২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর সচিন তেন্ডুলকর। ছবি: সংগৃহীত।
২০০৭ বিশ্বকাপে হারের পরই ভেবেছিলেন অবসর নিয়ে নেবেন। কিন্তু তাঁকে আটকেছিলেন ভিভ রিচার্ডস। তার পর তৈরি হয়েছে আরও অনেক মাইলস্টোন। কিন্তু আফসোসটা যায়নি এখনও। জাতীয় দল জার্সি খুলে রেখেও ভুলতে পারেননি শুরুতেই হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা। তার পর বিশ্বকাপও জিতেছেন। কিন্তু সেই হতাশাটা আজও তাড়া করে সচিন তেন্ডুলকরকে।
আরও খবর: স্পিন ভুলে শেষ টেস্ট হতে পারে পেসারদের, দাবি কিউরেটরের
সে বার ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসেছিল বিশ্ব কাপের আসর। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের কাছে হেরে সে বার শুরুতেই ছিটকে যেতে হয়েছিল ভারতকে। তার পর দু’দিন হোটেলের ঘর থেকে বেরতে পারেননি। মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন আর খেলবেন না। সচিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘হারের পর আমরা আরও দু’দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিলাম। কিন্তু আমি হোটেলের ঘর থেকে বাইরে যাইনি। কোনও কিছুই করতে ভাল লাগছিল না। চূড়ান্ত হতাশায় ডুবে গিয়েছিলাম। এই হতাশা থেকে বেরিয়ে অন্য টুর্নামেন্ট খেলার মানসিকতা ফিরে পাওয়াটা সহজ ছিল না ।’’ বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হেরে যেতে হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য বার্মুডার বিরুদ্ধে ঘরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গ্রপ পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারেই সব শেষ। সেটা ২০০৭এর ২৩ মার্চ। আজকের দিনে এত বছর পরে আবার সেই খারাপ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে একই রকম হতাশায় ডুবে যান সচিন।
২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে চিটকে যাওয়ার দিন হতাশ টিম ইন্ডিয়া।
‘‘আমার ক্রিকেট জীবনের সব থেকে খারাপ দিনগুলির মধ্যে একটি’’, এ ভাবেই ২৩ মার্চের সেই দিনকে ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, ‘‘যখন কেউ ভাবে সে জিতবে কিন্তু সেই গেমটা সে হেরে যায় তখনকার অনুভূতিটা ভয়ঙ্কর। ১৯৯৭এ জোহানেসবার্গ আর বার্বাডোজ টেস্ট। ১৯৯৬এ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া। এরকম বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপটা সত্যিই খুব খারাপ ছিল। কখনও ভাবিনি বাংলাদেশের কাছে হেরে যাব।’’ তখন ঠিক করে ফেলেছিলেন আর খেলবেন না। ঠিক সেই সময়ই ফোন আসে তাঁর ব্যাটি হিরো ভিভ রিটার্ডসের। তিনি বোঝান এই সবটাই খেলার অঙ্গ। ‘‘ভিভ আমার সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেছিল। ক্রিকেটের ওঠা-পড়া বুঝিয়েছিল। ও আমাকে বলেছিল আমার মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট রয়েছে। বলেছিল, তুমি অবসর নিচ্ছ না। ভিভ এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিল আমি খুব হতাশ। আর আমি অবসরের কথা ভাবছি। ও বলেছিল, এটা শুধু একটা খারাপ সময়। তার পরই আমি আবার খেলার কথা ভাবি।’’
যাঁর প্রেরণায় অবসরের ভাবনা ছেড়ে ক্রিকেটে ফেরা সেই ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে সচিন।
সচিন সব সময়ই বলেছেন, ভিভ আর সুনীল গাওস্করকে দেখেই তিনি ক্রিকেটে এসেছেন। বলেন, ‘‘স্যার ভিভ সঠিক সময়ে আমাকে ফোন করেছিল। তার পরই অবসরের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসি। মুম্বইয়ে ফিরে আসার পর অনুশীলন শুরু করি। আমার দাদা অজিত তখন আমাকে বলে ২০১১ বিশ্বকাপ তোমার হাতে থাকবে।’’ এর পর থেকেই আবার নতুন করে বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সচিন তেন্ডুলকর। সকাল ৫.৩০টা থেকে অনুশীলন শুরু করতেন সচিন। চলত দুপর পর্যন্ত। ঠিক চার বছর পর মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মাঠ ঘুরেছিলেন তিনি সতীর্থদের কাঁধে চেপে।