ফিলিপ শঁতিয়ে-তে দাঁড়িয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি রাফায়েল নাদাল। ছবি: রয়টার্স।
লাল সুরকির রাজা তিনি। ফরাসি ওপেনে তাঁর রেকর্ড অন্য সকলের কাছে ঈর্ষণীয়। ১১৬টা ম্যাচ খেলে ১১২টা জিতেছেন রাফায়েল নাদাল। ১৪টা ফরাসি ওপেন তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেটে। লাল সুরকির রাজাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন ফরাসি ওপেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিনি পাশে পেয়েছেন তিন প্রতিদ্বন্দ্বী রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচ ও অ্যান্ডি মারেকে (এই চার তারকা গত দুই দশক টেনিস শাসন করেছেন)। ফরাসি ওপেনে তাঁর ১৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব? নাদাল বিনয়ী। তাঁর মতে সম্ভব। তবে তার জন্য কোনও খেলোয়াড়কে অন্তত ৩০ বছর টেনিস খেলতে হবে।
রবিবার ফরাসি ওপেনের প্রথম দিন ফিলিপ শঁতিয়ে-তে নাদালকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘সেলিব্রেটিং দ্য কিং।’ অর্থাৎ, রাজাকে নিয়ে উৎসব। সত্যিই তো তিনি ফরাসি ওপেনের রাজা। ২০০৫ সালের ২৫ মে শুরু হয়েছিল সেই যাত্রা। ২০২৫ সালের ২৫ মে তার সমাপতন হয়েছে। অদ্ভুত ভাবে ঠিক ২০ বছর পরে। তার মাঝে মাত্র এক বারই (২০১৬) প্রতিযোগিতার মাঝপথে নাম তুলে নিয়েছিলেন নাদাল। চোট নিয়ে আর খেলতে পারেননি। ২০২৩ সালে অবশ্য নামেননি তিনি। তার মাঝে ১৪ বার ফাইনাল খেলেছেন। প্রতিটাই জিতেছেন। প্রতিপক্ষ ফেডেরার হোক বা অন্য কেউ, নাদালকে থামানো যায়নি। অবশেষে চোট সেই নাদালের কেরিয়ার থামিয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিক বৈঠকে নাদালকে প্রশ্নটা করা হয়েছিল। আর কেউ কি নাদালের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারবেন? জবাবে নাদাল বলেন, “আমি বার বার একই জবাব দিই। আমি জানি, এই রেকর্ড করা কঠিন। কিন্তু যদি আমি করতে পারি, তা হলে অন্য কেউও করতে পারবে। আমি নিজেকে বিশেষ প্রতিভাবান মনে করি না।” নাদালের জবাব শুনে খানিকটা হলেও চমকে যান সাংবাদিকেরা। যদিও তার পরেই বাকি ব্যাখ্যা দেন স্প্যানিশ তারকা।
নাদাল জানান, চাইলেই কেউ ১৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে না। তার জন্য যেমন পরিশ্রম দরকার, তেমনই ভাগ্যও সঙ্গে থাকতে হয়। নাদাল বলেন, “এই রেকর্ড করতে গেলে অনেক কিছুর মেলবন্ধন চায়। আপনার লম্বা কেরিয়ার দরকার। বেশি চোট পেলে হবে না। আমি অনেক বার চোট পেয়েছি। ২০১৬ সালে নাম তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, বেশি চোট পেলে লম্বা কেরিয়ার হয় না। তাই ভাগ্যও দরকার।”
নাদালের ২০ বছরের কেরিয়ারে তিনি ১৪টা ফরাসি ওপেন জিতেছেন। কিন্তু অন্য কারও পক্ষে এই কীর্তি করতে হলে আরও বেশি বছর খেলতে হবে বলে মনে করেন তিনি। নাদাল বলেন, “রোলঁ গারোজে ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য সময় লাগবে। অন্তত ৩০ বছর।” এখনকার টেনিসে ৩৫ বছরের পর সেরা ফর্মে খেলা কঠিন। অর্থাৎ, ৩০ বছরের কেরিয়ার প্রায় অসম্ভব। নাদাল সরাসরি না বললেও তাঁর কথা থেকে স্পষ্ট, তাঁর রেকর্ড আর কেউ ছুঁতে পারবেন না।
রবিবার অনুষ্ঠানে নাদালের জন্য অনেক চমক ছিল। টেনিস বিশ্বের ‘ফ্যাব ফোর’-এর বাকি তিন সদস্য ফেডেরার, জোকোভিচ এবং মারে উপস্থিত হন সংবর্ধনায়। আপ্লুত নাদাল বলেন, ‘‘তোমাদের এখানে দেখে খুব ভাল লাগছে। কোর্টে আমাকে অনেক কঠিন সময় কাটাতে হয়েছে তোমাদের জন্য। কিন্তু দিনের শেষে টেনিস একটা খেলাই। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, কোর্টে রেষারেষি থাকলেও আমরা ভাল বন্ধুও হতে পারি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এই বিশেষ মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।’’
তার পরেই ফরাসি ওপেন কর্তৃপক্ষ নাদালের পায়ের ছাপ উন্মোচন করেন। সেখানে নাদালের সইও রয়েছে। যা ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে থেকে যাবে স্থায়ী ভাবে। নাদাল তা জানতেন না। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম এই বছরই এটা থাকবে। তার পরে ওরা বলল, না স্থায়ী ভাবে আমার পায়ের ছাপ থেকে যাবে। সেটা শুনে যা মনে হয়েছিল তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর্টে আমার পায়ের ছাপ থেকে যাবে। এর থেকে বড় সম্মান আর কী হতে পারে?”