বাগান-জবাব। বৃহস্পতিবার সনি-গ্লেন আলোচনা। ছবি: উৎপল সরকার
সাড়ে চার মাস আগে ডু ডংয়ের জোড়া ফ্রিকিকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সঞ্জয় সেনের বাগান। চার গোলে ছারখার হয়ে গিয়েছিল।
কলকাতা লিগ, আইএসএল পেরিয়ে আই লিগের দু’টো ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। তারতম্য ঘটেছে টিম-শক্তির। তাতে কী? বাগানকে যে এখনও আতঙ্কিত করে রেখেছে কোরীয়-ম্যাজিক!
না হলে কেন সনি নর্ডি বসে পড়বেন ডংয়ের ফ্রিকিক জাদুর বিশ্লেষণে। ইউটিউবে দেখা সেই ডার্বির অভিজ্ঞতায় কোচকে বলবেন, ‘‘প্রথম গোলটার সময় দেওয়ালটা ঠিক ছিল না। ওই গোল খাওয়াটা উচিত হয়নি।’’
আই লিগ জয়ী কোচও তো প্রতিদিন নিয়ম করে ইস্টবেঙ্গল মিডিওর ভয়ঙ্কর ফ্রিকিক রোখার পাঠ দিচ্ছেন লুসিয়ানো, কিংশুক, প্রীতম কোটালদের।
ধুন্ধুমার ম্যাচ শুরুর আটচল্লিশ ঘন্টা আগেও সনি-গ্লেনদের মহল্লায় সেই ছবি বদলায়নি। ফ্রিকিক রোখার জন্য মানবপ্রাচীর কেমন হবে সেটা এ দিন সকালের অনুশীলনে হাতে-কলমে বোঝাচ্ছিলেন সঞ্জয়।
তবে ডং-ভীতি যাতে গ্রাস না করে সে জন্য প্রকাশ্যে অবশ্য বাগান কোচ কিছু বলতে চাইছেন না। ‘‘শুধু ডং নিয়ে নয়, সব ম্যাচের আগেই এটা আমরা করি। এটা অনুশীলনের একটা অঙ্গ। কেউ যদি ভাবে সেটা নির্দিষ্ট কারও জন্য তা হলে ভুল ভাবছে।’’ তবে সঞ্জয় স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বলছেন, ‘‘সনি ভিডিও দেখে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমাকে বলেছে ডংয়ের প্রথম ফ্রি-কিকটা থেকে গোল খাওয়া উচিত হয়নি মোহনবাগানের।’’ এমন ভাবে ডংয়ের বিষয়টা সামনে আনলেন বাগান-কোচ যে, মনে হচ্ছিল, এ ব্যাপারে হাইতি স্ট্রাইকারও তাঁর পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছেন।
কী ভাবে সঞ্জয় তাঁর রক্ষণকে পাঠ দিচ্ছেন তার কিছুটা মালুম পাওয়া যাচ্ছে অনুশীলনে। মানব-দেওয়াল সাজিয়ে কম্বিনেশন তৈরি করলেন। ছোট থেকে দীর্ঘকায় ফুটবলারদের সিঁড়ির মতো সাজিয়ে। পাশাপাশি সঞ্জয় নিজের ফুটবলারদেরও ফ্রি-কিক প্র্যাকটিস করালেন। নিজেই দেওয়ালের ‘লাস্ট ম্যান’ হয়ে দাঁড়িয়ে শৌভিক, কর্নেলদের ফ্রিকিক নিতে বললেন। আবার বারপোস্ট চ্যালেঞ্জও রাখলেন। অনুশীলনের পর বাগান কোচ বলছিলেন, ‘‘অন্য দলের ফুটবলার নিয়ে কথা বলতে চাই না। কিন্তু আজ আমিও নিজের ফুটবলারদের ফ্রি-কিক প্র্যাকটিস করালাম। ম্যাচের আগে সেট পিস কম্বিনেশনও দেখে নেব।’’
ডংয়ের ফ্রি কিক আটকাতে মরিয়া বাগান অবশ্য চিন্তিত নিজেদের প্রথম দু’ম্যাচে গোল পাওয়া বলবন্ত সিংহকে নিয়েও। এ দিনও অনুশীলন করতে পারেননি শেষ আই লিগ ডার্বিতে গোল করা বলবন্ত। দলের প্রথম পছন্দ স্ট্রাইকারের এই অবস্থা দেখে চিন্তিত সঞ্জয়। তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বলবন্তের ফিটনেসের জন্য শেষ অবধি অপেক্ষা করবেন। ‘‘বলবন্ত আমার দলের প্রথম স্ট্রাইকার। ওর পায়ে এখনও ব্যথা। কিন্তু আমি অপেক্ষা করব ওর জন্য। প্রথম দল জমা দেওয়ার আগেও যদি ও বলে আমি ফিট, তা হলেও ও খেলবে।’’ বলবন্তের পরিবর্ত হিসেবে এ দিন প্র্যাকটিস ম্যাচে জেজেকে অবশ্য দেখে নেন কোচ। সঞ্জয় বলেন, ‘‘জেজে খুব ভাল প্লেয়ার। কিন্তু ও জানে আমার প্রথম স্ট্রাইকার বলবন্ত। তবে বলবন্ত না খেলতে পারলে জেজেই খেলবে।’’
কলকাতা লিগের ডার্বিতে বিশ্রী হারের পরেও বাগানে টিকিটের লম্বা লাইন। সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যেন ধরে নিয়েছেন আই লিগের ডার্বি তাঁদের জেতাবেন সনি-কর্নেলরা। শৌভিক থেকে সনি, প্রণয় থেকে কাতসুমি, ক্লাব ছাড়ার সময় প্রত্যেক ফুটবলারকে ঘিরে ধরে কাতর আবেদন উঠছে— ‘‘কলকাতা ডার্বির বদলা নিতেই হবে।’’ প্রকাশ্যে না হোক, ডংয়ের সেই ফ্রিকিক যে এখনও মনে মনে ভোলেনি বাগান-জনতা।
যে ভাবে খুলতে পারে রাস্তা
পেনিট্রেটিভ জোনে পায়ে বেশি বল রাখার চেষ্টা করেন ডং-র্যান্টিরা। বিপক্ষকে ফাঁদে ফেলার একটা লাল-হলুদ টোপ। ফাউল করলে বক্সের আশেপাশে ফ্রি-কিক পাওয়া যায়। আর তখনই বেরিয়ে আসে ডংয়ের বিষাক্ত ফ্রি-কিক। বাঁক খাওয়ানো যে ইনসুইঙ্গার গোলকিপারের পক্ষে ধরা কঠিন হয়ে যায়। আবার গোলকিপারের হাত থেকে বল বেরিয়ে গেলেই ছুটে আসেন র্যান্টি।
বাগান আক্রমণে দুই উইং দিয়ে উঠে আসেন সনি এবং কাতসুমি। উইংয়ে খেলাটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন দুই সেন্ট্রাল মিডিও সৌভিক ঘোষ ও প্রণয় হালদার। বিপক্ষের দুই স্টপারের সামনে পেন্ডুলামের মতো ঘোরাফেরা করেন কর্নেল গ্লেন। গ্লেনের উদ্দেশে কখনও ক্রস ভাসিয়ে দেন সনি-কাতসুমি। কখনও বা গোলের দিকে ঢুকে এসে তাঁরা বল বাড়ান অরক্ষিত গ্লেনকে। এ ভাবেই গোল করে যান বাগানের কর্নেল।