টিমে আছ, স্যার বলতেই জেদ চেপে যায়

সনি বলেছিল ডার্বিটা যে করে হোক জিততে হবে

মোহনবাগান মাঠে গত তিন বছর ধরে নিয়মিত অনুশীলন করেন। কেউ এ ভাবে খোঁজ নেয়নি কখনও। তাঁকে নিয়ে রবিবার রাতের পর মিডিয়ার এ রকম হুড়োহুড়ি হবে বা কোচ অথবা সনি নর্দের মতো মহাতারকাকেও তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবেননি কখনও। দোহারা চেহারা, বুদ্বিদীপ্ত চোখ, লক্ষ্যে অবিচল সেই আজহারউদ্দিন মল্লিকের জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছে গত চব্বিশ ঘণ্টায়। বহুদিন পর এক বঙ্গসন্তানের পা থেকে ডার্বির গোল এসেছে রবিবার শিলিগুড়িতে। ডানকুনির সেই মোহনবাগান স্ট্রাইকার সোমবার সকালে একান্তে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। বললেন তাঁর স্বপ্নের কথা।মোহনবাগান মাঠে গত তিন বছর ধরে নিয়মিত অনুশীলন করেন। কেউ এ ভাবে খোঁজ নেয়নি কখনও। তাঁকে নিয়ে রবিবার রাতের পর মিডিয়ার এ রকম হুড়োহুড়ি হবে বা কোচ অথবা সনি নর্দের মতো মহাতারকাকেও তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবেননি কখনও।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:২১
Share:

নায়ক: ডার্বির পরে এখন নজরে আজহারউদ্দিন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

প্রশ্ন: সনি নর্দের সঙ্গে গত দেড় বছর একই ঘরে থেকেছেন। কী পেলেন তাঁর থেকে।

Advertisement

আজহারউদ্দিন: সনি-ই তো আমাকে প্রতিদিন গোল করার স্বপ্ন দেখিয়েছে। মোহনবাগান বাইরে খেলতে গেলে টিম হোটেলে সনির মতো ফুটবলারের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতে পারি এটাই আমার সৌভাগ্য। ও তো সারাদিন ধরে বলে যায়, আরও ভাল খেলতে হবে। আরও। নানা ভাবে উৎসাহ দেয়। গোল করতে হবে। গোল না করলে স্ট্রাইকারের কোনও দাম নেই ফুটবলে। সনি আমার ফোকাসটাই বদলে দিয়েছে। পেশাদার ফুটবলার হলেও ওকে আমি অভিভাবকের মতোই দেখি। (তারপর পা দেখিয়ে) ওর মতো এই রকম ড্রিবল যে কবে করতে পারব!

প্রশ্ন: রবিবার মাঠে নামার আগে সনি কী বলেছিলেন? সেই গোল করার কথাই?

Advertisement

আজহার: বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সনি সেটাই বলেছিল। শনিবার ডিনার করে আসার পর ঘরে এসে বলেছিল, ডার্বিটা আমাদের জিততেই হবে যে কোনও ভাবেই। খেলার সুযোগ পেলে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করো। গোল করার চেষ্টা করো। তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে, যা সবার থাকে না। সেটা কাজে লাগাও।

প্রশ্ন: কিন্তু জীবনে ডার্বির প্রথম গোলটা তা সত্ত্বেও সনিকে উৎসর্গ না করে বাবাকে করলেন কেন?

আজহার: বাবাও ঠিক সনির মতো ছোটবেলায় সব সময় বলত, স্ট্রাইকারদের গোল করে ম্যাচ জেতাতে হয়। না হলে নাম করা যায় না। গোলটা করার পর তাই বাবার কথা মনে পড়ছিল। বাবা খেলাটা দেখেছিল ডানকুিনর বাড়িতে বসে। ফোনও করেছিল ম্যাচের পর। বাবাকে তাই ডার্বির গোলটা উৎসর্গ করলাম। (তারপর হেসে) পরে ডার্বিতে যদি কখনও গোল করতে পারি তবে সনিকে উৎসর্গ করব ঠিক করে রেখেছি।

আরও পড়ুন: বিদেশি নিয়ে বিস্ফোরক মেহতাব

প্রশ্ন: শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা মাঠটা তো আপনার হাতের তালুর মতো চেনা। সাইতে যখন তিন বছর ছিলেন তখন তো এখানেই অনুশীলন করতেন। সেখানেই মহার্ঘ্য গোলটা করলেন। আলাদা কোনও অনুভূতি?

আজহার: যেখান থেকে রবিবারের ডার্বির গোলটা করেছি, সেখান থেকে আগেও অনেক গোল করেছি সাইতে অনুশীলন ম্যাচ খেলার সময় বা প্র্যাকটিস করার সময়। অনেক অনেক গোল। তিন বছর মোহনবাগানে থাকলেও কখনও ডার্বি খেলিনি। যখন সঞ্জয় স্যার বললেন তুমি টিমে আছো, তুমি খেলবে, তখন একটা জেদ চেপে গিয়েছিল কিছু একটা করতেই হবে আজ। আসলে এখানেই তো আমার বেড়ে ওঠা। এখানকার স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাস করেছি। সেখানেই একটা দামি গোল করতে পেরে আনন্দটা একটু বেশিই হচ্ছে।

প্রশ্ন: হোটেলে ফিরে সতীর্থরা বা সনি কিছু বললেন আপনাকে?

আজহার: না। যা বলার ওরা মাঠে বা খেলার পর ড্রেসিংরুমে বলেছে। সনি-ডাফিরা তো মাঠেই গোলের পর আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আমরা সবাই ক্লান্ত ছিলাম। হোটেলে এসে কোচ সবাইকে ডিনার করে ঘরে চলে যেতে বলেছিলেন।

প্রশ্ন: সনি না হয় রুম পার্টনার হিসাবে সবসময় উৎসাহ দিতেন। আর সঞ্জয় সেন তো আপনাকে মোহনবাগানে এনেছেন। তিনি কী বলছেন?

আজহার: স্যার তো আমার অনুপ্রেরণা। উনি টিমে সুযোগ না দিলে সবুজ-মেরুন জার্সিই পরতে পারতাম না। গোলটাও তো করতে পারতাম না। ইউনাইটেডের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে আমার খেলা দেখে সঞ্জয় স্যারই মোহনবাগানে নিয়ে এসেছিলেন। অনূর্ধ্ব ২২ হিসাবে এ বারের আই লিগে উনিই আমাকে টিমে রেখেছেন। আসলে আমাদের টিমের মধ্যে একটা একাত্মতা আছে। সবাই সবাইকে ভালবাসে। আমাদের ড্রেসিংরুমে কোনও ঝগড়া নেই।

প্রশ্ন: ডার্বির গোলটা তো হল, এরপর আপনার লক্ষ্য?

আজহার: কখনও কোনও পর্যায়ে ভারতীয় দলে খেলিনি। জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলাই স্বপ্ন আমার। সুনীল ছেত্রীর খেলা আমার খুব ভাল লাগে। ওর সঙ্গে খেলার স্বপ্ন দেখি। মোহনবাগানের হয়ে ভাল খেলতে চাই। নিয়মিত হতে চাই। আর সুযোগ পেলে ডার্বির মতো আরও গোল করে দলকে জেতাতে চাই। একটা গোল কিছুই নয়। ও রকম অনেকেই করেছে। তার পর হারিয়ে গেছে। ক্লাব কর্তারা, কোচ সবাই একথা বলছেন আমাকে। সে জন্যই আমি সতর্ক। আবেগে ভাসতে চাই না।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে তো মোহনবাগানের চুক্তি পাঁচ বছর। অর্থাৎ আরও দু’বছর বাকি। তারপর?

আজহার: তার পর কী হবে কে জানে। আগে এ বছর খেলি। তারপর দু’বছর খেলব মোহনবাগানে। খেললেই তো হল না। ভাল খেলতে হবে। তারপর দেখা যাবে মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হব কি না।

প্রশ্ন: বিদেশি ফুটবল দেখেন? প্রিয় ফুটবলারই বা কে?

আজহার: আমি বার্সেলোনার সমর্থক। কোনও ম্যাচ মিস করি না। মেসি আমার প্রিয় ফুটবলার।

প্রশ্ন: শুনেছি অফ সিজনে পেশির জোর বাড়ানোর জন্য হেদুয়াতে নিয়মিত সাঁতার কাটতে যান।

আজহার: ওটা কোচ ও আমাদের ফিজিও গার্সিয়ার পরামর্শে অফ সিজনে করতাম। এখন তো টিমের অনুশীলনই চলছে। খেলা চলছে।

প্রশ্ন: কী মনে হচ্ছে, এ বার চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্য হতে পারবেন?

আজহার: পরের তিনটে ম্যাচ জিততেই হবে। কাল রাতে কোচ স্যার বলে দিয়েছেন, সব ম্যাচই ফাইনাল ভেবে এগোতে হবে। সেটা হলেই তো চ্যাম্পিয়ন হব। এখন আমরা সবাই লাজং ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।

প্রশ্ন: বেঙ্গালুরু ম্যাচে স্ট্রাইকার, ডার্বিতে রাইট উইং। আপনার কোচ তো আপনাকে রহিম নবির মতো ইউটিলিটি ফুটবলার হিসাবে ভাবছেন?

আজহার: কোচ টিমের জন্য যেখানে খেলতে বলবেন খেলে দেব। আমি স্ট্রাইকার হলেও কোনও প্রিয় পজিশন নেই। কোচই জানেন আমি কোথায় ভাল খেলব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন