ইন্দ্রজিৎ সিংহ
রিওগামী ভারতীয় দলের উপর ডোপ কলঙ্কের ছায়া আরও বড় হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বিতর্ক।
কুস্তির নরসিংহ যাদবের ধরা পড়ার পর অলিম্পিক্সের দশ দিন আগে ডোপ টেস্টে ধরা পড়লেন আর এক ক্রীড়াবিদ— শটপাটার ইন্দ্রজিৎ সিংহ।
ইন্দ্রজিতের মূত্রের ‘এ’ স্যাম্পেলে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে নাডা। জাতীয় ডোপিং বিরোধী সংস্থা পঞ্জাবের অ্যাথলিটকে জানিয়ে দিয়েছে, তিনি যদি চান সাত দিনের মধ্যে ‘বি’ স্যাম্পেল দিতে পারেন পরীক্ষার জন্য। নাডা-র যা নিয়ম তাতে সেই পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে না পারলে রিওতে এই শটপাটারের যাওয়া তো হবেই না, উল্টে চার বছরের জন্য নির্বাসিত হতে হবে ইন্দ্রজিৎ-কে।
নরসিংহের মতো ইন্দ্রজিৎকেও ধরা হচ্ছিল অলিম্পিক্স পদক-সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদ হিসেবে। ডোপিংয়ে ধরা পড়ার পর তিনিও অবশ্য চক্রান্তের নানা তত্ত্ব খাড়া করেছেন। হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও। বলেছেন, ‘‘আমি প্রতিবাদী বলেই আমার রিও যাওয়া আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর থেকে অন্তত পঞ্চাশ বার আমি ডোপ পরীক্ষা দিয়েছি। কোনও সমস্যা হয়নি। অ্যাথলিটদের যে ভাবে সমস্যায় ফেলা হয় তা নিয়ে আমি বরাবর সরব হয়েছি। আরও হব। এ ভাবে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না।’’ ২০১৪ এশিয়াডে ব্রোঞ্জ পদকজয়ীর আরও দাবি, ‘‘আমার মূত্রের নমুনা পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের কাছে ছিল তো ওই নমুনা। তাঁরাই বলতে পারবেন কী হয়েছিল! কিন্তু আমি বলছি, আমি চক্রান্তের শিকার।’’
ইন্দ্রজিৎ যখন এ সব বলছেন তখন নাডা কর্তারাও থেমে নেই। তাঁরাও পাল্টা বলতে শুরু করেছেন। জানাচ্ছেন, জানুয়ারি থেকে ডোপ পরীক্ষা এড়িয়ে যাচ্ছেন ইন্দ্রজিৎ। কোথায় অনুশীলন করছেন তাও জানাতেন না। ঘটনা হচ্ছে, এই শটপাটার জাতীয় শিবিরে অনুশীলন করেন না। ব্যক্তিগত কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। এ বছরের গোড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেনিং করতে গিয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। রিওগামী ভারতের ৩৬ জনের অ্যাথলেটিক্স দলের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ-ই প্রথম, যিনি এ বারের অলিম্পিক্স যোগ্যতামান পেরিয়েছিলেন। তবে তার পর থেকে আর শিবিরে যাননি।
তাঁর মূত্রের নমুনা পরীক্ষা বিকৃত করা হয়েছে বলে ইন্দ্রজিৎ দাবি তোলার পর নাডা-র ডিজি নবীন অগ্রবাল আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘ও তো নরসিংহের মতো অ্যাপিল কমিটির কাছে আবেদন করতেই পারে। সে সুযোগও রয়েছে। সেই কমিটি সব দিক বিবেচনা করে যা বলার বলবে। আমি কেবল ওর ডোপ পরীক্ষার কাগজপত্রে যা আছে তা নিয়েই বলছি।’’ সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘জুনের দু’তারিখ ইন্দ্রজিতের যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু আবার ২৫ জুন যে নমুনা নেওয়া হয়েছিল সেটা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওর রক্তের নমুনায় সমস্যা নেই। তবে মূত্রে নিষিদ্ধ ওষুধের প্রমাণ আছে।’’
নরসিংহের মতো ইন্দ্রজিৎ অবশ্য পাশে পাননি জাতীয় ফেডারেশনকে। কারণ তিনি নানা বিষয় নিয়মিত আক্রমণ করেন দেশের অ্যাথলেটিক্স কর্তাদের। হয়তো সে কারণে ইন্দ্রজিৎ সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর। বলেছেন, ‘মোদীজি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুন।’’ যদিও মোদী মন্ত্রীসভার ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল বলে দিয়েছেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। এটা আমাদের হাতে নেই। আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’
নরসিংহের মতো ইন্দ্রজিতেরও রিও যাত্রা তাই আটকে থাকছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওরা এখন সাময়িক নির্বাসনে থাকবে। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্ট পাওয়ার পরে বলতে পারব ওরা রিও যেতে পারবে কি না।’’ তবে এ দিন আবার নরসিংহের হয়ে সওয়াল করেছেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগীর যোগেশ্বর দত্ত। বলে দিয়েছেন, ‘‘নরসিংহের ব্যাপারটা তদন্ত হওয়া দরকার। ও এ রকম করতে পারে না।’’ তবে যে যাই বলুন, নিট ফল— আপাতত ১১৮ জনের দল ভারত থেকে রিও যাচ্ছে।
কিন্তু প্রতিদিন যে ভাবে ডোপ কেলেঙ্কারি সামনে আসছে তাতে বিশ্ব খেলাধুলোর সর্বোত্তম মঞ্চে ভারতের মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে!