India

বোতল রেখে ইয়র্কার-মহড়ার সুফল, বলছেন শার্দূলের গুরু

চোট সারিয়ে ভারতীয় দলে ফিরে সেই শার্দূলই এখন চমক দেখাচ্ছেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৬
Share:

মরিয়া: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নজরে শার্দূল। ফাইল চিত্র

গত আইপিএল ফাইনালে লাসিথ মালিঙ্গার শেষ বলে তিনি দু’রান নিতে না পারায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি চেন্নাই সুপার কিংস। তারও এক বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে মাত্র ১০ বল করেই কুঁচকির চোটে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

মুম্বইয়ের সেই ক্রিকেটার শার্দূল ঠাকুর এই দু’বারই বাড়ি ফিরে তাঁর ছোটবেলার কোচ দীনেশ লাডের কাছে ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়!

চোট সারিয়ে ভারতীয় দলে ফিরে সেই শার্দূলই এখন চমক দেখাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ খেলায় ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন তিন সপ্তাহ আগে। শুক্রবার ওয়েলিংটনে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও সেরা তিনিই। জয়ের জন্য শেষ ওভারে নিউজ়িল্যান্ডের দরকার ছিল সাত রান। শার্দূল প্রথম ও পঞ্চম বলে রস টেলর ও ড্যারিল মিচেলকে ফিরিয়ে নিউজ়িল্যান্ডকে বড় ধাক্কা দেন। শার্দূলের সেই ওভারে ছয় রান ওঠায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। ব্যাট হাতে ১৫ বলে ঝটিকা ২০ রান। তার পরে ৩৩ রানে দু’উইকেট নিয়ে টিম সাউদিদের বিরুদ্ধে ৪-০ করায় বড় অবদান রয়েছে এই মুম্বইকর অলরাউন্ডারের।

Advertisement

আরও পড়ুন: ৫-০ করার লক্ষ্য নিয়ে নামছেন কোহালিরা

শনিবার দুপুরে শার্দূলের সেই ‘লাড স্যর’-কে যখন ফোনে ধরা হল, তখন তিনি বোরিভালির স্বামী বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক স্কুলে ছাত্রদের ক্রিকেট শেখাচ্ছেন। ছাত্রের খেলা দেখেছেন? যা শুনে দীনেশ ফোনে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কী রকম দেখলেন? ও ফিট থাকলে এ ভাবেই আরও ম্যাচ জেতাবে। এই ধমাকা ক্রিকেট দেখেই ওকে এই স্কুলে এনেছিলাম।’’

কী হয়েছিল? জানতে চাইলে দীনেশ বলেন, ‘‘১৫ বছর আগে প্রথম আমাদের স্কুলের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ৪০ বলে ৭০ রান ও বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে একাই হারিয়ে দিয়েছিল শার্দূল।’’ যোগ করেন, ‘‘মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি রোজ তিন ঘণ্টা ট্রেনে চেপে পালঘর থেকে মুম্বই আসত। অভিভাবকদের বাড়ি ভাড়া করার অর্থ ছিল না। তাই নিজের টাকাতেই ওকে এই স্কুলে ভর্তি করে আমার বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলাম দশম শ্রেণি পর্যন্ত।’’ দীনেশ বলে চলেন, ‘‘অনেকে বলতেন, পাগলামি করছি। আমি বলতাম, এই ছেলে একদিন ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা হবে। আমাদের স্কুলে ভর্তির বছরে হ্যারিস শিল্ডের একটি ম্যাচে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা মেরে ১৭৮ রান করেছিল ও। সে দিন পাঁচ উইকেটও নেয় শার্দূল। তার পরেই খবরের শিরোনামে চলে আসে ও। শার্দূলের এই পারফরম্যান্স গত দেড় দশক ধরেই দেখছি। এ বার গোটা ভারতের ওকে দেখার পালা।’’

আরও পড়ুন:বাবার স্বপ্নপূরণ, টেনিসের নতুন রানি কেনিন

উঠে আসে শার্দূলের খারাপ সময়ের প্রসঙ্গও। যে সম্পর্কে দীনেশ বলেন, ‘‘চোটের কারণে এক সময়ে ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সফল ক্রিকেটারদের জীবনী পড়তে বলতাম। একদিন বলেছিলাম, সুনীল গাওস্করও ১৯৭১ সালের সেই স্মরণীয় সিরিজের পরে দু’বছর কোনও শতরান পাননি। সেগুলো মন দিয়ে শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে যেত শার্দূলের। বুঝতাম কাজ হচ্ছে।’’ ফের যোগ করেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম, গলি ক্রিকেট নয়। দেশের হয়ে খেলছিস। ধৈর্য ধরে নেটে বেশি সময় দে। আর স্লোয়ার, ইয়র্কারগুলো নিখুঁত কর। তার জন্য ও বাড়িতে থাকলে উইকেটের বদলে একটা বোতল রেখে ইয়র্কার দেওয়ার অনুশীলন করাতাম। তা কাজে লেগেছে ওর। শুক্রবার নিউজ়িল্যান্ড থেকেই ফোন করে শার্দূল নিজেও বলল স্যর এ বার মনে হচ্ছে, সেই ছন্দটা ফিরে পেয়েছি।’’

তা হলে, কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে শার্দূলের জায়গা পাকা? ‘লাড স্যর’ বলেন, ‘‘অক্টোবরের আগে অনেক রাস্তা ওকে হাঁটতে হবে। তবে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্যই অন্য অলরাউন্ডারদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে শার্দূলই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন