আইপিএলও কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটার দেয়

হার্দিক পাণ্ড্যর এ ভাবে উঠে আসার পিছনে কারও যদি বিশেষ কৃতিত্ব প্রাপ্য হয়, তা হলে সে সচিন। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য এই হার্দিক আর যশপ্রীত বুমরা-কে স্পট করেছিলই সচিনই।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৪৫
Share:

নজরে: পারফরম্যান্সের সঙ্গে মাঠের বাইরের হার্দিকও আলোচনায়। ছবি: টুইটার।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ভারতের তরুণ এক অলরাউন্ডারের জন্ম হওয়া দেখতে দেখতে আমার এক জনের কথা খুব মনে পড়ছিল।

Advertisement

সচিন রমেশ তেন্ডুলকর।

হার্দিক পাণ্ড্যর এ ভাবে উঠে আসার পিছনে কারও যদি বিশেষ কৃতিত্ব প্রাপ্য হয়, তা হলে সে সচিন। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য এই হার্দিক আর যশপ্রীত বুমরা-কে স্পট করেছিলই সচিনই। আর কে না জানে, হার্দিকের উত্থান হয়েছে আইপিএলের হাত ধরেই। এই টোয়েন্টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটা না থাকলে হার্দিককে আদৌ পাওয়া যেত কি না, সন্দেহ।

Advertisement

একটা চালু ধারণা আছে, আইপিএলে যে মারকাটারি ক্রিকেট খেলে, তার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে ভাল কিছু করা সম্ভব নয়। হার্দিক এই ধারণাটা সম্পূর্ণ বদলে দিল। দেখিয়ে দিল, দক্ষতা থাকলে বিস্ফোরক ক্রিকেট খেলেও টেস্টে সফল হওয়া যায়। প্রয়োজন দু’টো জিনিসের। এক, অবশ্যই দক্ষতা। দুই, মানসিকতা। আইপিএলে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা প্রতিভাদের সংস্পর্শে এসে যেমন হার্দিকের খেলা মার্জিত হয়েছে, টেকনিক মজবুত হয়েছে, তেমনই ভয়ডরটা একদম কমে গিয়েছে। ফলে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেও এরা যেমন ঘাবড়ায় না, তেমনই প্রথম সেঞ্চুরির সামনে এসেও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। এরাই নতুন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিনিধি।

ক্রিকেটে একটা কথা আছে। ‘বিটস অ্যান্ড পিসেস ক্রিকেটার।’ অর্থাৎ যারা একটা বিভাগে না পারলে অন্য বিভাগে ঠিক সামলে দেবে। মানে সহজ কথায়, যে দিন রান্না করবে না, সে দিন বাজার করে দেবে। আর যে দিন দু’টোর একটাও কিছু করবে না, সে দিন মশলাটা বেটে দেবে। হার্দিকের মতো ক্রিকেটাররা ব্যাটে না পারলে বলে, আর দু’টোতেই ব্যর্থ হলে হয়তো দেখা যাবে দারুণ ফিল্ডিং করে ম্যাচের রংটা বদলে দিয়েছে।

হার্দিকের ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে ওর বাবা এবং দাদা ক্রুনালের অবদান কিন্তু কম নয়। শুধু ক্রিকেট খেলার জন্য ওদের বাবা দুই ভাইকে সুরাত থেকে বডোদরায় নিয়ে এসেছিল। ক্রিকেটের জন্য ওরা অনেক কিছু ছেড়েছে। আজ সেটার প্রতিদান পাচ্ছে।

হার্দিকের ব্যাটিংটা দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রোক প্লে-র ওপর। তা বলে কিন্তু ও দুমদাম চালায় না। পাল্লেকেলে-তে যেটা সবচেয়ে ভাল লাগল, সেটা হল, শটের জন্য বল নির্বাচন। একেবারে বলের ওপর এসে শটটা খেলে ও। দূর থেকে চালায় না। ফলে বলের সঙ্গে কনট্যাক্ট পয়েন্টটা খুব ভাল হয়। মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ও একটা শট খুব মারে। বলের একেবারে ওপরে এসে খেলে বলে ক্যাচ আউটের আশঙ্কা কমে যায়। পাশাপাশি বোলার হার্দিকের গতি এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। প্লাস ও সিমটা একেবারে সোজা ফেলে। এতে মুভমেন্টটা ভাল পায়। আমি নিশ্চিত উপমহাদেশের বাইরে হার্দিকের বোলিংটা আরও ভাল হবে।

অনেকে হার্দিককে বাইরে থেকে দেখে ভুল বুঝতে পারেন। কানে দুল, চুলের ও রকম স্টাইল, ট্যাটু। কিন্তু হার্দিক ভিতরে ভিতরে সম্পূর্ণ অন্য ধাতুতে গড়া। কেন বলছি এ কথা? হার্দিক যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল, ওর বলের গতি ছিল ১৩০ কিলোমিটারের আশেপাশে। কিন্তু ও এখন নিয়ম করে ১৪০ কিলোমিটারের আশে পাশে বল করছে। এটা হয়েছে, ওর নিয়মিত জিম সেশন এবং কঠোর প্র্যাকটিসের জন্য। কোনও দিন জিম বা প্র্যাকটিস মিস করেছে বলে শুনিনি। প্রচণ্ড শৃঙ্খলাপরায়ণ বলেই কিন্তু ও আজ নিজের ক্রিকেটের এতটা উন্নতি করেছে।

হার্দিক আসায় ভারতীয় টিমের ব্যালান্সটাও ভাল হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া যখন অপ্রতিরোধ্য দল ছিল, তখন সাত নম্বরে নেমে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ডাবল সেঞ্চুরিও করেছে। এখানে আটে নেমে হার্দিক সেঞ্চুরি করে গেল। প্লাস বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময় উইকেট তোলাও আছে।

ব্রায়ান লারা-কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, অলরাউন্ডার বলতে আপনি কী বোঝেন? লারার জবাব ছিল, ‘‘খুব সহজ। আমার কাছে অলরাউন্ডারের মানে হল, গ্যারি সোবার্স থেকে জাক কালিস।’’ এক কথায়, তারাই যারা ব্যাট বা বলে গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারবে। এক জন অলরাউন্ডার থাকা মানে যে একটা টিম কোথা থেকে কোথায় চলে যেতে পারে, সেটা আমরা আগে দেখেছি।

হার্দিক পাণ্ড্যের উত্থান দেখার পরে আমি একটা ব্যাপার নিয়ে খুব আগ্রহী হয়ে আছি। সামনের আইপিএল নিলামে হার্দিকের দরটা কোথায় ওঠে। এত দিন দেখা যেত, টেস্ট ক্রিকেটে যারা ভাল করে, আইপিএলে তারা সে রকম দর পায় না। এ বার কিন্তু ছবিটা বদলে যাবে। টেস্টে ভাল করেই আইপিএল নিলামে নিজের দর বাড়িয়ে নিতে পারবে হার্দিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন