তাড়া করার অভ্যেস এমনিতেই কম। তাঁর ইউএসপি উইং ধরে আক্রমণ। এলকোর স্ট্র্যাটেজিতে সেই ডিকাকে ভিতরের দিকে বারবার ঢুকে আসতে দেখা যাচ্ছে কেন কে জানে!

এ দিন এক গোলে পিছিয়ে সেই অবস্থায় এলকো আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানোর বদলে অর্ণবকে তুলে নামালেন আর এক স্টপার রাজুকে। হয়তো উদ্দেশ্য ছিল বিপক্ষ বক্সের ভেতর রাজুর লম্বা থ্রো কাজে লাগিয়ে ম্যাচটায় রক্ষা পাওয়া। খেলা শেষে ফোনে এলকোরই এক ফুটবলার বললেন, ‘‘অর্ণবের তো চোট লাগেনি! কোচ কেন তখন ওকে তুললেন তা হয়তো উনিই ভাল বলতে পারবেন।’’

র‌্যান্টি-ডুডু জুটির তেজও কেমন যেন নিভু-নিভু। এ দিনের ম্যাচে কেউ যেন কাউকে মাঠে চেনেন না! লাল-হলুদে চল্লিশ দিন কাটিয়ে ফেলেও টেকনিক্যাল ভুলত্রুটি, ফুটবলারদের ভেতর বোঝপড়ার অভাব এক জন ডাচ কোচ যদি মেরামত করতে না পারেন তা হলে আর বড় দলের কোচের জুতো বিদেশিদের জন্য রাখার দরকার কী? বিপক্ষ ‘ফলস নাইন’-এ (৪-৬-০) মাঝমাঠে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে রেখেছে দেখেও ‘প্ল্যান বি’ কেন তৈরি নেই এলকোর, সেই প্রশ্নও উঠছে ক্লাবের অন্দরে। ইস্টবেঙ্গল কোচ এই পরিস্থিতিতে না ধরছেন মোবাইল না ধরছেন হোটেলের ফোন। বেশি রাতে অবশ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘চ্যাট’ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি হতাশ।’’

বুধবারই কর্মসমিতির বৈঠকে বসছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। সেখানেই এলকোকে শেষের কবিতা শোনানো হবে না। তবে আর্মান্দো-অশান্তির পর আর এক অশান্তির আগুন কী ভাবে নির্বাপিত হবে তা নিয়ে আলোচনা উঠবে বলেই খবর ক্লাব সূত্রে।

ইস্টবেঙ্গল: শুভাশিস (অভিজিৎ), খাবরা, অর্ণব (রাজু), মিলান, রবার্ট, তুলুঙ্গা (বলজিৎ), সুখবিন্দর, লোবো, লালরিন্দিকা, র‌্যান্টি, ডুডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন