ফতুল্লা টেস্ট

নামার অন্তিম চেষ্টাও পদ্মায় তলিয়ে গেল চোট আতঙ্কে

শিখর ধবনকে আচমকা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে দেখে মনে হল, এতক্ষণ শুধু এটার অপেক্ষাই করছিলেন। চার দিন ধরে সকাল-সন্ধে ঢাকা-ফতুল্লা করতে হচ্ছে, ও দিকে লাভের ব্যালান্স শিটে বড়সড় গোল্লাপ্রাপ্তি! বড় একটা সেঞ্চুরি করলেন। অথচ কোনও মানেই থাকল না। পুরোটাই চলে গেল পদ্মার জলে। জাঠ আর কত দিন সহ্য করবেন! ফতুল্লা প্রেস কনফারেন্স রুমে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, এ ভাবে দিনের পর দিন ম্যাচ ‘কলড অফ’ হলে ক্রিকেটারদের মনন কী দাঁড়ায়?

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

ফতুল্লা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০৩:৫৭
Share:

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটকে ফিরিয়ে দিলেও হরভজনের সফল প্রত্যাবর্তনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল সেই বৃষ্টি। ছবি: রয়টার্স

শিখর ধবনকে আচমকা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে দেখে মনে হল, এতক্ষণ শুধু এটার অপেক্ষাই করছিলেন। চার দিন ধরে সকাল-সন্ধে ঢাকা-ফতুল্লা করতে হচ্ছে, ও দিকে লাভের ব্যালান্স শিটে বড়সড় গোল্লাপ্রাপ্তি! বড় একটা সেঞ্চুরি করলেন। অথচ কোনও মানেই থাকল না। পুরোটাই চলে গেল পদ্মার জলে। জাঠ আর কত দিন সহ্য করবেন! ফতুল্লা প্রেস কনফারেন্স রুমে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, এ ভাবে দিনের পর দিন ম্যাচ ‘কলড অফ’ হলে ক্রিকেটারদের মনন কী দাঁড়ায়? “কী আবার? অসম্ভব হতাশ লাগে। আসছি, যাচ্ছি, এসে বসে থাকছি,” ঝাঁঝিয়ে উঠলেন ধবন। এক সাংবাদিক আবার মৃদু খোঁচায় জানতে চাইলেন, রবিবার কী চান? ভারতীয় ওপেনার যে উত্তরটা দিলেন, ইয়ার্কি অবশ্যই। শুধু কষ্ট মেশানো। “বৃষ্টি চাই! যা চলছে, সেটাই না হয় চলুক!”
ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সবচেয়ে দুঃখী চরিত্র এখন কে? শোনা গেল, হরভজন সিংহ। দু’বছর পর ভারতের টেস্ট জার্সিতে নেমেছিলেন। গত রাতে কাউকে কাউকে চার্জড হয়ে বলেওছিলেন যে, এটা তাঁর কাছে প্রমাণের ম্যাচ। আইপিএল জেতা নয়, দেশের জার্সিতে ভাল কিছু করতে পারলে লোকে সত্যিকারের মনে রাখবে। আর মনে রাখা! গোটা দিনে পেলেন সাতটা ওভার আর একটা উইকেট। রবিবাসরীয় ফতুল্লা আকাশ যদি দয়ামায়া করে, আরও গোটা কয়েক ওভার পাবেন ঠিকই। কিন্তু অতীতের মতো টিমকে জেতানো সম্ভবত আর হবে না। বোলিং ‘রিদম’, সেটাও ঠিকঠাক পাবেন তো? টেস্ট ক্রিকেটে হাফসেঞ্চুরি রেকর্ডে এবি ডে’ভিলিয়ার্সকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলা বিপক্ষ বাঙালি ব্যাটসম্যান মোমিনুল হককে তুলে যেটা পেলেন। এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেটা হারিয়েও গেল। অন্য কেউ বলেনি, সর্দার নিজেই বারবার আফসোস করেছেন ড্রেসিংরুমে ফিরে। বোলিং-ছন্দ মুঠোয় এসেও আবার পিছলে যাওয়া নিয়ে।

Advertisement

বিরাট কোহলি নাকি আর ফতুল্লা টেস্টের প্রসঙ্গ তুলছেনই না! শেষ দু’টো দিনের ছ’টা সেশন যে পাচ্ছেন না, ধরে রাখা ছিল। ভারত অধিনায়ক নাকি আশাবাদে ভুগছিলেন যে, অন্তত তিন-চারটে সেশন পেলেও আপ্রাণ একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যে কারণে পাঁচশোর পিছনে না ছুটে এ দিন সকালেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিলেন। বাংলাদেশকে দু’বার আউট করার ন্যূনতম সময়টুকু যাতে বোলারদের দেওয়া যায়। ভারত অধিনায়ক বুঝতে পারেননি, পুরো একটা সেশনও শনিবার পাবেন না। ঝটপট বাংলাদেশের তিনটে উইকেট তুলে নিয়েও তাঁকে দেখতে হল জয়ের স্বপ্নের অন্তর্জলিযাত্রা কত নিষ্ঠা মেনে সম্পন্ন হচ্ছে।

বিশ্বকাপ যুদ্ধোত্তর দু’দেশের লড়াইয়ের শিরশিরানি। ক্যাপ্টেন কোহলির টেস্ট পৃথিবীতে পদার্পণ ঘিরে দেশজোড়া আগ্রহ। ‘ব্রাত্য’ হরভজনের কামব্যাকে সিংহগর্জনের অপেক্ষা। সাকিব-তামিম-মুশফিকুরের প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে বাঙালি প্রত্যুত্তর। ফতুল্লা টেস্টের মেনুকার্ডকে নিরামিষ দেখানোর কোনও কারণ ছিল না। কিন্তু কেউ ভাবতে পারেনি, আকাশ এতটা বেয়াদপি করে বসবে।

Advertisement

সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ চতুর্দিক কালো করে ওসমান আলি স্টেডিয়ামের উপর যেটা এসে দাঁড়াল, তাকে মেঘপুঞ্জ নয়। মেঘেদের অতিকায় মহাকাশযান বলা উচিত! ও-পারেও বর্ষা ঢুকেছে। শুধু দুই বাংলার তফাতটা হল, এ পারে একবার নামলে দেড় ঘণ্টা স্রেফ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটের চারটে দিন মানে বারোটা সেশন থাকবে। ফতুল্লায় সেখানে মেরেকেটে তার অর্ধেকও হল কি না সন্দেহ। কোনও দিন টেনেটুনে পঞ্চাশ ওভারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। কখনও আবার তিরিশও পেরোচ্ছে না। শনিবার তো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আস্ত একটা চুটকি বেরিয়ে গেল। ফতুল্লায় মেঘেদের মহাসভা বসেছে। একজন আর এক জনকে বলছে, কখন নামব বলিস। শুনে দ্বিতীয়ের উত্তর, একটু দাঁড়া। আমাদের মুশফিকুরও যদি এখন চলে যায়, সঙ্গে সঙ্গে নামছি!

পুরোটাই ইয়ার্কি। কিন্তু কোথাও যেন বাস্তবের সঙ্গে একটা মিলও থেকে যায়। ফতুল্লা টেস্টে ভারত যত বার বিপক্ষ দুর্গে ঢুকে ম্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তত বার যাবতীয় প্রচেষ্টাকে কচুকাটা করে দিয়েছে বৃষ্টি। গত কাল পাঁচশো উঠতে পারত। বৃষ্টি আটকেছে। এ দিন বাংলাদেশ ব্যাটিংকে হরভজন-অশ্বিন আচমকাই কোণঠাসা করে ফেলতে শুরু করলেন। ১০৮-১ থেকে বাংলাদেশ ১১১-৩ হয়ে গেল। কিন্তু তার পর খেলাটাই স্রেফ বন্ধ হয়ে গেল।

এত কিছুর পরেও নেমে পড়ার একটা মরিয়া চেষ্টা হয়েছিল। ভারত ভেবেছিল, শেষের দিকে অন্তত ঘণ্টাদেড়েক নামতে পারলেও জয়ের আশাকে আইসিসিইউ থেকে জেনারেল বেডে পাঠানোর টিমটিমে সম্ভাবনা থাকবে। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ নাকি ঠিক করে ফেলা হয়, আউটফিল্ড কিছুটা ভিজে থাকলেও নেমে পড়া হবে। যে কোনও উপায়ে ম্যাচ শুরু করতে হবে। কারণ বৃষ্টি ততক্ষণে বন্ধ হয়েছে। আম্পায়ারদের নাকি বলে দেওয়া হয়, টিম নামতে রাজি। মাঠের অবস্থা একবার কোচদের দেখতে দেওয়া হোক। কিন্তু ভরত অরুণ, সঞ্জয় বাঙ্গাররা মাঠ ঘুরেফিরে যে রিপোর্ট দেন, ড্রেসিংরুমকে তাতে আশার শেষ স্ফুলিঙ্গও নিভে যায়। অরুণরা নাকি বলে দেন, নামা যেতেই পারে। কিন্তু বড় চোটও একই সঙ্গে লেগে যেতে পারে ফিল্ডারদের। পিচ ঠিক আছে। কিন্তু আউটফিল্ড মোটেও ঠিক নেই।

পদ্মাপারের পূর্বাভাস বলছে, আজ রবিবারও পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকী ওয়ান ডে সমেত পুরো সিরিজই অতলে তলিয়ে যেতে পারে। ওয়ান ডে পরের ব্যাপার। দেরি আছে। টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণ আগে। এবং রবিবার পুরো খেলা হলেও তাতে একটা ফলাফলের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ড্র এবং ড্র।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্রিকেটে শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলাটা মূর্খামি। ঠিকই বলেন। কিন্তু ফতুল্লা টেস্ট যদি ড্রয়ের বাইরে অন্য কোনও ফলাফল দিতে পারে, তা হলে আরও একটা অসম্ভব রবিবার থেকে ঘটা উচিত।

ঢাকা রাজপথে পনেরো কিলোমিটার পেরোতে আর মোটেও দু’ঘণ্টা লাগা উচিত নয়!

ভারত (প্রথম ইনিংস) ৪৬২-৬ (ডি)

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)

তামিম স্টা ঋদ্ধিমান বো অশ্বিন ১৯

ইমরুল ব্যাটিং ৫৯

মোমিনুল ক উমেশ বো হরভজন ৩০

মুশফিকুর ক রোহিত বো অশ্বিন ২

সাকিব ব্যাটিং ০

অতিরিক্ত

মোট ১১১-৩ (৩০.১ ওভারে)।

পতন: ২৭, ১০৮, ১১০।

বোলিং: ইশান্ত ৪-০-১৩-০, অশ্বিন ১১.১-২-৩০-২, উমেশ ৪-০-৩৪-০, বরুণ ৪-০-১১-০, হরভজন ৭-০-২৩-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন