এমন মাঠেই লড়ে গেল খেলোয়াড়েরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কাদা মাঠে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের বল দখলের লড়াই। সাইড লাইন থেকে চিৎকার করছেন দুই স্কুলের শিক্ষক তথা প্রশিক্ষকেরা। ছাত্র-ছাত্রীদের পজিশন নেওয়ার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন তাঁরা। প্রথম কয়েক মিনিট বিপক্ষকে বুঝে নেওয়ার পালা। তারপরেই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে জমে উঠল খেলা। বর্ষার মাঠে গতিময় ফুটবলে বাধা হচ্ছিল মাঠে জমে থাকা থকথকে কাদা। তারমধ্যেই নিজের স্কুলকে জেতানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই করে গেল ফুটবলাররা। মেয়েদের বিভাগে হল হ্যাটট্রিক। ছেলেদের বিভাগে দুরন্ত গোলকিপিং চোখ টানল দর্শকদের। রবিবার জাতীয় স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা সুব্রত কাপের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যায়ের ফাইনালে উঠে এলে এমনই টুকরো ছবি।
শনিবার ও রবিবার জেলা স্তরের চূড়ান্ত পর্যায়ের সব কটি খেলা হয় মধ্যমগ্রামের দোহাড়িয়া বিধানপল্লি এলাকার পল্লিশ্রী ক্লাবের মাঠে। শনিবার ছিল সেমিফাইনাল। বৃষ্টির কারণে দু’দিনই মাঠ বেহাল। তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আলাদা কোনও প্রচার না থাকায় স্কুল ছাত্র ও শিক্ষক ছাড়া স্থানীয় দর্শকদের তেমন ভিড় ছিল না। রবিবার ছেলেদের অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগের ফাইনালে বিধানচন্দ্র বিদ্যাপীঠ ১-০ গোলে হেলেঞ্চা হাইস্কুলকে হারায়। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিধানচন্দ্র বিদ্যাপীঠের ফুটবলারদের দাপট ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটের মাথায় ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে স্মরজিৎ বিশ্বাস। প্রায় মাঝমাঠ থেকে নেওয়া তার দূরপাল্লার শট ডানদিকে ঝাঁপিয়েও ঠেকাতে পারেনি হেলেঞ্চা হাইস্কুলের গোলরক্ষক শাহিদ আফ্রিদি। সে আরও কিছু ক্ষেত্রে দলের নিশ্চিত পতন বাঁচিয়েছে। বিধানচন্দ্র বিদ্যাপীঠের কোচ ছিলেন অশোকনগরের ফুটবল প্রশিক্ষক পল দাস। হেলেঞ্চার কোচ ছিলেন বনগাঁর পরিচিত ফুটবল প্রশিক্ষক রামপ্রসাদ চক্রবর্তী। জয়ী দলের কোচ পল বলেন, ‘‘মাঠের অবস্থা ভাল থাকলে দল আরও ভাল খেলতে পারত।’’ অন্য দিকে, রামপ্রসাদবাবু দাবি, ‘‘খেলায় আমরা জেতার মতোই খেলেছি। তবে দু’দিনে পরপর তিনটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।’’ ছেলেদের অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে প্রণবানন্দ হাইস্কুল ৩-০ গোলে অ্যাডামস্ স্কুলকে হারায়। গোলগুলি করে দীপঙ্কর ঘোষ ও অসীম দাস। খেলার দু’মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেয় দীপঙ্কর। জয়ী স্কুলের শিক্ষক আবুল খায়ের আকুঞ্জি বলেন, ‘‘স্কুলের নিজস্ব ফুটবল মাঠ আছে। সারা বছর ছাত্রদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাই এই সাফল্য।’’
মেয়েদের বিভাগে বারাসত মহকুমায় উদয়রাজপুর হরিহরপুর গালর্স হাইস্কুল ৫-০ গোলে হারিয়েছে অশোকনগর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়কে। জয়ী দলের হয়ে তিনটি গোল করে প্রীতি মণ্ডল। বাকি দু’টি গোল করেছে তিতলি সরকার এবং প্রিয়ঙ্কা সরকার। জয়ী স্কুলের শিক্ষিকা তথা ফুটবল প্রশিক্ষক পার্বতী সরকার বলেন, ‘‘স্কুলের নিজস্ব মাঠ না থাকলেও পাশের একটি ক্লাবের মাঠে ছাত্রীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। তাই মাঠে সাফল্য এসেছে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক ভূদেব মুখোপাধ্যায় জানান, সুব্রত কাপে মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগ নেই। খেলা হয় অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগে। তবে এ বার সেই বিভাগে বারাসত মহকুমা ছাড়া জেলার অন্য স্কুল যোগ দেয়নি। তাই উদয়রাজপুর হরিহরপুর গালর্স হাইস্কুলই রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেবে। মেয়েদের বিভাগে জেলা স্তরের পরে আলাদা কোনও ক্লাস্টার নেই। অন্য দিকে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনার চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে ছেলেদের ক্লাস্টার প্রতিযোগিতায় আসর বসবে নদিয়াতে। ক্লাস্টার চ্যাম্পিয়ন রাজ্য প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পাবে। ছেলে ও মেয়ে উভয় বিভাগের রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতা হবে ৫-৮ অগস্ট মুর্শিদাবাদের লালবাগে।