ফের স্বমহিমায় ময়দানের ‘নীতুদা’। লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে কোচ-ফুটবলারদের সঙ্গে বৈঠকে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
মুশকিলে পড়া টিম ইস্টবেঙ্গলে দেখা মিলল ‘মুশকিল আসান’-এর!
আর সেই তিনি লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার ক্লাবের প্র্যাকটিসে প্রত্যাবর্তনেই যেন টিমের ব্যাটন ফের নিজের হাতে তুলে নিলেন।
দেবব্রতবাবুর (নীতু) অবর্তমানে তাঁর প্রিয় ইস্টবেঙ্গল আর্মান্দো বাহিনী থেকে এলকো-ব্রিগেডে রূপান্তরিত। যার উদ্দেশ্যে অন্যতম শীর্ষকর্তার প্রথম দিনই স্পষ্ট বার্তা—ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, সবাইকে টিমের জন্য খেলতে হবে।
মরসুমের শুরু থেকে মাঠ এবং মাঠের বাইরে সব মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। যার ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দল। গত চার বছরে পারফরম্যান্সের যে ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ তৈরি করেছিলেন মেহতাবরা, সেটা এখন অনেক নিম্নমুখী। এ দিন টিমের অনুশীলনের পরে ফুটবলারদের কাছে নীতু মূলত জানতে চান, কোথায় সমস্যা হচ্ছে তাঁদের? কী সমস্যা?
পরে লাল-হলুদ অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগান ম্যাচ আমরা ভাল খেলেও জিততে পারিনি। যার জন্য সবাই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। যার প্রভাব পড়ে পরের ম্যাচেও।’’ ক্যাপ্টেনের পাশেই তখন দাঁড়িয়ে অর্ণব মণ্ডল। তাঁর যুক্তি, ‘‘এই মিটিংটা খুব দরকার ছিল। ফুটবলারদের স্বার্থে। টিমের স্বার্থে। আমার বিশ্বাস, একটা ম্যাচ জিতলেই এই দুঃসময় কেটে যাবে।’’
শনিবার আগাগোড়া ক্লাবের অনুশীলনে হাজির ছিলেন নীতু। প্র্যাকটিস শেষে চলল র্যান্টি-ডুডদের সঙ্গে তাঁর প্রায় দু’ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক। প্রথমে কোচ সতৌরির সঙ্গে আলাদা করে বসেছিলেন লাল-হলুদের মহাগুরুত্বপূর্ণ কর্তা। পরে ড্রেসিংরুমেই তাঁর উপস্থিতিতে কোচ-ফুটবলারদের মুখোমুখি আলোচনা।
নীতু বললেন, ‘‘আমি কোচকে বলেছি, আই লিগে এখনও ৩০ পয়েন্ট পড়ে আছে। বাকি ম্যাচগুলোকে আরও গুরুত্ব দিয়ে খেলতে হবে। আমরা খুব খারাপ খেলছি, তা বলা যাবে না। আমাদের ভাগ্য সঙ্গে নেই। যে ব্যাপারটা কাটাতে হবে আরও কঠোর পরিশ্রম করে।’’ ক্লাব সূত্রে খবর, মেহতাব-খাবরাদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের আরও বেশি করে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে কোচকে। মেহতাবকে আলাদা করে ডেকে নীতু নাকি বলেছেন, তুই এই টিমের সবচেয়ে সিনিয়র ফুটবলার। তোকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। টিম যা চেয়েছে ক্লাব সব দিয়েছে। আমি কিছু জানি না। আমি শুধু রেজাল্ট চাই।
এলকো অবশ্য এ দিনের আলোচলার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গাড়িতে ওঠার আগে শুধু বললেন, ‘‘আমি বড্ড বেশি কথা বলছি। ঠিক করেছি, এ বার থেকে কম কথা বলব।’’
কোচের এটুকু কথাও অবশ্য ইঙ্গিতপূর্ণ। এমনিতেই সতৌরিকে নিয়ে লাল-হলুদে শুরু থেকে খুচরো বিতর্ক লেগে আছে। প্রথম দিনের প্র্যাকটিসেই ক্লাবের মাঠ নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ডাচ কোচ। তার পরে একে একে ফেসবুক-কাণ্ড, টিমের অন্দরের নানা অস্বস্তি অনেক সময়ই প্রকাশ্যে এসেছে। তা হলে কি এ বার থেকে কোচের মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে দেওয়া হল? না কি তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে? যদিও ইস্টবেঙ্গল মাঠ যে সত্যিই অনুশীলনের আদর্শ নয় সেটা মেনে নিলেন অন্যতম শীর্ষকর্তাও। ‘‘আমাদের মাঠ অসমান বলে রবিবার বারাসতে প্র্যাকটিস করবে দল। কোচ তাই চাইছেন,’’ এ দিন বলেন নীতু।
ইস্টবেঙ্গলের পরের আই লিগ ম্যাচ ভারত এফসি-র সঙ্গে, বুধবার। যার জন্য সোমবার সকালে পুণে যাচ্ছেন র্যান্টিরা।