ম্যাচ জিতে প্রোটিয়া ক্রিকেটাররা। ছবি: এএফপি।
ব্লুমফন্টেইন টেস্টে ফিরে এল পুরনো বাংলাদেশ। ফিরে এল টাইগারদের ইনিংস হারের পুরনো লজ্জা। এ বার টাইগার বাহিনী টিকতে পারল না তৃতীয় দিনের অর্ধেকটাও। দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ইনিংস ও ২৫৪ রানে।
হারের আগে নিভে যাওয়া প্রদীপের মতো যেন জ্বলে উঠেছিল বাংলাদেশ। বেরিয়ে এসে ছক্কা মারলেন টেল এন্ডার মুস্তাফিজ। শুভাশিসের ব্যাট থেকে এল দুটি চার। সবই শেষের আগে একটু ঝলক। মুস্তাফিজকে ৭ রানে বোল্ড করে ম্যাচ ও সিরিজে ইতি টানেন প্রোটিয়ারা।
টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ১৪৭। ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২।
ইনিংস ও ২৫৪ রানের জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জিতে নিল ২-০ ব্যবধানে। সব মিলিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ হার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় হার এটিই। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে প্রোটিয়ারা জিতেছিল ইনিংস ও ২০৫ রানে।
আরও পড়ুন: ফের বল মুসফিকুরের হেলমেটে, স্ক্যান হল মাথার
আরও পড়ুন: সৌরভের আত্মত্যাগ ছাড়া আজকের ধোনি হত না: সহবাগ
প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছিল দল। কিন্তু এ বার পরাজয়টি হলে আরও বিব্রতকর।
পরাজয়ের ধরনটিই সব চেয়ে বেশি হতাশার। ইনিংস ব্যবধানে হার বলেই নয়, পরিকল্পনাহীন বোলিং, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং, খাপছাড়া নেতৃত্ব আর দৃষ্টিকটু শরীরী ভাষা-সব মিলিয়েই এই টেস্ট হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের খারাপ বিজ্ঞাপন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়া পেসারদের জুজু চেপে ধরে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। রাবাদা-ফেলুকায়োদের দাপটে স্বাভাবিক খেলাটাও খেলতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। সৌম্য, মুশফিক, মুমিনুলরা সবাই ব্যর্থ হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টে দলে জায়গা করে নিতে পারেননি সৌম্য। দ্বিতীয় টেস্টে জায়গা পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন বাঁ হাতি এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন মাত্র ৩ রান করে। কাগিসো রাবাদার বল ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন দ্বিতীয় স্লিপে।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউট করতে টানা শর্ট লেন্থের বল করে যান দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। সেই ফাঁদেই পা দেন মুমিনুল। রাবাদাকে হুক করতে গিয়ে কেশব মহারাজের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১১ রান করেন মুমিনুল।
ইমরুল কায়েস প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন। তবে ১৭তম ওভারে অলিভারের বলে আউট হন ইমরুল। আউট হওয়ার আগে ৩২ রান করেন এই টাইগার ওপেনার।
ভাল খেলছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। তবে ওয়েইন পার্নেলের বলে আউট হয়ে ক্রিজ ছাড়তে হয় তাঁকে। ২৬ রান করে আউট হন মুশি।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ভরসা দেওয়া লিটন দাস দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন। ১৮ রান করে ফেলুকায়োর বলে বোল্ড হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এর পর সবোর্চ্চ ৪৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফেরান রাবাদা। দলীয় ১৪৫ রানে ফিরে যান সাব্বির রহমান। আর এতেই বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে হারটা নিশ্চিত হয়ে যায়। এর পর রুবেল, তাইজুলদের ফেরাতে খুব একটা সময় নেননি রাবাদারা। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৭২ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেটে নেওয়া রাবাদা এই ইনিংসে নেন পাঁচ উইকেট। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে তৃতীয় বার দশ বা তারবেশি উইকেট নেন রাবাদা। এ ছাড়া ফেলুকায়ো নেন তিন উইকেট।