বেঙ্গালুরু এফসি ১
মোহনবাগান ১
অপ্রতিরোধ্য সনি নর্দে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নপূরণের হাতছানি দেবজিৎ মজুমদারের সামনে। লাজং এফসি ৩-২ গোলে ডিএসকে শিবাজিয়ান্স এফসি-কে হারিয়ে দেওয়ায় মাঠে নামার আগেই শেষ চারে খেলা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগানের। নিয়মরক্ষার ম্যাচে প্রথম দলের পাঁচ সেরা অস্ত্র— ড্যারেল ডাফি, আনাস এডাথোডিকা, প্রীতম কোটাল ও বলবন্ত সিংহকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ সঞ্জয় সেন। ঝুঁকি নিতে চাননি সনি-কে খেলানোরও। কিন্তু হাইতি তারকা নিজেই রাজি হননি রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে। জোর করে মাঠে নেমে গোল করে তিনিই হার বাঁচালেন মোহনবাগানের।
দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকলেও মোহনবাগানের আর এক ত্রাতা গোলরক্ষক দেবজিৎ এত দিন ব্রাত্যই ছিলেন জাতীয় দলে। এমনকী, আই লিগের সেরা গোলরক্ষক হওয়ার পরেও তাঁর সামনে ভারতীয় দলের বন্ধ দরজা খোলেনি। অবশেষে শাপমুক্তি। এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রস্তুতির জন্য মুম্বইয়ে জাতীয় দলের শিবিরে দেবজিৎ-কে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। দু’-এক দিনের মধ্যেই সরকারি ভাবে তিনি দল ঘোষণা করবেন।
শুক্রবার বারবাটি স্টেডিয়ামে শুধু মোহনবাগান নয়, শিবাজিয়ান্সের হার মানসিক ভাবে স্বস্তি দিয়েছিল সুনীল ছেত্রীদেরও। কারণ, সেমিফাইনালে ওঠার জন্য ড্র করলেই চলত তাঁদের। তবে হারলেই নিশ্চিত ছিল বিদায়। এই পরিস্থিতিতে সুনীলের নেতৃত্বে শুরু থেকেই বেঙ্গালুরুর আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা। ১০ মিনিটে গোল করে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন বেঙ্গালুরুর মিডফিল্ডার অলউইন জর্জ। ম্যাচের পরে তা স্বীকারও করে নিয়েছেন সবুজ-মেরুন কোচ। তিনি বললেন, ‘‘আমরা জিততেই চেয়েছিলাম। কিন্তু শুরুতেই গোল খেয়ে একটু চাপে পড়ে গিয়েছিলাম।’’
সবুজ-মেরুন কোচ ফরওয়ার্ডে একা জেজে লালপেখলুয়া-কে রেখে ৪-৫-১ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন এ দিন। ফলে আক্রমণে কোনও ঝাঁঝ ছিল না মোহনবাগানের। প্রথমার্ধে মাত্র দু’বারই গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ছবিটা বদলাতে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধে। নেপথ্যে সেই সনি। যদিও ম্যাচের সেরা হলেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার রাজু গায়কোয়াড়!
ফেডারেশন কাপের তিনটি ম্যাচেই অসাধারণ ফর্মে সবুজ-মেরুন তারকা। নিজে গোল করছেন। সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন। এ দিন করলেন চার ডিফেন্ডারের নজর এড়িয়ে পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে মাটি ঘেঁষা জোরাল শটে। তার পরেই এডেন অ্যাজারের ভঙ্গিতে উৎসবে মাতলেন।
সনি বনাম সুনীল দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত জিতলেন সবুজ-মেরুন তারকাই। সুনীলকে মাঠ ছাড়তে হল হতাশা নিয়েই। ১৬ মিনিটে তাঁর অসাধারণ হেড ক্রসবারে ধাক্কা খায়। শুধু তাই নয়। সনি-র গোলের এক মিনিটের মধ্যে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। রবিবার আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে সেমিফাইনালেও তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে গেল। আর এই বিপর্যয়ের জন্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেই কাঠগড়ায় তুললেন বেঙ্গালুরু কোচ আলবের্তো রোকা। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘ফেডারেশনের কর্তারা উন্মাদ। তাই কটকের প্রচণ্ড গরমে বিকেল চারটের সময় ফুটবলারদের খেলতে বাধ্য করছেন। ওঁদের জন্যই চোট পাচ্ছে ফুটবলাররা।’’ মোহনবাগান কোচ বেঙ্গালুরু ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডার্বির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। লাল-হলুদের সহকারী কোচ এ দিন মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু ম্যাচ দেখে বেরিয়ে বললেন, ‘‘মোহনবাগান ভাল দল। কিন্তু আমরাও লড়াইয়ের জন্য তৈরি।’’ মোহনবাগান কোচের গলায় শোনা গেল হুঙ্কার, ‘‘প্রতিপক্ষ যারাই হোক, পরোয়া করি না।’’ ডার্বিকে কেন্দ্র করে কটকের আবহাওয়া আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পূর্বাভাস শুক্রবার রাতেই পাওয়া গেল!
মোহনবাগান: দেবজিৎ মদুমদার, রাজু গায়কোয়াড়, এদুয়ার্দো ফেরিরা, কিংশুক দেবনাথ, শুভাশিস বসু (প্রীতম কোটাল), কাতসুমি ইউসা, বিক্রমজিৎ সিংহ, কেন লুইস, সৌভিক চক্রবর্তী (শেহনাজ সিংহ), সনি নর্দে (প্রবীর দাস) ও জেজে লালপেখলুয়া।