স্নেহ: মেয়ে অলিম্পিয়ার সঙ্গে সেরিনা উইলিয়ামস। ফাইল চিত্র
টেনিস কোর্টে একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। এ ভাবেই তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত তাঁর সমর্থকরা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে কোর্টের বাইরে তাঁকে এমন এক লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল, যেখানে মৃত্যুর সঙ্গে রীতিমতো পাঞ্জা লড়ে তাঁকে ফিরতে হয়েছে। তিনি সেরিনা উইলিয়ামস।
একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক সেরিনা মাস পাঁচেক আগে মেয়ে অলিম্পিয়ার জন্ম নেওয়ার সময় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। কিংবদন্তি মার্কিন টেনিস খেলোয়াড় লিখেছেন, ‘‘অলিম্পিয়া হওয়ার পরে প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম আমি। নেহাত ভাগ্য খুব ভাল ছিল। তবে, গর্ভাবস্থায় সে রকম কোনও সমস্যা হয়নি আমার। আমার মেয়ে এমার্জেন্সি সি সেকশনে হয়। জন্ম নেওয়ার সময় ওর হৃৎস্পন্দনের গতি হঠাৎ কমে গিয়েছিল, তাই।’’ সঙ্গে তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘অস্ত্রোপচারটাও ভালমতোই হয়েছিল। আমি কিছু বোঝার আগেই দেখি অলিম্পিয়া আমার কোলে। এ রকম অসাধারণ অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনও হয়নি। তবে মা হওয়ার পরের ছ’দিন প্রবল অনিশ্চয়তায় কেটেছে।’’
কী সেই অনিশ্চয়তা সেটাও সেরিনা খোলাখুলি লিখেছেন। ‘‘সমস্যাটা শুরু হয় পালমোনারি এম্বোলিজম দিয়ে। এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আগেও আমার এই সমস্যা হয়েছে। তাই ভয়ে ভয়ে থাকতাম আবার না সমস্যাটা দেখা দেয়। তাই যখনই নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হতো, এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে নার্সদের সতর্ক করে দিতাম।’’
এর পরেই সমস্যাটা আরও গুরুতর রূপ নেয়। সেরিনা লিখেছেন, ‘‘এর পরেই গম্ভীর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আমার ভাগ্য ভাল সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। প্রথমে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার জন্য আমার প্রচণ্ড কাশি হচ্ছিল। তাতে অস্ত্রোপচারের সময় আমার শরীরের সেলাই করা অংশটা উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফের অস্ত্রোপচার করতে হয়। সেখানে চিকিৎকরা আবিষ্কার করেন আমার তলপেটে একটা বড় অংশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। চিকিৎসকরা এর পরে চেষ্টা করতে থাকেন যাতে জমাট বাঁধা রক্তটা আমার ফুসফুসে না পৌঁছয়। শেষ পর্যন্ত যখন আমি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরলাম, তত দিনে মাতৃত্বের ছ’সপ্তাহ আমার বিছানাতেই অসুস্থতা কাটাতে চলে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: আইসিসি রেটিংয়ে ইতিহাস তৈরি করেও পিছিয়ে বিরাট
এটাই অবশ্য প্রথম নয়, এর আগে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সমস্যায় সেরিনা আগেও ভুগেছেন। ২০১১-এ তিনি প্রায় এক বছর অসুস্থ ছিলেন। মিউনিখের একটি রেস্তোরাঁয় কাচে পা কেটে যাওয়ার পরে ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’-এর সমস্যার জন্য।
সেরিনা ধন্যবাদ দিয়েছেন তাঁর চিকিৎসা যেখানে হয় সেই হাসপাতালকে। বলেছেন, ‘‘যে ভাবে পেশাদারি দক্ষতায় হাসপাতালের সবাই সাহায্য করেছেন, সেটা না থাকলে আজ আমি এই জায়গায় থাকতাম না।’’ পাশাপাশি তিনি আর্জি জানিয়েছেন বিশ্ব জুড়ে গর্ভবতী মহিলারা যাতে সুস্থ ভাবে শিশুদের জন্ম দিতে পারেন, তাঁর জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার।
প্রাক্তন বিশ্বসেরা মাতৃত্বের দায়িত্ব সামলানোর পরে তাঁর কোর্টে সেই পুরনো দাপট দেখার অপেক্ষায় এখন তাঁর ভক্তরা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে তিনি দিদি ভিনাসের সঙ্গে ফেড কাপে ডাবলস ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন। সেখানে তাঁরা নেদারল্যান্ডসের জুটির কাছে হেরে যান। কোর্টে ফেরার লড়াইয়ে এই ধাক্কা সামলে সেরিনা কত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন, এখন সেটাই দেখার।