এজবাস্টনে মাত্র তিন রানে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা হারলেও ওয়ান ডে সিরিজ জেতাটা স্বস্তি দেবে ভারতকে। টেস্ট ম্যাচে কুক অ্যান্ড কোম্পানির হাতে দুরমুশ হলেও ওয়ান ডে-তে ভারতকে দেখে পুরো অন্য দল মনে হয়েছে। এই ফর্ম্যাটে ব্যাটিংটা দুর্দান্ত হওয়াই আসল ফারাক গড়ে দেয়। মনে করে দেখুন, বিদেশের মাঠে আমরা যখনই বড় রান তুলেছি, তখনই ভাল খেলেছি। ভারতকে যদি বিদেশের মাটিতে ফের ভাল করতে হয়, তা হলে কিন্তু ব্যাটসম্যানদের এটা মাথায় রেখে করে দেখাতে হবে।
আর ক’মাসের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন একটা সিরিজ। তার আগে এই টেস্ট সিরিজের কাটাছেঁড়া সেরে ফেলতে হবে ভারতীয় নির্বাচকদের। ভারতীয় টিমের কিন্তু নিজেদের টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে প্রচুর আত্মসমীক্ষা দরকার। ২০১১-র পর শেষ পাঁচটা বিদেশ সফরে ১৩টা টেস্ট হেরেছি আমরা। একটা প্রথম সারির টেস্ট খেলিয়ে দেশের এই পারফরম্যান্স কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না! বিদেশে ব্যর্থতার এই সমস্যা সমাধান করতে না পারলে কিন্তু সামনের অস্ট্রেলিয়া সফরটা খুব কঠিন আর খুব লম্বা হয়ে উঠবে!
অজিঙ্ক রাহানে গত দু’মাসে ভারতের সেরা প্লেয়ার। প্রতি ম্যাচে উন্নতি করেছে ছেলেটা। ওর কাছ থেকে শক্তি নিচ্ছে বাকি টিম। রাহানে এমনিতে চুপচাপ, পুরনো ঘরানার ক্রিকেটারদের মতো। নিজেদের জাহির করা, হুল্লোড়বাজ আজকের প্রজন্মের মতো নয়। বরং ওদের পাশে ঠান্ডা মাথার রাহানে থাকায় ভারতীয় দলে ভারসাম্যটা বজায় থাকছে।
ব্রিটিশ ক্রিকেটপ্রেমীরা এ বার বিরাট কোহলির খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হল। গোটা সিরিজে ও শুধু ফর্ম হাতড়ে বেড়িয়েছে। বিরাটের এই ব্যর্থতা হতাশ করলেও এটা সাময়িক। ও জাত ক্রিকেটার। খারপ সময়টা খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠবে। তবে ওকে এই সিরিজটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যাতে দুর্বলতার জায়গাগুলো মেরামত করে নিয়ে আরও দাপুটে ক্রিকেটার হয়ে ফিরে আসতে পারে। যেমন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ওর দুর্বলতা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া মন দিয়ে নোট করে নিয়েছে। তাই অফ স্টাম্পের বাইরের বল সামলানো নিয়ে ওকে খাটতে হবে।
সিরিজে ভারতীয় বোলিং কিছু কিছু জায়গায় ভাল হয়েছে। তবে মনে রাখা জরুরি, এই বোলিং আক্রমণটার অভিজ্ঞতা কম। উন্নতি করার জন্য এই বোলারদের নিয়মিত পরামর্শ দরকার। ওদের রাস্তা দেখানোর লোক চাই। শামি যেমন। এক দিনের সিরিজে দারুণ বল করল, বিশেষ করে শেষের ওভারগুলোয়। কিন্তু টেস্ট বোলিংয়ের জন্য ওকে এখনও অনেক তৈরি হতে হবে। বিদেশের মাঠে পাঁচ দিনের ক্রিকেটে বোলিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রতিভা শামির আছে। কিন্তু ওকে খাটতে হবে ফিটনেস নিয়ে। দিনে কুড়ি ওভার বল করার দম আমদানি করতে হবে। এই সিরিজেই যেমন, টেস্টের তুলনায় এক দিনের ম্যাচে ওর রান আপ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিল। আমি বলব, শামি এ বার একজন প্রথম সারির টেস্ট বোলার হয়ে উঠতে খাটা শুরু করুক।
দিনের শেষে লোকে কিন্তু টেস্ট ম্যাচের পারফরম্যান্সটাই মনে রাখে!