পিচ মোটেই খলনায়ক নয়, বুঝিয়ে দিলেন উমেশ

পেটের গোলমালে ব্যাটিংয়ের মাঝপথে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হল ম্যাট রেনশকে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

পুণে শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

ঘূর্ণিতেও সফল উমেশ যাদব। নিলেন ৩২ রানে ৪ উইকেট। ছবি: পিটিআই।

পেটের গোলমালে ব্যাটিংয়ের মাঝপথে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হল ম্যাট রেনশকে।

Advertisement

লাঞ্চের পরপরই ধস নামা শুরু হল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে।

পুণের খানাপিনা কি তা হলে অজিদের পক্ষে খুব একটা স্বাস্থ্যকর হচ্ছে না?

Advertisement

প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকে কি তা হলে নির্জলা উপবাসে মাঠে নামবেন স্টিভ স্মিথ ও তাঁর দলের ছেলেরা?

এমসিএ স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের পিছনের লাউঞ্জে কিছু সাংবাদিকদের মধ্যে যখন এই আলোচনাটা বেশ জমে উঠেছে, তখনই মার শুরু করলেন মিচেল স্টার্ক।

৫৮ বলে অপরাজিত ৫৭। কোথায় তাঁর দায়িত্ব হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নতুন বল ও রিভার্স সুইং দিয়ে কাত করা। তা না করে তিনি ভারতীয় বোলারদের রিভার্স সুইং ও নতুন বলের বারোটা বাজাচ্ছেন!

শেষ পর্যন্ত টেস্টে একশো উইকেট ও হাজার রানের একটা ছোট মাইলস্টোনে অস্ট্রেলিয়ার রানটাকে আড়াইশো পার করিয়ে দিলেন স্টার্ক।

উমেশ যাদবের হাত থেকে বেরোনো অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বলটাকে ব্যাটের ভিতরের কানা দিয়ে যখন স্টাম্পে টেনে নিলেন ডেভিড ওয়ার্নার, তখনও অস্ট্রেলিয়ার বিপদঘণ্টা বাজেনি। যে উইকেটে দ্বিতীয় ওভার থেকেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন বোলিং শুরু করেন, সেই উইকেটে লাঞ্চে ৮৪-১ স্কোর দেখে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের নিয়ে প্রায় ধন্য ধন্য শুরু করে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি, ওয়েবসাইট সর্বত্র।

ঠোঁটকাটা শেন ওয়ার্ন তো বলেই দিলেন, ‘‘এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটিং! অসাধারণ।’’ কিন্তু দিনের শেষে সেই ওয়ার্নকেই বলতে শোনা গেল, ‘‘এ কী করল অজি ব্যাটসম্যানরা! মনে হল যেন ওদের রান তোলার তাড়া ছিল।’’

ব্যাট করতে করতে রেনশ-র কেন হঠাৎ মাঠ ছাড়ার তাড়া, তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু স্টিভ স্মিথ, শন মার্শ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, মিচেল মার্শ, ম্যাথু ওয়েডদের কীসের তাড়া, তা তো বোঝা গেল না। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ৮৬ রানে আট উইকেটের এই ধস দেখে বেঙ্গালুরু থেকে এরাপল্লি প্রসন্ন ফোনে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ওরা যে দুর্বল, তা তো ওরা টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনই বুঝিয়ে দিল। কী খারাপ বলেছে হরভজন?’’

কিন্তু লাঞ্চের আগে যে ৮২ রানের পার্টনারশিপটা খেলে ভারতীয়দের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছিলেন দুই ওপেনার? ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল, ‘‘একটা সেশন দেখে তো আর কিছু ধরে নেওয়া উচিত নয়। এমন অনেকবারই হয়েছে।’’

তা হলে প্রশ্নটা উঠছে, উইকেট খারাপ? না অস্ট্রেলিয়া খারাপ?

ওদেশে গিয়ে অস্ট্রেলীয়দের ঘুম কেড়ে নেওয়া স্পিনার এ বার একহাত নিলেন, ‘‘যে পিচকে আপনারা টার্নার, টার্নার বলে চলেছেন সমানে, সেখানে তো একজন পেসার দারুণ বল করল। উইকেটই যদি ক্রিকেটের সব কিছু হয়ে যায়, তা হলে তো স্কিল বলে আর কিছুই বেঁচে থাকবে না। আমাদের ছেলেগুলোর দক্ষতা অস্বীকার করছেন কী করে?’’

অস্বীকার করার কোনও জায়গা যে নেই, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন নাগপুরের ২৫ বছর বয়সি পেসার উমেশ যাদব। অশ্বিন-জাডেজাদের জন্য সাজানো মঞ্চে চার-চারটে উইকেট নিয়ে।

দেখালেন ঋদ্ধিমান সাহাও। শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে প্রায় অসম্ভব একটা ক্যাচ নিয়ে। ঋদ্ধির এই অসাধারণ ক্যাচটাই বোধহয় বৃহস্পতিবার ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত বিষয় ছিল।

দিনের শেষে উমেশকে টিভি সাক্ষাৎকারে বলতে শোনা যায়, ‘‘গত ছ’মাস ধরে যা পরিশ্রম করেছি, তার ফল পেলাম। অনিল ভাই আর সঞ্জয় (বাঙ্গার) ভাই আমাকে নিয়ে পড়েছিলেন। কী ভাবে এ রকম পিচে উইকেট পেতে হবে, তা শিখিয়েছেন। প্রথম দিন যথেষ্ট টাইট লাইনে বোলিং করেছি। ব্যাটসম্যানরা যাতে ভুল করতে বাধ্য হয়। জানতাম ওরা ওদের স্বাভাবিক শট খেললে কোনও না কোনও সময় ভুল করবেই। আমিও রিভার্স সুইং পাচ্ছিলাম বলে আরও সুবিধা হল।’’

দিনের প্রথম দু’ঘণ্টায় ও শেষ এক ঘণ্টায় ম্যাচের রাশ ছিল অস্ট্রেলিয়ার হাতে। দিনের শেষে যে রানটা (২৫৬-৯) নিয়ে অস্ট্রেলিয়া শিবির তাই লড়াই করার কথা ভাবতে পারছে। মাঝের সময়টা ভারতের।

তা হলে উইকেটকে দোষ দিয়ে লাভ কী?

অশ্বিন-জাডেজা দুটো করে উইকেট পেলেন। উমেশের ঝুলিতে চারটে উইকেট। অথচ ইশান্তের পকেট ফাঁকা। তা হলে পিচ নিয়ে এত হইচই কেন?

বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে যা ঘটল সবটাই তো ক্রিকেটীয় দক্ষতার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে কখনও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া, তো কখনও ভারত। তা হলে উইকেট এখানে প্রধান ভূমিকায় কেন?

ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় বলছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়াকে খারাপ টিম বলার সাহস আমার নেই। বিশেষ করে দিনের শেষে স্টার্কের ওই লড়াইটা দেখার পর। ওই চাপের মুখে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াল! ভারতও মোটেই খারাপ নয়। মনে রাখবেন লড়াইটা কিন্তু এক নম্বর ও দু’নম্বরের। এখানে উইকেটটা নাটকের একটা অংশ মাত্র। আর কিছুই না।’’

স্কোরবোর্ড

অস্ট্রেলিয়া

প্রথম ইনিংস

রেনশ ক বিজয় বো অশ্বিন ৬৮

ওয়ার্নার বো উমেশ ৩৮

স্মিথ ক কোহালি বো অশ্বিন ২৭

শন মার্শ ক কোহালি বো জয়ন্ত ১৬

হ্যান্ডসকম্ব এলবিডব্লু জাডেজা ২২

মিচেল মার্শ এলবিডব্লু জাডেজা ৪

ওয়েড ব্যাটিং ৫৭

ওকিফ ক ঋদ্ধি বো উমেশ ০

লায়ন এলবিডব্লু উমেশ ০

হ্যাজলউড ব্যাটিং ১

অতিরিক্ত ১৫

মোট ২৫৬-৯

পতন: ৮২, ১১৯, ১৪৯, ১৪৯, ১৬৬, ১৯০, ১৯৬, ২০৫, ২০৫

বোলিং: ইশান্ত ১১-০-২৭-০, অশ্বিন ৩৪-১০-৫৯-২,
জয়ন্ত ১৩-১-৫৮-১, জাডেজা ২৪-৪-৭৪-২, উমেশ ১২-৩-৩২-৪।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন