ইউএস ওপেনে ম্যাচ হেরে রাগে র্যাকেট ভেঙে ফেলছেন দানিল মেদভেদেভ। ছবি: রয়টার্স।
ম্যাচ হেরে কোর্টেই মেজাজ হারিয়েছিলেন দানিল মেদভেদেভ। রাগে র্যাকেট ভেঙে ফেলেন। সেই রাগ আরও বাড়ল সাংবাদিক বৈঠকে। ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ডে ফ্রান্সের বেঞ্জামিন বনজ়ির কাছে হারের ধাক্কার পাশাপাশি শাস্তিও পেয়েছেন তিনি। চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ানোয় জরিমানা হয়েছে তাঁর। জরিমানার অর্থ অবশ্য বলেননি রুশ তারকা। কিন্তু ম্যাচের চেয়ার আম্পায়ারকে বেনজির ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিশানা করেছেন প্রতিযোগিতার আয়োজকদেরও।
ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের তৃতীয় সেটে। বনজ়ির বিরুদ্ধে প্রথম দুটো সেট হেরে গিয়েছিলেন মেদভেদেভ। তৃতীয় সেটে ৫-৪ এগিয়ে থাকাকালীন সার্ভিস ছিল বনজ়ির। সেই গেম জিতলে স্ট্রেট সেটে মেদভেদেভকে হারিয়ে দিতেন তিনি। বনজ়ির প্রথম সার্ভিস নেটে লাগে। দ্বিতীয় সার্ভিস করার আগে দেখা যায়, কোর্টে এক ফোটোগ্রাফার ঢুকে পড়েছেন। নিজের জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তা দেখে চেয়ার আম্পায়ারের মনে হয়, খেলার ছন্দ নষ্ট হয়েছে। তাই তিনি বনজ়িকে আবার প্রথম সার্ভিস নিতে বলেন।
চেয়ার আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি মেদভেদেভ। তিনি তেড়ে যান চেয়ার আম্পায়ারের দিকে। প্রশ্ন করেন, কেন বনজ়িকে আবার প্রথম সার্ভিস নিতে বলা হল। আম্পায়ারের যুক্তি মানতে পারেননি মেদভেদেভ। তর্ক করতে থাকেন তিনি। মেদভেদেভ সমর্থন পান লুই আর্মস্ট্রং স্টেডিয়ামের দর্শকদের। তাঁরা চেয়ার আম্পায়ারকে বিদ্রুপ করতে থাকেন। ফলে ৭ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। মেদভেদেভকে দেখা যায়, হাতের ইশারায় সমর্থকদের তাতাচ্ছেন। আবার দর্শকদের জন্য হাতের ইশারায় ‘ভালবাসা’ও দেখান তিনি। এ ভাবে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করার জন্য শাস্তি পেয়েছেন মেদভেদেভ।
তার পরেও চুপ থাকেননি তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উঠতেই বেনজির আক্রমণ করেছেন। মেদভেদেভ বলেন, “প্রথমেই সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আমার মনে হয় চেয়ার আম্পায়ার তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর হয়তো হ্যামবার্গার খেতে ইচ্ছা করছিল। হয়তো অনেক ক্ষণ চেয়ারে বসে ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তাঁর কথা শুনিনি। তাঁকে আরও ২ ঘণ্টা ওখানেই বসিয়ে রেখেছি। ম্যাচ হয়তো আমি হেরেছি। কিন্তু চেয়ার আম্পায়ার যা চেয়েছিলেন তা হতে দিইনি। সেটাই আমার জয়।” সাম্প্রতিক অতীতে টেনিসে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক জড়িয়েছেন বহু তারকা। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর এ ভাবে কাউকে চেয়ার আম্পায়ারের দিকে সরাসরি নিশানা করতে শোনা যায়নি।
মেদভেদেভ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ফোটোগ্রাফারের জন্য মেজাজ হারাননি তিনি। ২০২১ সালের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন বলেন, “ফোটোগ্রাফারের কোনও দোষ নেই। কিন্তু একটা শব্দ হলেই যদি আবার নতুন করে প্রথম সার্ভিস করতে বলা হয় তা হলে তো মুশকিল। আমি সেই সিদ্ধান্তটা মানতে পারিনি। নিজের যুক্তি দিয়েছি। তর্ক করেছি। ঠিক করেছি।”
চেয়ার আম্পায়ারের পাশাপাশি আয়োজকদেরও একহাত নিয়েছেন মেদভেদেভ। এর আগে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করায় রেইলি ওপেলকাকেও শাস্তি পেতে হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মেদভেদেভ। তিনি বলেন, “আমাকে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা বললে সমস্যায় পড়ব। তাই সেটা বলছি না। শুধু এ টুকু বলতে পারি, বড় অঙ্কের জরিমানা হয়েছে। রেইলিকেও এই রকম জরিমানা করা হয়েছিল।”
মেদভেদেভের দাবি, তাঁদের মতো খেলোয়াড়কে ভাল চোখে দেখেন না আয়োজকেরা। তাই তাঁদেরই শাস্তি পেতে হয়। তিনি বলেন, “আমি জানি না। ওরা আমাদের মতো খেলোয়াড়দেরই শাস্তি দেয়। আমি, কিরগিয়স, বুবলিক, রেইলি। ওরা আমাদের পছন্দ করে না।” ‘আমাদের মতো’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা বলেননি মেদভেদেভ। তবে যাঁদের উদাহরণ তিনি দিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই বিতর্কিত। তাই অনেকেই ভাবছেন, তিনি হয়তো বিতর্কিত খেলোয়াড়দের কথা বলেছেন। চেয়ার আম্পায়ার ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খোলায় ভবিষ্যতে মেদভেদেভকে আরও বড় শাস্তি পেতে হবে কি না, সেটাই দেখার।