কাশ্মীরেও স্কুল, অদম্য সচিন তেন্ডুলকর

দেশের খেলা নিয়ে যে বক্তব্য রাজ্যসভায় তাঁকে বৃহস্পতিবার দিতে দেওয়া হয়নি, সেটা ভিডিও করে এ দিন টুইটার ও ফেসবুকে দিয়েছেন সচিন।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

সচিন তেন্ডুলকর।

রাজ্যসভায় বক্তা হিসেবে অভিষেক ইনিংসে ব্যাট করতে পারলেন না। ক্রিকেট জীবনে যিনি বহু ফাস্ট বোলারকে পিটিয়ে সেঞ্চুরি অব সেঞ্চুরিজ করেছেন, তিনি অজানা পিচে কংগ্রেস সাংসদদের আচমকা বাউন্সারে থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন সন্দেহ নেই।

Advertisement

দ্বিতীয় দিন অসম্পূর্ণ বক্তব্য রাখতে আর রাজ্যসভায় যাননি। কংগ্রেস সাংসদদের আচরণে সচিন তেন্ডুলকর কি ‘রিটায়ার্ড হার্ট’?

না, লিখেও লেখা যাচ্ছে না যে তিনি ‘আহত-অবসৃত’। বরং ’৮৯-এর পাকিস্তানে অভিষেক সফরে যেমন ওয়াকার ইউনিসের বাউন্সারে নাক ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে দেখেও মাঠ ছাড়েননি ষোলো বছরের সচিন, এখানে তেমনই মনোভাব তাঁর। রাজ্যসভায় প্রতিহত হওয়ার পরের সকালে দেশের খেলা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা তো প্রচার করলেনই সোশ্যাল মিডিয়ায়, সঙ্গে শপথ নিয়ে ফেললেন নিজের সমাজসেবামূলক কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

Advertisement

রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হিসেবে পাওয়া তহবিল থেকে সিংহ ভাগ অর্থ খরচ করে ফেলেছেন। দু’টো গ্রামের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াও অন্তত আট-দশটি স্কুলে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছেন। যে হেতু তিনি রাজ্যসভায় বিশেষ ভাবে মনোনীত, অন্য সাংসদদের মতো নিজের কেন্দ্রেই অর্থ খরচ করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা সচিনের ক্ষেত্রে নেই। সেই সুবিধে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের অনেক স্কুলেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যার মধ্যে বাংলার একটি স্কুলও রয়েছে।

বিশেষ সাংসদ তহবিলের যে শেষ অংশটি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে, তা বিশেষ দু’টি স্কুলে খরচ করতে চান। প্রথমত, কাশ্মীরে একটি ভাল স্কুল গড়তে চান। যে হেতু কাশ্মীর মানেই স্পর্শকাতর বিষয়, রাজ্যসভায় বলতে ওঠার মতোই বাধাবিঘ্ন আসতে পারে। কিন্তু সচিন পিছোতে নারাজ। এ ব্যাপারে শুক্রবার দুপুরে দিল্লি ছাড়ার আগেই কথাবার্তা শুরু করেছেন তিনি।

অন্য স্কুলটি গড়বেন মহারাষ্ট্রে। সেখানে তিনি পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে চান তিনটি বিশেষ শ্রেণির বাচ্চাদের। যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরা, মহারাষ্ট্রে বিশেষ নাচ-গানের সংস্কৃতি ‘তামাশা’র সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের সন্তানরা এবং দরিদ্র আখ কৃষকদের ঘরের বাচ্চারা এই স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে। দু’টি স্কুল গড়তে প্রায় ২৫ লক্ষ করে টাকা খরচ হবে।

আরও পড়ুন: বিয়ের পর এ বার মুম্বইয়ের দিকে রওনা বিরুষ্কার

জনকল্যাণমূলক কাজ তিনি কী করেন, তা বরাবরই সচিন প্রচারের আড়ালে রাখতে চেয়েছেন। তবে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই দু’টি স্কুল গড়ার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘রাজ্যসভায় হাজিরা নেই বলে এত কথা তোলা হয় সচিনের বিরুদ্ধে। কেউ এটা বলে না যে, তহবিলের পঁচানব্বই শতাংশ অর্থ ইতিমধ্যেই ও খরচ করে ফেলেছে।’’

দেশের খেলা নিয়ে যে বক্তব্য রাজ্যসভায় তাঁকে বৃহস্পতিবার দিতে দেওয়া হয়নি, সেটা ভিডিও করে এ দিন টুইটার ও ফেসবুকে দিয়েছেন সচিন। তাতে নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘খেলা-প্রিয় দেশ থেকে আমাদের খেলেয়োড় দেশে পরিণত হতে হবে। যে ভাবে মা-বাবারা সন্তানদের জিজ্ঞাসা করেন, তুমি খেয়েছ কি না, তুমি ঘুমিয়েছ কি না, সে ভাবেই যেন একদিন জিজ্ঞেস করেন, তুমি আজ খেলেছ তো?’’ নেলসন ম্যান্ডেলার উদাহরণ টেনে বোঝানোর চেষ্টা করেন, রাগবি বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকায় এনে কী ভাবে ম্যান্ডেলা খেলার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন।

নিজের ক্রিকেটজীবনের সেই ঐশ্বরিক মন্ত্র মনে করিয়ে দিতেও ভোলেননি তিনি— ‘‘অনুশীলনে হয়তো প্রসিদ্ধি থাকে না, কিন্তু অনুশীলন না করলে প্রসিদ্ধ হওয়া যায় না।’’ আচরেকর স্যারের আশ্রমে শেখা সেই তেন্ডুলকরীয় সংকল্প। আক্রম-ইউনিসদের বাউন্সার টলাতে পারেনি। কংগ্রেস সাংসদদের হল্লাও পারল না ‘বোল্ড’ করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন