ইংল্যান্ড সিরিজে শুরু

ডিআরএসে ভুল কমলেও অন্য প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে

ভারতের মাঠেও এ বার ‘ডিরেক্ট রেফারেল সিস্টেম’ (ডিআরএস) পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় বোর্ড। যার ফলে ভারতে হওয়া টেস্ট ম্যাচগুলোয় আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক অনেকটাই কমবে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

ভারতের মাঠেও এ বার ‘ডিরেক্ট রেফারেল সিস্টেম’ (ডিআরএস) পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় বোর্ড। যার ফলে ভারতে হওয়া টেস্ট ম্যাচগুলোয় আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক অনেকটাই কমবে। বিদেশি দলগুলোও আর আমাদের দিকে আঙুল তুলে বলতে পারবে না, ডিআরএস না থাকার সুবিধে আদায় করছে ভারত। বরং ভারতের জন্য যে ডিআরএস প্রযুক্তি আরও উন্নত হতে চলেছে, সে জন্য ক্রিকেট বিশ্বের ভারতকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

Advertisement

এই প্রযুক্তি যথেষ্ট উন্নত ছিল না বলেই এত দিন ভারতীয় বোর্ড ডিআরএস ব্যবহারে রাজি হয়নি। বিশেষ করে বল ট্র্যাকিং টেকনোলজি। যাকে ফুলপ্রুফ প্রমাণ করতে পারেনি আইসিসি-ও। এখনও যে একশো শতাংশ নিখুঁত, বলা যাবে না। কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে বলেই বোর্ড এই সিস্টেম ব্যবহার করতে রাজি হয়েছে।

ডিআরএসে কোথায় সমস্যা ছিল?

Advertisement

মূলত এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যে বল ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে বলের পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট বোঝা যায়, সেখানে। বলের পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট হল প্যাডে ঠিক যে জায়গায় বল লাগে, সেখানে প্যাড না থাকলে বলটা যে দিকে যেত, তা আন্দাজ করা। পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট অফস্টাম্পের বাইরে হলে সেটা এলবিডব্লিউ নয়। এই পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট নির্ধারণ করেন বিশেষ ট্রেনিং পাওয়া মানুষ, যেখানে ভুল হতেই পারে।

স্টার স্পোর্টস বক্সে বসে কমেন্ট্রি বা স্টুডিও প্রোগ্রাম করে এই ব্যাপারগুলো কী ভাবে হয়, তা এখন অনেকটাই শিখেছি। নতুন সিস্টেমেও এটা ম্যানুয়ালিই করা হবে, কিন্তু এখন থেকে এর মধ্যে ‘আল্ট্রা এজ’ সিস্টেম এসে যাওয়ায় এই ভুল আরও কমে যাবে। এই সিস্টেমে আল্ট্রা মোশন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তা বিশ্লেষণ করা হয়। সাধারণ স্লো-মো ক্যামেরায় সেকেন্ডে যতগুলো ফ্রেম ধরা যায়, এই বিশেষ ধরনের ক্যামেরায় তার চেয়ে অনেক বেশি ফ্রেম ধরা যায়। এলবিডব্লিউর ক্ষেত্রে বল প্যাডের ঠিক কোথায় গিয়ে লাগছে, তা আরও অনেক নির্ভুল ভাবে বুঝতে পারা যাবে এখন থেকে। ফলে বলের পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্টও আরও নিখুঁত ভাবে বোঝানো যাবে। এতে এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত আরও নির্ভুল হবে। যদিও বিষয়টা আরও বড়, ব্যাপক। কিন্তু যতটা সহজ করে বোঝানো যায়, সেই চেষ্টাই করলাম।

এখন যে প্রযুক্তিতে স্লো মোশন রিপ্লে দেখানো হয়, সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বলের পয়েন্ট অব ইমপ্যাক্ট ঠিক করা হয়। কিন্তু ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে এই উন্নত সুপার স্লো মোশন প্রযুক্তি ব্যবহারের আশ্বাস আইসিসি দিয়েছে। আর সে জন্যই বিসিসিআই রাজি হয়েছে।

প্রযুক্তি না হয় অনেক উন্নত হল, আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুলের সম্ভাবনাও কমল। কিন্তু ক্রিকেটারদের যে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা, তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যাবে না, তার কী হবে? দিন বদলেছে, ক্রিকেট বদলেছে। কিন্তু ক্রিকেটের বেসিক এই ব্যাপারটা শিকেয় তোলা ঠিক কি না, এটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।

ডিআরএস থাকুক, উন্নত প্রযুক্তিও আসুক। কিন্তু আম্পায়ারদের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকলে ক্রিকেটের স্পিরিট বজায় থাকে। যে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠ ও মাঠের বাইরে সব মিলিয়ে পাঁচ জন আম্পায়ার থাকেন। ডিআরএস তাঁরাই নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে নিজেদের ভুল শুধরে নিতে পারেন। ক্রিকেটাররা রেফারেল চাইলে তবেই ডিআরএস ব্যবহার হবে, তা কেন? আইসিসির এটা নিয়ে ভাবা উচিত। তা ছাড়া ডিআরএস বাধ্যতামূলক করাই বা হবে না কেন? এই ব্যয়বহুল সিস্টেম ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে ব্যবহারের খরচ আইসিসিরই দেওয়া উচিত। আফগানিস্তান, জিম্বাবোয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশের বোর্ড যাতে যুক্তি না দিতে পারে যে, আর্থিক কারণে তারা ডিআরএস ব্যবহার করছে না।

এটা সত্যিই যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডিআরএস থাকা ও না থাকার মধ্যে একটা ফারাক থাকছে। ডিআরএসের প্রভাব ম্যাচের রেজাল্টে পড়ছে। তাই সব আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডিআরএস থাকাই উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন