নতুন যুদ্ধের দুই মুখ। এন শ্রীনিবাসন ও রাজেন্দ্র মাল লোঢা।
যাঁরা ভাবছিলেন, ১৫ জানুয়ারি পুণের ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে নতুন অধিনায়ক বিরাট কোহালির জন্য বিশেষ দ্রষ্টব্য হতে যাচ্ছে। তাঁরা বোধহয় ভুল ভাবছিলেন। ওই ম্যাচে বাইশ গজে যত না নাটক হবে, তার সমান্তরাল ভাবে চলবে মাঠের বাইরে। ম্যাচ সংগঠনকে কেন্দ্র করে।
পুণে হল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপসারিত বোর্ড সচিব অজয় শিরকের সংস্থা। অভূতপূর্ব ভাবে পদচ্যূত হওয়ার দিন শিরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ম্যাচ সংগঠনে সব রকম সহযোগিতা করবেন।
বৃহস্পতিবার আচমকা যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তা হল সম্পূর্ণ অসহযোগিতার। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে বোর্ডের অপসারিত সব কর্তা জোট বেঁধেছেন। এঁদের মন্ত্র: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অবজ্ঞা করো। আদালতের লোকদের ম্যাচ করতে দাও। নিজেরা সম্পূর্ণ সরে যাও।
বেঙ্গালুরুতে শনিবার বোর্ডের এক রকম বিদ্রোহী বৈঠক ডেকেছেন শ্রীনিবাসন। যে বৈঠকের কথা জানাজানির পর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শোকগাথা ভুলে। বেসরকারি এই বৈঠকে যোগ দিতে হলে প্লেনের টিকিট বা হোটেল খরচ বোর্ডের কোষাগার থেকে পাওয়ার প্রশ্ন নেই। শোনা যাচ্ছে, শ্রীনি সেটা নিজে দিচ্ছেন।
রাতে এই বৈঠকের খবর শুনে আইনজীবী মহলে তীব্র বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এক বিখ্যাত ক্রিকেট আইনজীবী বললেন, ‘‘এরা কি পাগল যে আদালতের অবমাননা করছে?’’ বিচারপতি লোঢাকেও ফোন করে পুরো ঘটনাটা জানান কেউ কেউ। লোঢা বিরক্তির সঙ্গে বলেন, যা করছে করতে দাও।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা আগের অভূতপূর্ব অপসারণের মতোই অভূতপূর্ব এমন বিদ্রোহী বৈঠক। যেখানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ থাকা সত্বেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যাচ্ছেন না। কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে যাবেন, তবে সিএবির প্রতিনিধি হিসেবে নয়। বিদ্রোহী কর্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, হয় সমান্তরাল বোর্ড তৈরি করতে হবে। বা আইসিসির দখল নিতে হবে। শ্রীনি কোনও কোনও কর্তাকে বলেছেন, তাঁর ইচ্ছে আইসিসিতে ফেরা। সেখানে কোনও বয়সসীমা নেই। আইসিসির রুটে গিয়ে ফের যদি ভারতীয় বোর্ডে ফেরা যায়!
এই পরিকল্পনার কথা শুনেও হাঁ হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। আইসিসিতে শশাঙ্ক মনোহর যথেষ্ট শক্তিশালী ভাবে গদি আঁকড়ে আছেন। তাঁকে শ্রীনিবাসন সরাবেন কী ভাবে? এই বৈঠকে বেশির ভাগ কর্তাই এমন যাচ্ছেন, ন’বছরের চক্করে পড়ে যাঁদের প্রশানিক জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। কর্তাদের প্রচণ্ড অসন্তোষ যেখানে লোঢা এত দিন নয় এবং নয় মিলিয়ে মোট আঠারো বছরের প্রশাসনিক জীবনের কথা বলে আসছিলেন, সেটা আদালত হঠাৎ ছেঁটে ন’বছর করে দিল কেন? তাঁদের মতে এটা চূড়ান্ত অন্যায়। কোনও পেশায় কোনও ভারতীয় নাগরিক ন’বছর বেশি থাকতে পারবেন না, এ রকম নিষেধাজ্ঞা সংবিধানের কোথাও নেই। তা হলে তাঁদের উপর কী করে এমন নির্দেশিকা জারি হল?
আপাতত তাঁদের অভিসন্ধি সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করা। যাতে ইংল্যান্ড সিরিজের সংগঠনে পদে পদে সমস্যা তৈরি হয়। এক প্রাক্তন কর্তা বলেছেন, ‘‘দেখি আদালত নিযুক্ত প্রশাসকদের কেমন দৌড়?’’
শনিবারের বৈঠকের খবর পেয়ে ভারতীয় ক্রিকেটমহল খুব আতঙ্কিত। তাঁদের ভয়, এই পর্যায়ের আদালত অবমাননা করলে যে রাজ্য সংস্থাগুলো এর মধ্যে জড়িত তারা না এরপর সাসপেন্ড হয়ে যায়!