প্রথম দিনেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে ‘গব্বর’-এর হুঙ্কার

হেরাথ আতঙ্ক মুছে প্রত্যাবর্তন ধবনের

অথচ মুরলী বিজয় চোটের জন্য সরে না গেলে ধবনের হয়তো শ্রীলঙ্কায় আসাই হতো না। প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা হওয়া দলে ধবন ছিলেনই না, বিজয় ছিলেন। রবি শাস্ত্রীর কোচ হিসেবে প্রত্যাবর্তনও তাঁর মনোবল বাড়িয়ে দিয়ে থাকবে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

গল শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫১
Share:

বিধ্বংসী: গলে শ্রীলঙ্কার বোলারদের শাসন করল শিখর ধবনের ব্যাট। এল পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি। এএফপি

রঙ্গনা হেরাথদের পয়মন্ত মাঠে বুধবার সবচেয়ে এনার্জিসম্পন্ন শ্রীলঙ্কান কে ছিলেন? না, ৮০ বছরের এক ‘তরুণ’। কিন্তু হেরাথদের দুর্ভাগ্য, তিনি ছিলেন বাউন্ডারির বাইরে।

Advertisement

টি-টোয়েন্টি বা আইপিএলের জন্মেরও অনেক আগে তিনি ক্রিকেটে এনে ফেলেছিলেন ‘চিয়ারলিডার’ শব্দটি— পার্সি অভয়শেখর। ৮০ বছর বয়সে স্লথ হয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখনও ‘বেবি ডল সোনে দি’-সহ জনপ্রিয় সব বলিউড গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে অবিরাম নেচে গেলেন। এই চনমনে মনোভাব মাঠের মধ্যে পার্সির দল দেখাতে পারেনি।

সেটা দেখালেন শিখর ধবন-রা। মাত্র এক রানের জন্য এক দিনে ৪০০ রান ওঠা আঠকে গেল। এর আগে মাত্র এক বারই টেস্ট ম্যাচে এক দিনে ৪০০ রান তুলেছে কোনও ভারতীয় দল। ২০০৯ ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের ব্রেবোর্নে বীরেন্দ্র সহবাগের ২৯৩-এর দাপটে ভারত এক দিনে তোলে ৪৭০। তখনও প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেটা ছিল দেশের মাটিতে। বিদেশে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রান তোলার ক্ষেত্রে এটাই রেকর্ড।

Advertisement

আরও পড়ুন:শাস্ত্রীয় মত, মোহালির পর এটাই সেরা

সাফল্য: সেঞ্চুরি পেলেন চেতেশ্বর পূজারাও। রয়টার্স

সহবাগ সেই ইনিংসে করেছিলেন ২৫৪ বলে ২৯৩। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৫.৩৫। মাত্র ৭ রানের জন্য তৃতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি মিস করে ডন ব্র্যাডম্যানকে টপকে সব চেয়ে বেশি ট্রিপল সেঞ্চুরি করা আটকে যায় সহবাগের। দিল্লিরই ছেলে ধবনের এ দিন স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৩। ইনিংসে ৩১টি বাউন্ডারির প্রত্যেকটিতে শাসন করার ছবি। মাত্র ১০ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করা হল না। কিন্তু তাঁর ১৯০-এর মধ্যে ১২৬ এসেছে দ্বিতীয় সেশন থেকে লাঞ্চ এবং চায়ের মধ্যবর্তী দু’ঘণ্টা সময়ে। যা অবিশ্বাস্য! শ্রীলঙ্কান পেসাররা তাঁকে শর্ট বলে বিব্রত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা বাউন্সার দিয়ে গেলেন, ধবন মনের সুখে পুল-হুক মেরে গেলেন।

অথচ মুরলী বিজয় চোটের জন্য সরে না গেলে ধবনের হয়তো শ্রীলঙ্কায় আসাই হতো না। প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা হওয়া দলে ধবন ছিলেনই না, বিজয় ছিলেন। রবি শাস্ত্রীর কোচ হিসেবে প্রত্যাবর্তনও তাঁর মনোবল বাড়িয়ে দিয়ে থাকবে। এর আগে ডিরেক্টর থাকার সময় শাস্ত্রী দারুণ ভাবে সমর্থন করে গিয়েছেন ধবনকে। দীর্ঘ সময় ধরে রানের বাইরে থাকলেও তাঁকে খেলিয়ে গিয়েছেন। মিডিয়ার তীব্র সমালোচনার মধ্যেও বার বার অনড় থেকে বলেছেন, ধবন রানে ফিরবেই। কুম্বলে জমানায় টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত ধবন সেই সমর্থন পাননি। শোনা গেল, মুম্বই থেকে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে বেরোনোর জন্য যখন টিম বাসে উঠছেন শাস্ত্রী, গোটা বাস উল্লাস করে ওঠে। আর সেই গর্জনে সব চেয়ে জোরালো গলা ছিল ধবনের।

যদিও ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন ধবন। তিনি যখন ৩১ রানে, পেসার লাহিরু কুমারের বলে ওঠা ক্যাচ দ্বিতীয় স্লিপে ফেলে দিলেন আসেলা গুণরত্ন। শুধু ফেলে দিলে এক রকম ছিল, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কার আসেলা আঙুলের হাড়েও চিড় ধরিয়ে ফেললেন। তক্ষুনি মাঠ থেকে বের করে কলম্বোর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় তাঁকে। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। এই টেস্ট তো বটেই, পুরো সিরিজের জন্যই ছিটকে গেলেন তিনি। তার মানে ভারত যে গন্ধমাদন চাপাতে চলেছে, তার জবাব শ্রীলঙ্কাকে দিতে হবে দশজন ব্যাটসম্যান নিয়ে।

শুধু ৩৯৯ তোলাই নয়, শ্রীলঙ্কার তুরুপের তাস রঙ্গনা হেরাথকে পাল্টা আক্রমণ করে তাঁর মনোবল দুমড়ে রাখলেন ধবন-রা। হেরাথ এ দিন ২৪ ওভার বল করে ৯২ রান দিয়েও কোনও উইকেট পেলেন না। চান্ডিমলের নিউমোনিয়া হওয়ায় এই ম্যাচে অধিনায়কত্ব করছেন হেরাথ। নিজেকে উনিশতম ওভারে আনলেন। এত দীর্ঘ সময় কেন অপেক্ষা করলেন, সেটাও রহস্য। তখনই মনে হচ্ছিল, পয়মন্ত গলে যতই ১৬ টেস্টে ৯৩ উইকেট থাকুক হেরাথের, আজ কিছুটা হলেও চাপে। বাকি সিরিজেও যদি গলের এই ধবন-ঝড়ের প্রভাব দেখা যায়, অবাক হওয়ার থাকবে না।

স্কোরকার্ড

ভারত (প্রথম ইনিংস) ৩৯৯-৩(৯০)

ভারত

শিখর ধবন ক ম্যাথিউজ বো প্রদীপ ১৯০

অভিনব ক ডিকওয়েলা বো প্রদীপ ১২

চেতেশ্বর পূজারা ব্যাটিং ১৪৪

কোহালি ক ডিকওয়েলা বো প্রদীপ ৩

অজিঙ্ক রাহানে ব্যাটিং ৩৯

অতিরিক্ত ১১

মোট ৩৯৯-৩

পতন: ২৭-১ (অভিনব, ৭.৩), ২৮০-২ (শিখর, ৫৪.১), ২৮৬-৩ (কোহালি, ৫৬.৪)।

বোলিং: নুয়ান প্রদীপ ১৮-১-৬৪-৩, লাহিরু কুমার ১৬-০-৯৫-০, দিলরুয়ান পেরেরা ২৫-১-১০৩-০, রঙ্গনা হেরাথ ২৪-৪-৯২-০, দনুস্কা গুণতিলক ৭-০-৪১-০।

অভিনব মুকুন্দ এবং বিরাট কোহালি ছাড়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা সবাই রান করলেন। ধবন এবং পূজারা মিলে ২৫৩ রান যোগ করলেন। ধবন ফিরে গেলেও চেতেশ্বর পূজারা ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছেন। পূজারা ক্রিজের মধ্যে সেই পূজারি। একটাও আলগা শট খেলবেন না। দিনের শেষে ২৪৭ বলে ১৪৪ নট আউট। কোহালিকে শ্রীলঙ্কা পেল রিভিউ চেয়ে। মাঠের আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। টিভি আম্পায়ারও অনেকক্ষণ সময় নিলেন। রিপ্লে দেখেও মনে হচ্ছিল, খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। আর রান না পাওয়া কোহালিকে দেখা গেল দিনের খেলা শেষ হতেই স্প্রিন্ট দিচ্ছেন কয়েক জন সতীর্থের সঙ্গে।

দেখে মনে হল, নিজেকে নিজে শাস্তি দিলেন রান না পাওয়ার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন