প্রত্যাবর্তন: ফের যুবভারতীতে দেখা যাবে ব্রাজিলের জাদু। ফাইল চিত্র।
বিকেল বেলা পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাঝেই খবর পেলাম অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল গুয়াহাটি থেকে সরে আসছে কলকাতায়।
যার অর্থ, ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচ হতে চলেছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। রবিবার জার্মানির বিরুদ্ধে প্রায় গোটা যুবভারতীর সমর্থনই আদায় করে নিয়েছিল ব্রাজিল। এখন প্রশ্ন, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় সরে আসায় ব্রাজিলের আদৌ কোনও সুবিধা হবে কি?
আমার মতে হবে।
ফুটবল খেলেছি বলেই বলেই জানি, গোটা স্টেডিয়াম যখন আপনার জন্য গলা ফাটাবে, তখন একটা বাড়তি প্রেরণা মেলেই। মনে পড়ে যাচ্ছে, সাতাত্তরে রোভার্স কাপের কথা। মুম্বইয়ে মোহনবাগান সমর্থক বেশি। দিল্লিতে যেমন বেশি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সে বার আইএফএ শিল্ড ও ডুরান্ড কাপ জিতে আমাদের টিম ‘ট্রিপল ক্রাউন’-এর জন্য ছুটছে। কুপারেজে রোভার্স ফাইনালের আগের দিন মুম্বই প্রবাসী এক বন্ধু সকালে ফোন করে বলল, সামনে ইস্টবেঙ্গল রয়েছে ভুলে যাও। আমাদের সমর্থন তোমাদের জিতিয়ে দেবে। ওদের নিয়ে ভেবো না। এখনও মনে আছে, ওয়ার্ম-আপ করার সময় গোটা কুপারেজ গলা ফাটাচ্ছিল আমাদের জন্য। ওখানেই ম্যাচটা জেতার বাড়তি মোটিভেশন পেয়ে যায় মোহনবাগান। শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ত্রিমুকুট জিতে কলকাতা ফিরেছিলাম। রবিবার ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচে দেখছিলাম, যুবভারতীকে প্রায় মারাকানা বানিয়ে ফেলেছে ব্রাজিলের বাচ্চাগুলো। পাওলিনহো-র দ্বিতীয় গোলের পর যে ভাবে ফেন্সিং-এর সামনে গিয়ে উৎসব করছিল ওরা, তাতে বলতে পারি, কলকাতায় ম্যাচটা হওয়ায় ইংল্যান্ডের চেয়ে বাড়তি মোটিভেশন পাবে ব্রাজিল। কারণটা ওই দর্শক সমর্থন।
আরও পড়ুন: ব্রাজিল শিবিরে যেন ‘ঘরে’ ফেরার আনন্দ
তবে উল্টোটাও হতে পারে। সমর্থকদের দেখে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কখনও কখনও কাল হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক যেমন আমাদের হয়েছিল আশির রোভার্স ফাইনালে। ম্যাচের আগে মুম্বইয়ের মোহনবাগান সমর্থকদের নিয়ে আমরা এমন লম্বা-চওড়া কথা বলছিলাম যে রাহুল দেব বমর্ন সেই আত্মবিশ্বাস দেখে বলে যায়, ‘‘দেখিস, এত আত্মবিশ্বাস মোহনবাগানকে হারিয়ে না দেয়।’’ ম্যাচটাও আমরা হেরে গিয়েছিলাম জামশিদ নাসিরির গোলে।
ইংল্যান্ড কিন্তু কলকাতাতেই গ্রুপ লিগের তিনটি ম্যাচ ও প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ খেলে গিয়েছে। ফলে কলকাতার দর্শক, পরিবেশ, আবহাওয়া সম্পর্কে ওরা সম্যক ওয়াকিবহাল। কিন্তু কলকাতার ফুটবপ্রেমীদের কাছে যেহেতু ব্রাজিল সব সময়েই ইংল্যান্ডের চেয়ে বেশি প্রিয় দল, তাই সেমিফাইনালের স্থান পরিবর্তন হওয়ায় মানসিক ভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে মাঠে নামবে আমাদেউ-এর দল। দেখতে হবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যেন ওদের গ্রাস না করে। অনেকে বলতে পারেন, সোমবার সারা দিন ধরে এই যে, কলকাতা না গুয়াহাটি তা নিয়ে ডামাডোল চলল, তাতে ইংল্যান্ড ও ব্রাজিল ফুটবলারদের ফোকাস নড়ে যেতে পারে কি না। আমার মতে, তা হওয়ার কথা নয়। কারণ, দুই ফুটবল কুলীন দেশের এই অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলাররা কয়েক বছরের মধ্যেই পেশাদার সার্কিটে নজর কাড়বে। তাই স্থান পরিবর্তন হলেও প্রতিযোগী মানসিকতা বদল হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু খেলার ধরন যদি বলেন, তা হলে কিন্তু টেকনিক্যাল দিক থেকে আমি ব্রাজিলের চেয়ে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব। কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে থেকে জার্মানিকে ২-১ হারালেও কিন্তু ব্রাজিল খুব আহামরি খেলেনি। জার্মানির প্রেসিং ফুটবলের সামনে বরং বেশির ভাগ সময় কুঁকড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে পেলের দেশের খুদে ফুটবলারদের। প্রথমার্ধে চাপে পড়ে গিয়ে অনেক মিসপাস করেছে ব্রাজিল। ফ্রি-কিক থেকেও সাম্বার যাদু দেখা যায়নি।
সেখানে ইংল্যান্ড কিন্তু টুর্নামেন্টের প্রথম থেকেই বেশ পরকল্পনা করে ফুটবল খেলছে। আর সেই কারণেই ওদের টিমের সেরা ফুটবলার জেডন স্যাঞ্চো টুর্নামেন্টের মাঝপথে ক্লাবের হয়ে খেলতে চলে গেলেও ওদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আর স্টিভ কুপারের ইংল্যান্ড দলটা আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ঘরানায় বেশ গতিতে প্রতি-আক্রমণে যায়। ব্রাজিলকে যদি গতিতে কোণঠাসা করা যায়, তা হলে কিন্তু ইংরেজদের আটকাতে সমস্যা হবে অ্যালান-দের।
ফলে, আত্মবিশ্বাসে ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখলেও যুবভারতীতে ফুটবল-সংক্রান্ত কারণে এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড।