শ্রীনির প্রার্থনা চলছেই। তিরুবনন্তপুরমের মন্দিরে। ছবি টুইটার
‘মিথ্যাচারে’ অভিযুক্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নাম দ্বিতীয় বারের জন্য পেশ।
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে মোটামুটি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দু’থেকে পাঁচ বছরের নির্বাসন দাবি।
শেয়ার বাজারের ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’-এর উদাহরণ টেনে গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে কড়া আক্রমণ।
তদন্ত কমিশনের সামনে সুন্দর রামনের সিএসকে মালিক-প্রসঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপার বিচারপতিদের সামনে তুলে ধরা।
মুদগল কমিশনের রিপোর্টে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ্যে আনার জোরালো আবেদন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ভাগ্য মঙ্গলবারের সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারণ হল না ঠিকই। কিন্তু বিপক্ষ আইনজীবী হরিশ সালভে যে একের পর এক বিস্ফোরণে তাঁর উপর চাপ শতগুণ বাড়িয়ে রাখলেন, সন্দেহ নেই!
আগামী বৃহস্পতিবার শ্রীনি-মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। শ্রীনি বিরোধীদের কেউ কেউ আশাবাদে এখন থেকে ভুগতে শুরু করেছেন যে, বৃহস্পতিবারই শ্রীনি-কাণ্ডের যবনিকা পড়তে চলেছে। এত দিন শুনানি শুরু হচ্ছিল দুপুর দু’টো থেকে। পূর্ণাঙ্গ শুনানি তাই সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু আগামী ২৭ ডিসেম্বরের শুনানির সময় সকাল সাড়ে দশটা। যার আগে বা পরে কোনও মামলা নেই।
শ্রীনি-ঘনিষ্ঠদের কাউকে কাউকে রাতের দিকে বলতে শোনা গেল, এখনই এত থরহরিকম্পের যুক্তি নেই। কারণ, অর্ডারটা আসল। আদালতে কে কী বলে এলেন, সেটা নয়। হরিশ সালভে শ্রীনির বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন, শ্রীনির বিরুদ্ধে তিনি বলবেন সেটা স্বাভাবিক। আর কোর্ট এ দিন সব অভিযোগ শুনেছে। রায় পরের ব্যাপার, আজ কোনও মন্তব্যও করেনি সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু আদিত্য বর্মার মতো কেউ কেউ আবার এ দিন রাত থেকে বলতে শুরু করলেন, সুপ্রিম কোর্টে পরপর দু’দিন যা ঘটল, তাতে শ্রীনি-সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী। দু’টো দিন বেশি লাগবে, এটাই যা। মঙ্গলবারই হরিশ সালভের সওয়াল শেষ করতে আরও ঘণ্টাদুয়েক লাগত। যা সম্ভব ছিল না।
অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্টের মর্যাদায় পুনরায় টান পড়বে, সেটা খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু ভারত অধিনায়কের নাম যে ভাবে পরপর দু’দিন সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যাচারের কারণে উঠে আসবে, সেটা ভাবা যায়নি। শুরুটা সোমবার করেছিলেন নলিনী চিদম্বরম। এ দিন সালভে আক্রমণকে নাকি আরও তীব্র করেন। বিচারপতি খলিফুল্লাহ ও টিএস ঠাকুরের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে ধোনির নাম করে বলে দেন যে, মইয়াপ্পন নিয়ে ধোনি কমিশনের সামনে ‘মিথ্যাচার’ করেছেন। বলেছেন, মইয়াপ্পন নিছক ক্রিকেট-উৎসাহী ছিল। টিমের ব্যাপারে মইয়াপ্পন থাকতেন না। যা সর্বৈব মিথ্যা।
শুধু তাই নয়, ধোনি কী করে একই সঙ্গে ভারত অধিনায়ক, সিএসকে অধিনায়ক এবং ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আছেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন সালভে। ভারতীয় বোর্ড সুপ্রিমোকেও এ দিন ছিঁড়ে ফেলেছেন বিরোধী আইনজীবী। আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে বোর্ড সংবিধানের ছ’নম্বর ধারা মেনে শ্রীনিকে দু’থেকে পাঁচ বছরের নির্বাসন-দণ্ড দেওয়া হোক। সালভে বলে দেন, “শ্রীনিবাসন সব রকম চেষ্টা করেছেন যাতে এই দুর্নীতিগুলো ঢাকা দেওয়া যায়। ইন্ডিয়া সিমেন্টসও গুরুনাথ মইয়াপ্পন নিয়ে বলেছে যে গুরুনাথ নিছক ক্রিকেট-উৎসাহী বাদে আর কিছু ছিল না। যেটা বলার জন্য পরে ওদের ভুগতে হতে পারে, কিন্তু ঘটনা হল ওরা সেটা বলেছে।” গুরুনাথ মইয়াপ্পনের বিরুদ্ধে আবার এ দিন বলা হল, তিনি সরাসরি বেটিং করতেন না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঠিকমতো পাচার করে দিতেন অন্য বুকিদের। শেয়ার বাজারে ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’-এর ধাঁচে। আইপিএল সিইও সুন্দর রামন নিয়ে আবার অভিযোগ, তদন্ত কমিশনের সামনে যত সহজে, যত সুস্পষ্ট ভাবে তিনি কেকেআর মালিক বা রাজস্থান রয়্যালস মালিক কে, বলতে পেরেছেন ততটা স্পষ্ট তাঁর গলা শোনায়নি সিএসকে মালিকের নাম বলার সময়। এবং সালভের অভিযোগ, রামন থেকে গুরুনাথ সবাইকে বাঁচানোর চেষ্টা জেনেশুনে একটা লোকই করে গিয়েছেনশ্রীনিবাসন।
রাতে নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা বলছিলেন, “বিহার ক্রিকেট সংস্থাকে কেন ওরা অনুমোদন দেয়নি, তা নিয়েও কথা শুনতে হল আদালতের কাছে। শ্রীনি কেন, যে কোনও প্রসঙ্গেই বোর্ডের আইনজীবীদের অবস্থা ঢিলে হয়ে যাচ্ছে।” বাদীপক্ষের কথা ধরলে যার প্রামাণ্য রিপোর্টে অভিযুক্তদের নাম পেশের কথায় বোর্ড আইনজীবীদের ‘প্লিজ আজ নয়’ বলে ওঠা। শোনা গেল, বোর্ড আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন যে যদি ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ্যে আনতেই হয়, তা হলে সেটা যেন বৃহস্পতিবার হয়।
অতএব, সে দিন শ্রীনি-ভাগ্যের পাশাপাশি অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ্যে আসারও একটা ভাল রকম সম্ভাবনা আছে।