ভিডিও গেমের পোকা। ফ্যাশন ট্রেন্ডের চলমান গাইডবুক। নিত্যনতুন সেলিব্রেশনের ভঙ্গির আবিষ্কারক। পারিবারিক মনোবিদ। অভিমানী ছাত্র। চকোলেট হিরো। জাতীয় নায়ক!
বছর পঁচিশের ফুটফুটে যুবক শারীরিক ভাবে যতটা দুবলা-পাতলা, আবেগের ব্যাপ্তিতে ততটাই বিশাল। তিনি অবশ্যই আঁতোয়া গ্রিজম্যান। বা আরও ভাল করে বললে, ফরাসিদের আদরের ‘গ্রিজু’। যাঁর জো়ড়া গোলে ফ্রান্স ইউরোর ফাইনালে। যাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ ফ্রান্স-সহ গোটা ফুটবলবিশ্ব। মাঠ ছাড়ার পরেও আকর্ষণের বলয় যাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে।
ইউরো-পক্ষের অন্তিমলগ্নে রোম্যান্সের রাজধানীতে আঁতোয়া গ্রিজম্যানের মতো সুদর্শন এবং সফল ফুটবলার কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অথচ এই গ্রিজম্যানই কি না একটা সময় ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পেতেন না। তিনি এতটাই রোগা ছিলেন যে, তাঁর স্বাস্থ্যের উপর ভরসা করতে পারত না কোনও ক্লাব। শেষমেশ রিয়াল সোসিয়েদাদের এক ফরাসি স্কাউটের হাত ধরে ফুটবল মাঠে এই দেবশিশুর আবির্ভাব।
ফুটবলের কোষ্ঠীবিচারে আঁতোয়া আদ্যন্ত ‘ফিউশন প্রোডাক্ট’। বাবার পূর্বপুরুষের শরীরে যে দেশের রক্ত বইছে, বৃহস্পতিবার রাতে সেই জার্মানিকে হারিয়ে উঠেছেন। আবার দাদু যে দেশের, রবিবারের ফাইনালে সেই পর্তুগালের সামনে নামছেন!
স্প্যানিশ বান্ধবী এরিকা পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার বলেই কি না কে জানে, ফ্যাশন ট্রেন্ড সব সময় তাঁর কণ্ঠস্থ। নিমেষে পাল্টে ফেলেন চুলের স্টাইল। সেলিব্রেশনের ভঙ্গি— সেটাও এক-এক ম্যাচে এক-এক রকম। জার্মানি ম্যাচের ‘টেলিফোন সেলিব্রেশন’ যদি প্রিয় র্যাপার ড্রেকের মিউজিক ভিডিও থেকে নেন, তো তিন মাসের কন্যাকে মনে করে গোলের পর মুখে আঙুল ঢুকিয়ে দৌড়ন। কখনও দু’হাত মেলে এরোপ্লেন হয়ে যান তো কখনও আবার ট্রাক চালানোর ভঙ্গিতে পাগলের মতো ছোটেন।
আধুনিক ফুটবলারের ভাবমূর্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকে শিশুসুলভ একটা মন। বড় মঞ্চের টেনশনে তাই ভুলে যান নিজেরই ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন! সারা রাত পার্টির পরে সকালে দেরিতে প্র্যাকটিসে আসেন। এসে কোচের ধমক খেয়ে মুখ গোমড়া করে ঘোরেন।
শিশু? তা হলে কী করে চরম যন্ত্রণার মুহূর্তে তিনিই হয়ে ওঠেন ছোট বোনের মনোবিদ? গত নভেম্বরের জঙ্গি হানায় বাতা ক্লঁ থিয়েটারে আটক ছিলেন গ্রিজম্যানের বোন মড। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে ফের জীবনে ফিরেছেন। কোনও পেশাদার মনোবিদের সাহায্য ছাড়াই। এবং আজ মড সগর্বে বলেন, ভয়ের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারাটা শুধু দাদার জন্য।
তবে শুধু কি মড? আঁতোয়া গ্রিজম্যানের এক-একটা গোল তো সেই দুঃস্বপ্ন আর তাঁর গোটা দেশের মধ্যেকার ব্যবধানটাও ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে।