লড়াই: এনবিএতে সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ পেসার্স। ফাইল চিত্র
ক্রিস্টোফার ও রোমোর আলাপটা হয়েছিল অদ্ভুত ভাবে। ২৩ নভেম্বর ইন্ডিয়ানাপোলিসের ব্যাঙ্কার্স লাইফ ফিল্ড হাউস স্টেডিয়ামে এনবিএ-তে ইন্ডিয়ানা পেসার্স বনাম সান আন্তোনিয়ো স্পার্স ম্যাচের বিরতিতে। বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতায় বদলে যেতে বেশি সময় লাগেনি। তার পর থেকে ঘরের মাঠে পেসার্সের কোনও ম্যাচই বাদ দেননি তাঁরা। অথচ প্রিয় দলের জন্যই ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের পরিকল্পনা ভেস্তে গেল ক্রিস্টোফার ও রোমোর!
এই মরসুমে এনবিএ-তে খুব একটা ভাল জায়গায় নেই পেসার্স। ইস্টার্ন কনফারেন্স জ়োনে তিন নম্বরে। তার উপরে অন্যতম সেরা অস্ত্র ভিক্টর ওলাডিপো চোট পেয়ে কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছেন। তবুও ক্রিস্টোফার ও রোমোর আশা ছিল মিলওয়াকি বাকসকে হারিয়ে দেবে তাঁদের প্রিয় দল। প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও ম্যাচের পরে ডাউন টাউনের একটি রেস্তরাঁয় যাবেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করতে। কিন্তু দুর্দান্ত লড়েও জিততে পারল না পেসার্স। উল্টে স্পার্স ১০৬-৯৭ জিতে লিগ টেবলের শীর্ষে চলে গেল। ম্যাচের পরে স্টেডিয়ামের সামনে পেনসিলভেনিয়া স্ট্রিটের উপরে থমথমে মুখে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রিস্টোফার ও রোমো। মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। হতাশ ক্রিস্টোফার বলছিলেন, “রাত বারোটায় রোমোকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র উপহার দেব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু সব মাটি হয়ে গেল। ও এখন আর রেস্তরাঁয় যেতে চাইছে না।’’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবন জুড়ে রয়েছে বাস্কেটবল, বেসবল ও আমেরিকান ফুটবল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও স্টেডিয়াম ভর্তি হয়ে যায়। ইন্ডিয়ানাপোলিসের কথাই ধরা যাক। এই মুহূর্তে প্রবল ঠান্ডা। টানা তিন দিন ধরে তুষারপাত হচ্ছে। তার সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। বেশির ভাগ গাছেরই পাতা ঝরে গিয়েছে। ডালগুলোতে বরফ জমে রয়েছে। এমনিতেই ইন্ডিয়ানাপোলিসের জনসংখ্যা কম। তার উপরে প্রবল ঠান্ডা। ফলে রাস্তায় প্রায় লোক-জন দেখাই যাচ্ছে না। অথচ ব্যাঙ্কার্স লাইফ ফিল্ড হাউস স্টেডিয়ামের ছবিটা একেবারে উল্টো।
স্থানীয় সময় সন্ধে সাতটায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দুপুর থেকেই স্টেডিয়ামের সামনে ভিড়। অধিকাংশের গায়ে পেসার্সের হলুদ-নীল জার্সি। কেউ কেউ গলায় জড়িয়েছেন স্কার্ফ, মাথায় পরেছেন টুপি। স্টেডিয়ামের ভিতরে রীতিমতো উৎসবের আবহ। পেসার্সের ম্যাসকট ‘বুমার’ দুপুর থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য পাগল ছোট থেকে বড় সবাই। ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে তারকাদের নাম লেখা জার্সি, টুপি, স্কার্ফ, পুলওভার থেকে বাস্কেটবল- বিক্রি করা হচ্ছে অর্ধেক দামে। তা কেনার জন্য দর্শকদের হুড়োহুড়ি পাল্লা দিতে পারে চৈত্র সেলের সঙ্গে!
আঠারো হাজার দর্শকাসনের স্টেডিয়াম ভর্তি হয়ে গেল ম্যাচ শুরু হওয়ার প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগেই। তবে প্রিয় দল হারছে দেখে খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগেই অধিকাংশ দর্শক বেরিয়ে গেলেন। বসে থাকলেন ক্রিস্টোফার-রোমোর মতো কয়েক জন। যাঁরা মনে করেন পেসার্স-ই চ্যাম্পিয়ন হবে। পেসার্স কর্তৃপক্ষ অবশ্য মিলওয়াকির বিরুদ্ধে হার নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। এই মুহূর্তে তাঁদের প্রথম লক্ষ্য ভারতে দলের সমর্থকের সংখ্যা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, ২০২১ সালে এনবিএ অল-স্টার গেম সফল আয়োজন।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই মুম্বইয়ে স্যাক্রেমেন্টো কিংসের বিরুদ্ধে প্রি-সিজন ম্যাচ খেলবে পেসার্স। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রিক ফিউসন বললেন, “এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রচুর সমর্থক রয়েছে। আমরা চাই ভারতেও পেসার্সের জনপ্রিয়তা বাড়াতে। এই কারণেই মুম্বইয়ে আমরা প্রি-সিজন ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ পেসার্স কোচ নেট ম্যাকমিলান খোলাখুলি বলে দিলেন, “ভারতের বিশাল বাজার ধরাটাই আমাদের লক্ষ্য।” কিন্তু এনবিএ-র অ্যাকাডেমি তো নয়ডায়। তা হলে ক্রিকেটের শহর মুম্বইয়ে কেন ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত? ম্যাকমিলান বললেন, “দুই দলের মালিকের পছন্দ মুম্বই। তা ছাড়া ওখানে এনবিএ-র অফিস রয়েছে।”
দু’বছর পরে এনবিএ অল-স্টার গেমস ইন্ডিয়ানাপোলিসে। কিন্তু এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পাঁচ হাজার হাতে বোনা উলের টুপি ও স্কার্ফ বানানোর প্রতিযোগিতা। স্টেডিয়ামে পেসার্সের অফিস থেকেই দেওয়া হচ্ছে উল ও কাঁটা। অনেকেই দেখা গেল নাম নথিভুক্ত করে উল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
উল নিয়েছিলেন রোমো-ও। কিন্তু প্রিয় দলের হারের যন্ত্রণা ভুলে আদৌ তিনি টুপি ও স্কার্ফ বানানো শুরু করতে পারবেন কি না তা ক্রিস্টোফারও জানেন না!