বোর্ডের অনুষ্ঠানে এসেও ভোটের অঙ্কে মন শ্রীনির

বুধবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের লবিতে গিয়ে বোর্ডকর্তাদের যে থিকথিকে ভিড় দেখা গেল, তাতে এই ধন্দে পড়াই স্বাভাবিক যে, এটা কি শহরের নামী পাঁচতারা হোটেল? না, ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্যের দুর্গ? ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের ‘হুজ হু’-রা এক ছাদের তলায় এলে যা হয়। মনসুর আলি খান পটৌডি স্মারক বক্তৃতা যেন উপলক্ষ।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪২
Share:

পটৌডি স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে ভিভিএস লক্ষ্মণ, নায়ারণস্বামী শ্রীনিবাসন ও জগমোহন ডালমিয়া। ছবি: বিসিসিআই

ভিভিএস লক্ষ্মণের সেই স্ট্রোক-প্লে কোথায় তাঁর পটৌডি স্মারক বক্তৃতায়?

Advertisement

যে আকর্ষণীয় ক্রিকেটটা খেলতেন লক্ষ্মণ, বুধবার সন্ধ্যায় নতুন ভূমিকায় তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া গেল না।

কিন্তু তাতে কার কী?

Advertisement

ক্রিকেট কর্তাদের মন তো অন্য দিকে। ঠিক এক সপ্তাহ পরেই ভারতীয় ক্রিকেটে যে ঝড় আসতে চলেছে, তার পূর্বাভাসের দিকে।

বুধবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের লবিতে গিয়ে বোর্ডকর্তাদের যে থিকথিকে ভিড় দেখা গেল, তাতে এই ধন্দে পড়াই স্বাভাবিক যে, এটা কি শহরের নামী পাঁচতারা হোটেল? না, ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্যের দুর্গ? ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের ‘হুজ হু’-রা এক ছাদের তলায় এলে যা হয়। মনসুর আলি খান পটৌডি স্মারক বক্তৃতা যেন উপলক্ষ। বরং বোর্ড নির্বাচনের আগে শরদ পওয়ারের হঠাত্‌ উদয়ে তৈরি চাপ মোকাবিলার মহড়ায় এ দিন দেখা গেল শ্রীনিবাসনকে।

পটৌডি-পত্নী শর্মিলা। বোর্ডের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদব, সচিব সঞ্জয় পটেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল। কিংবদন্তিদের মধ্যে গাওস্কর, বেঙ্গসরকর, বেদী (যিনি বহু দিন পর বোর্ডের অনুষ্ঠানে)। সাধারণ দিনে এঁদের উপস্থিতি হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। কিন্তু সামনে বোর্ড নির্বাচন। তাই ক্রিকেট মহাতারকাদের ছাপিয়ে সামনে চলে আসছিল নির্বাচনী অঙ্ক। যেখানে গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনের প্রধানরা। যাঁরা ভোট দিয়ে শ্রীনিকে ফের হট সিটে বসাবেন।

ঠিক এক সপ্তাহ পর বোর্ডের বার্ষিক সভা। যেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়া সম্ভব হবে কি না, আদালতে তার ফয়সালা না হওয়ায় ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। তবে আপাতত দায়িত্বহীন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন নির্বাচনের আগে তাঁর চূড়ান্ত হোমওয়ার্কটুকু সেরে নিলেন এই অনুষ্ঠানের আবহেই। এবং যার শেষে তাঁকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে।

মন দিয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কা দলের ক্রিকেটারদের লক্ষ্মণের বক্তৃতা শুনতে দেখা গেল ঠিকই। হয়তো উপভোগ করলেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। কিন্তু ক্রিকেট প্রশাসকরা? প্রাক্তন বোর্ড প্রধান শরদ পওয়ার হঠাত্‌ বার্ষিক সভায় যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বোর্ড নির্বাচনে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছেন। পওয়ারকে রোখার অঙ্কেই সম্ভবত ব্যস্ত থাকল শ্রীনি-শিবির। বোর্ড মহলের খবর, বার্ষিক সভায় যদি কেউ চমক দিতে পারেন, তা একমাত্র পওয়ারই। যিনি অবশ্য এ দিনের অনুষ্ঠানে এলেন না।

তথাকথিত শ্রীনি বিরোধী বলে পরিচিত নিরঞ্জন শাহ, রাজীব শুক্লরা যেখানে এখনও পওয়ারের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত নন, সেখানে শ্রীনিবাসনকে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগল বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের খবর। এ দিন সন্ধ্যায় শহরে পৌঁছনোর পর থেকে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে সবার সঙ্গে যে ভাবে কুশল বিনিময় করলেন, তাতেও সেই ছবি স্পষ্ট।

এ দিন সন্ধ্যায় শ্রীনিবাসন অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যতটা না সময় ব্যয় করলেন, তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময়ই দিলেন পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের। বিশেষ করে অসম ও ত্রিপুরার। ক্রিকেট মহলে জল্পনা, পওয়ারের নাম নাকি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রস্তাব ও সমর্থন করবে যথাক্রমে এই দুই রাজ্যের সংস্থাই। সে জন্যই হয়তো এ দিন অসম ক্রিকেট সংস্থার প্রধান কর্তা গৌতম রায়কে ডেকে নিলেন কথা বলার জন্য। ত্রিপুরার নবনিযুক্ত সচিব সৌরভ দাশগুপ্তও এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গেও এ দিন বৈঠকে বসেছিলেন শ্রীনিবাসন। কথা হয় ঝাড়খন্ডের কর্তার সঙ্গেও। ওড়িশা থেকে এ দিন কেউ আসেননি বলে জানা গেল। তবে কয়েক দিন আগের কলকাতা সফরেই না কি সেই পর্ব শেষ করে গিয়েছেন তিনি। কেউ মুখ না খুললেও শ্রীনি শিবিরের কাউকেই কিন্তু খুব একটা চিন্তিত দেখায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন