ফাইল চিত্র।
পাঁচ ওভারে কুড়ি রান দরকার তখন। আইপিএল যুগে কীই বা কঠিন কাজ?
কিন্তু মারার বল পেলে ছাড়বেনই বা কেন? তিনি তো শ্রেয়স আইয়ার। যিনি রঞ্জি ট্রফিতেও ৭৩-এর গড়ে রান করেন। প্রথম আইপিএলেই ১৪ ম্যাচে ৪৩৯ রান করেছিলেন যিনি।
পরপর চার বলে চারটে বাউন্ডারি হাঁকান শ্রেয়স। পরের ওভারে অধিনায়ক মণীশ পাণ্ডে তিনটে ডট বল খেলেন। চার নম্বরটায় এক রান নিয়ে শ্রেয়সকে ব্যাট করতে দেন। আর বোলারের রক্ষে আছে? ফের বাউন্ডারি। পাঁচ বলে পাঁচটা।
দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’-কে ফাইনালে সাত উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত ‘এ’। বিপক্ষের ২৬৭-৭-এর পাল্টা ব্যাট করে তিন ওভার এক বল বাকি থাকতেই জয়ী রাহুল দ্রাবিড়ের দল।
দলকে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করার পরে মঙ্গলবার রাতে প্রিটোরিয়ায় টিম হোটেলে ফেরার পথে টিম বাস থেকেই ফোনে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বললেন, ‘‘ওদের বোলাররা আমাকে বারবার লোভনীয় বল দিচ্ছিল মারার জন্য। যাতে আমি মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাই! কিন্তু সেঞ্চুরিটা হওয়ার পরই বুঝে গিয়েছিলাম, দিনটা আমার। আমরাই চ্যাম্পিয়ন। ব্যাটে-বলে ভাল হচ্ছিল। তাই বেশি না ভেবেচিন্তেই দিই চালিয়ে। পরপর চারটে বলেই। শেষেরটাতেও। ওই সময় আর কিছু মাথায় আসছিল না।’’
আরও পড়ুন: বিরাটের সঙ্গে তুলনা ‘না-পসন্দ’ বাবরের
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আগের দুই ম্যাচের একটাতেও দশ রানেও পৌঁছতে পারেননি। অথচ মুম্বইয়ের এই ২২ বছর বয়সি তরুণ ছয় হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিও করেন এ দিন। কী করে হল এমন ভোলবদল? নিজের ব্যর্থতায় রাগে ফুঁসছিলেন। বিপক্ষের প্রধান স্ট্রাইক বোলার ডেন প্যাটারসনের বল সোজা উড়িয়ে দেন একেবারে মাঠের বাইরে। আর তাতেই তিন অঙ্কের রানে পৌঁছে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন শ্রেয়স।
তবে সিরিজ জিতেও সে রকম জোরদার সেলিব্রেশন হয়নি ভারতীয় শিবিরে। রাহুল দ্রাবিড়ের দলের ছেলেরা তাঁর মতোই। সংযত। শ্রেয়সই বললেন, ‘‘না, তেমন উল্লাস করিনি আমরা ড্রেসিংরুমে। হোটেলে পৌঁছে একটা ছোটখাটো উৎসব হবে হয়তো। তার বেশি কিছু নয়। গত এক সপ্তাহে পাঁচটা ম্যাচ খেলেছি। সামনে আবার দুটো চার দিনের ম্যাচও আছে। বিশ্রাম দরকার।’’
রঞ্জি ট্রফির ফাইনালেও (২০১৬) সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু এটা অন্যরকম, নিজেই সে কথা জানান শ্রেয়স। বলেন, ‘‘রান না পেয়ে ছটফট করছিলাম। বড় রান পেয়ে অবশেষে স্বস্তি পেলাম। রঞ্জি ফাইনাল ঘরের মাঠে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে বড় রান করা যে মোটেই সোজা নয়, সেটা এ বার বুঝলাম।’’
এখানেই তাঁর ছাত্রের কৃতিত্ব বেশি বলে মনে করেন কোচ প্রবীণ আমরে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই (ডারবানে) যাঁর অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি, সেই আমরে মুম্বই থেকে মঙ্গলবার রাতে ফোনে বলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই সময় চলে যায়। এই সমস্যাই বোধহয় হচ্ছিল ওর। কিন্তু জানতাম, রানে আসতে শ্রেয়সের একটা মাত্র ইনিংস লাগবে।’’
তিন দিন আগে শ্রেয়স তাঁকে ফোনও করেছিলেন বলে জানান আমরে। বলেন, ‘‘ওকে বললাম, কন্ডিশনটা ঠিকঠাক বুঝে খেল, তা হলেই রান পাবি। আর যেখানে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো মেন্টর রয়েছে, সেখানে চিন্তার কী আছে? শ্রেয়স মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী। ওকে শুধু পথটা বাতলে দিতে হয়। এই কাজটা রাহুলের চেয়ে ভাল আর কে করতে পারে?’’
দিল্লি ডেয়ারডেভিলসেও শ্রেয়স ও রাহুল একসঙ্গে কাজ করেছেন। তাই দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াটাও ভালই। আমরের মতো প্রায় একই কথা বলছেন শ্রেয়সও, ‘‘রাহুল স্যরের সঙ্গে এই ব্যাপারে আগের দিন অনেকক্ষণ কথা হয় আমার। উনি বারবার মানসিক দিকটায় জোর দিতে বলেন। কেন বারবার ঠিকঠাক শুরু করেও বড় রানে কনভার্ট করতে পারছি না, কী সমস্যা হচ্ছে, তা বুঝে নেন। কী ভাবে সমস্যা দূর করতে হবে, আমাকে তার পরে তা বুঝিয়ে দেন। আর তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হল। শুধু আমি না, দলের সবাই রাহুল স্যরের প্রভাবে মুগ্ধ। ওঁর মতো একজন কিংবদন্তি মেন্টর দলে থাকলে আমাদের মতো ব্যাটসম্যানদের কি লাভই না হয়!’’