লিগ হাতছাড়া হওয়ার পর ক্ষোভে ফুটছেন তিনি। সারা রাত ঘুমোননি। কোচিং জীবনে ফের তীরে এসে ডুবে যাওয়ায় এতটাই হতাশ যে, পঁচাত্তরের বড় ম্যাচে ঐতিহাসিক পাঁচ গোলে হারের যন্ত্রণাকেও পিছনে ফেলতে চাইছেন মঙ্গলবারের খেতাবি লড়াইয়ে হারের পর।
“ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোলে হারের পর নৌকোয় রাত কাটিয়েছিলাম। সারা রাত ভেবেছিলাম কেন এত খারাপ খেললাম! সেটা ছিল খারাপ খেলার যন্ত্রণা। কিন্তু এ বার তো ভাল খেলা সত্ত্বেও অন্যায় ভাবে হারিয়ে দেওয়া হল টালিগঞ্জকে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, আইএফএ সবাই চক্রান্তের শরিক। উদ্দেশ্য একটাই, ছোট দল যেন খেতাব না পায়,” চব্বিশ ঘণ্টার মৌনতা ভেঙে হঠাৎ-ই বিস্ফোরক সুব্রত ভট্টাচার্য। বুধবার বিকেলে।
ফুটবলার এবং কোচ হিসাবে কয়েক হাজার ম্যাচে মাঠে থেকেছেন। অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। বারবার জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। ফিরেও এসেছেন সেই সব বিতর্ক সরিয়ে। জেদ এবং একরোখা মনোভাব তাঁর সবর্দা সঙ্গী। তবুও কখনও এ রকম আচরণ করেননি। যা করেছিলেন মঙ্গলবার। ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারের পর মাঠ থেকে সোজা গাড়িতে উঠে চলে গিয়েছিলেন বাড়িতে। ফোন বন্ধ রেখেছিলেন গভীর রাত পর্যন্ত। “ওর পর আর কী হবে ড্রেসিংরুমে ঢুকে? সেই একই কথা তো বলতে হত। বলেও বা কী হত? কে শুনত? রাতে ঘুমোইনি। বারবার ভেবেছি, কেন আমাকে এ রকম অন্যায় ভাবে আটকে দেওয়া হয়। আমি সব কিছুর প্রতিবাদ করি বলেই কি? দু’দিন আগেই আমার কাছে খবর ছিল টালিগঞ্জকে লিগ জিততে দেওয়া হবে না। তাই ক্লাবকর্তাদের বলেছিলাম সব ফুটবলারকে এক জায়গায় রাখতে। তা-ও দু’তিন জন....ফোন ধরল,” থেমে যান টালিগঞ্জ টিডি।
কিন্তু কারা আপনার কিছু ফুটবলারকে ফোন করেছিল? “কারা ম্যানেজ করতে চেয়েছিল আপনারাই বুঝে নিন। কিছু বললেই তো আইএফএ থেকে শো-কজ করা হবে। ওখানে তো মোহনবাগান রেডি হয়ে বসে আছে।”
মোহনবাগানকেও এই চক্রান্তের শরিক বলছেন কেন?
“কারণ, মোহনবাগানের বর্তমান কর্তাদের বিরুদ্ধে আমি সত্যি কথাগুলো বলেছি। সিবিআই তদন্ত নিয়ে বলেছি। ওদের অন্যায় কাজ নিয়ে সরব হয়েছি। কিছু বললেই ওরা আইএফএ-কে দিয়ে আমাকে শো-কজ করাবে। করিয়েছেও। আমার জন্য টালিগঞ্জও চক্রান্তের শিকার হল। আর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে লিগটা ওদের দরকার ছিল। অন্য দিকে, আমি লিগ জিতলে মোহনবাগান কর্তাদের মুখ পুড়ত। সদস্য-সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়ত ক্লাবকর্তারা। সামনে নির্বাচন ওদের। তাই একজোট হয়েছিল ওরা। কালকের ম্যাচে নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে টালিগঞ্জকে। পরিষ্কার ডুডুর হাতে বল লাগল। ওটা পেনাল্টি হবে না? টিভি রিপ্লে দেখুন। রেফারির বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। রেফারিকে দোষ দেব না। ওদের উপরমহল থেকে যা বলা হয় ওরা তাই করে। আইএফএ কোনও দিন ছোট দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে দেবে না। লিখে দিতে পারি। স্পনসররাও সেটা চায় না,” হতাশায় ডুবে থাকার মধ্যেও সরাসরি তোপ দাগেন সুব্রত।
কোচ হিসাবে বাঘা সোমের ’৫৮-র রেকর্ড দু’বার ছোঁয়ার সুযোগ এসেছিল একমাত্র সুব্রতর সামনেই। দু’বারই ব্যর্থ দেশের অন্য সব ট্রফি জেতা কোচ। “আমি হারিনি। আমাকে হারানো হয়েছে। পাঁচ বছর আগে ইউনাইটেড টিডি থাকার সময় শেষ ম্যাচে পেনাল্টি নিয়ে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হল। ওই ম্যাচটা ড্র করলেই লিগ পেতাম। আর এ বার আমাদের একটা ন্যায্য পেনাল্টি দিল না। দিলে আমরা কিন্তু লড়ে ম্যাচটা জিতে যাই।” যুক্তি দেন টালিগঞ্জ টিডি।
একসঙ্গে রেফারি, দুই প্রধান, আইএফএ-র বিরুদ্ধে সরব হলেও নিজের দলের ফুটবলারদের খেলায় সন্তুষ্ট সুব্রত। “টালিগঞ্জের ছেলেরা কিন্তু দারুণ খেলেছে। নিজেদের ক্ষমতার চেয়েও বেশি খেলেছে। ওদের জন্য আমি গর্বিত। ইস্টবেঙ্গল খেলল কোথায়? বল পজেশন, পাসিং, গোলের সুযোগ ওদের চেয়ে সব কিছুতে আমরা এগিয়ে ছিলাম। আমার বিদেমি-কোকো গোলগুলো করলে...।”
গলা ধরে আসে সুব্রতর। চড়া সুর নেমে আসে মুহূর্তে। “আর বেশি কিছু বলব না। আবার উৎপলবাবু ফোন করে বলবেন তোমাকে শো-কজ করছি।” বিরক্ত সুব্রত থেমে যান। ফের ডুবে যান হতাশায়।