গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
ঢাক নয় ভুভুজেলা। সিঁদুর নয় রঙের খেলা।
বাঙালির সেরা উৎসব শেষে এ বার বাঙালির প্রিয় খেলা। ‘সব খেলার সেরা, বাঙালির তুমি ফুটবল’। কিন্তু এই খেলা নিয়ে শুধু বাঙালি নয়, মাততে চলেছে গোটা দেশ। দিল্লি, মু্ম্বই, বেঙ্গালুরু, কোচি, গুয়াহাটির সঙ্গে কলকাতা তো রয়েইছে।
আসছে-আসছে করতে করতেই দুম করে চলে যাওয়া। পুজো তো এমনই। এলেই যে শেষ হয়ে যায়! তাই আসার আগে পর্যন্তই যেন সব আনন্দ। নতুন জামা, নতুন জুতো, বেড়ানো, ঠাকুর দেখা, কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যায়! চারটে দিন চলে গেলেই মন খারাপের পালা। কিন্তু এর মধ্যেও থেকে যায় আরও এক বছরের অপেক্ষা। ঠিক যেমন ক্রীড়াপ্রেমীরা অপেক্ষায় থাকেন কখন হবে আইএসএল, আইপিএল। সে-ও তো একটা উৎসব। সেই একটা মাসের পরিকল্পনাও চলে সারা বছর ধরে। কলেজ, অফিস কেটে কিছুটা যেন পিকনিকের মুডে। শেষ হয়ে গেলেই আবার অপেক্ষা।
বিশ্বকাপ খেলবে এই ভারতীয় দল।
এই বছরটা অবশ্য ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য উৎসবটা দীর্ঘায়িত হবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য তো গর্ব করার পালা। বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে যে আর কয়েকদিনের মধ্যেই। ৫ অক্টোবর ঘটা করে দেশের রাজধানীতে উদ্বোধন হবে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের। তাই ছুটি নেই এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কারও। ভারতের মাটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ, খেলবে ভারতের ভবিষ্যৎ তারকারা। দেশ জুড়ে সাজ সাজ রব গত দু’বছর ধরে। তৈরি মঞ্চ, সেজে উঠেছে মণ্ডপ, এই উৎসবকে রূপ দিতে এক এক করে এসে পৌঁছচ্ছে উৎসবের কারিগররা। যারা বল পায়ে মাঠে নামলেই শুরু ফুটবল উৎসবের। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন ইন্ডিয়া।
ভারতের মাটিতে ইতিমধ্যেই পা রেখেছে বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎরা। পুরো দেশ তাকিয়ে এখন সে দিকেই। রাত জাগা, দিন জাগা শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য। আর বিশ্বকাপ শেষে যেন বিসর্জনের হতাশা। সত্যি তো, ভারতের মাটিতে আবার কবে হবে এত বড় ইভেন্ট? প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসে। তবুও বাংলার সব থেকে বড় উৎসব শেষে ফুটবল উৎসবে মাততে তৈরি আপামর ভারতবাসী। তৈরি ফুটবলের বাংলাও। তৈরি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। যেখানে বাজবে শেষ বাঁশি। যেখান থেকে শুরু হবে আরও এক অপেক্ষার। বিসর্জন শেষে বোধনের অপেক্ষা।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন।
এই তো শেষ বিশ্বকাপের কথা। ব্রাজিলের মাটিতে ২০১৪তে বসেছিল মূল বিশ্বকাপের আসর। সে কী উত্তেজনা! ব্রাজিলের ছিটকে যাওয়া, আর্জেন্তিনার ফাইনালে হার, জার্মানির অনবদ্য ফুটবল— পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে সব মিলে ডুবে থাকা ৩২টা দিন। আর ভারতে বসেও ভারতীয় সময় থেকে সাড়ে আট ঘণ্টা পিছিয়ে থাকা। যেন ব্রাজিলেই রয়েছি। ঠিক যেমনটা হয়েছিল তার পর পরই রিও অলিম্পিক্সে। শেষে ভারতীয় সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আর হতাশা। এই ভেবে অপেক্ষা করতে হবে আরও চারটে বছর, রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য।
এই বিসর্জনের পর বোধনের অপেক্ষাই তো জীবনকে সচল রাখে। কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বোধন আর বিসর্জন। বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই মনের কোণায় উঁকি দিয়ে যায় বিসর্জনের শঙ্কা। বিসর্জন দিয়ে যায় বোধনের বার্তা।