লিয়েন্ডার বনাম সানিয়া যুদ্ধে ঢুকতে চায় না ফেডারেশন

শুরু হয়েছিল ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারতীয় টেনিস দল গড়া থেকে। চার বছর পর রিও অলিম্পিক্স চলে গিয়েছে। ভারতের টেনিস মহাতারকাদের কামড়াকামড়ি চলছেই। শুধু তাই-ই নয়, আরও বেড়েছে! আগে তবু দেশের সিনিয়র প্লেয়ারদের মধ্যে লাগত অলিম্পিক্সের আশপাশে।

Advertisement

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

লিয়েন্ডারের রবিবার। টিমের হার দেখার পাশাপাশি জড়ালেন নতুন বিতর্কেও। ছবি: উৎপল সরকার

শুরু হয়েছিল ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে ভারতীয় টেনিস দল গড়া থেকে। চার বছর পর রিও অলিম্পিক্স চলে গিয়েছে। ভারতের টেনিস মহাতারকাদের কামড়াকামড়ি চলছেই। শুধু তাই-ই নয়, আরও বেড়েছে! আগে তবু দেশের সিনিয়র প্লেয়ারদের মধ্যে লাগত অলিম্পিক্সের আশপাশে। এখন ভারত ডেভিস কাপ খেলছে, তার মধ্যেও চলছে অলিম্পিক্স নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি। হয় এক সিনিয়র প্রেস কনফারেন্সের সুযোগ নিয়ে আর এক সিনিয়রকে খোঁচা মারছেন। আবার কয়েক ঘণ্টা যেতেই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করে আর এক সিনিয়র সেই খোঁচার পাল্টা দিচ্ছেন আরও কদর্য ভাবে। যা দেখেশুনে তিতিবিরক্ত দেশের টেনিস ফেডারেশন। কিন্তু অহেতুক যুযুধান সিনিয়র তারকাদের কিছু বলার সাহস নেই। ফলে ভারতীয় টেনিসের পরিবেশ খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।

Advertisement

গতকাল ডাবলস ম্যাচোত্তর তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে উঠে স্টেডিয়ামেই গভীর রাতে লিয়েন্ডার পেজ এক সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলকে ইন্টারভিউ দেন। যেখানে তিনি বলে দেন, রিওতে ভারতের মিক্স়ড ডাবলস টিম নির্বাচন সঠিক হয়নি। আরও বলেন, তিনি আগের বছর থেকে এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন। দাবি করেন, তাঁরই রিওতে সানিয়ার মিক্সড ডাবলস সঙ্গী হওয়াটা ন্যায্য ছিল।

লিয়েন্ডার আগেও এই আক্ষেপ করেছেন। এমন নয় যে, নয়াদিল্লিতেই প্রথম এমন বিতর্কিত কথাবার্তা বললেন। কিন্তু এ দিন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে সানিয়া নাম না করে লিয়েন্ডারের উদ্দেশ্যে রীতিমতো বোমা ফাটান। লেখেন, ‘বিষাক্ত লোকের সঙ্গে জেতার একমাত্র উপায় হল, না খেলা!’ কিছুক্ষণের মধ্যে সানিয়ার এই চাঞ্চল্যকর টুইটকে ‘রিটুইট’ করে তাঁর বক্তব্যকে কার্যত সমর্থন জানান রিওয় সানিয়ার মিক্সড ডাবলস পার্টনার রোহন বোপান্না। এমনকী পরে বোপান্না নিজেও লিয়েন্ডারকে ঘুরিয়ে আক্রমণ করেন টুইটারে। বলে দেন, সতীর্থের গায়ে কাদা ছোড়াটা পুরনো অভ্যাস।

Advertisement

সানিয়ার টুইটে কারও নাম না থাকায় লিয়েন্ডার শিবির সরাসরি পাল্টা দিতে পারছে না। তবে যতটুকু নিন্দেমন্দ করার করছে। লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ যেমন খেলা দেখা থামিয়ে বললেন, ‘‘লিয়েন্ডারের সিনিয়রিটিকে অসম্মান করা এ দেশের অন্য সিনিয়রদের তো আর নতুন কিছু নয়! সেই লন্ডন অলিম্পিক্স থেকে চলেছে। কিন্তু ওকে এ ভাবে টেনে নামানো যাবে না।’’

কিন্তু ডেভিস কাপের মধ্যে সানিয়া, অলিম্পিক্স— এ রকম অন্য বিষয় টেনে এনে বিতর্কিত মন্তব্য তো প্রথমে লিয়েন্ডারই করেছেন! সিনিয়র পেজ জবাব দিলেন, ‘‘সাংবাদিকের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার স্বভাব লি-র নেই। তা ছাড়া যথাযথ কারণ থাকলে কারও নাম করে নিজের প্রতিক্রিয়া দিতেও ও কোনও কালে ভয় পায় না। কেউ কেউ যেমন নাম না করে কারও উদ্দেশ্যে নিজের মনের বিষ ঢেলে দেয়, ও সে রকম স্বভাবের নয়। যেটা সত্যি মনে করে সরাসরি বলে।’’

জানা গেল, সানিয়ার টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন ডিএলটিএ-তে রাতের দিকেও সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা প্রথমে ভেবেছিলেন লিয়েন্ডার। তার পর কী ভেবে সেই পরিকল্পনা পাল্টান। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, এ বার ফেডারেশনের কাছে ইস্যুটা নিয়ে যাবেন। উল্লেখ্য, এআইটিএ-র নতুন নির্বাচিত মহাসচিব হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় লিয়েন্ডার-ঘনিষ্ঠ হিসেবে ভারতীয় টেনিসমহলে পরিচিত। অবশ্য হিরণ্ময় বললেন, ‘‘সিনিয়রদের ঝামেলার মধ্যে এআইটিএ-র নাক গলানোর কোনও ইচ্ছে নেই। ওদের ঝগড়া ওরাই মেটাক। প্রত্যেকেই ওরা যথেষ্ট সিনিয়র, পরিণত এবং পেশাদার। আমরা একমাত্র দল গড়ার সময় প্লেয়ারদের মধ্যে ঝামেলা দেখলে তখন মাথা গলাব।’’

কিন্তু এখানে তো রিও অলিম্পিক্সে ভারতীয় দল গড়া নিয়ে দেশের দুই সেরা সিনিয়রে ঝগড়া চলেছে! তবু ফেডারেশন সিনিয়র প্লেয়ারদের নিয়ে বসার কথা ভাববে না? অনড় হিরণ্ময় বললেন, ‘‘পরের দল গড়ার সময় এলে তখন ভাবব।’’

সোজা কথা, সিনিয়র প্লেয়াররা এক দিকে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে চলবেন। আর এক দিকে ফেডারেশন চুপ করে বসে দেখবে। আর এই দুইয়ের মাঝে পড়ে অসহায় ভারতীয় দল হেরে যাবে। অলিম্পিক্স থেকে খালি হাতে ফেরার এক মাসের মধ্যে ডেভিস কাপে আজ ভারত কচুকাটা হল ০-৫-এ। আজ রিভার্স সিঙ্গলস দুটোতেও হারলেন সুমিত নাগল আর রামকুমার। ডেভিসে আবির্ভাব ম্যাচে টিনএজার সুমিত একটা সেট মার্ক লোপেজের থেকে কেড়ে নিলেও রামকুমার স্ট্রেট সেটে হারেন দাভিদ ফেরারের হাতে।

যার পর ভারতের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন সেই পুরনো রেকর্ড বাজিয়ে গেলেন— ‘‘যত দিন আমাদের সিঙ্গলসে অন্তত একজন প্রথম পঞ্চাশে থাকা প্লেয়ার না থাকছে দলে, ওয়ার্ল্ড গ্রুপ খেলা কঠিন।’’ এর সঙ্গে আনন্দ অমৃতরাজের বোধহয় বলা উচিত ছিল, ‘‘আর সিনিয়র প্লেয়াররা ঝগড়া না করে তরুণদের তুলে আনার দিকে নজর দিক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন