চাই জয়: টালিগঞ্জকে তাতাতে বিশেষ অতিথি দেব। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
চার বছরে একটুও বদলাননি সুব্রত ভট্টাচার্য!
৬ নভেম্বর ২০১০: রাজধানীতে সেই রাতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এবং উত্তমকুমারে ডুবে ছিলেন তিনি। আর পরের দিন ইউনাউটেড স্পোর্টসকে উপহারে দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক ডুরান্ড কাপ।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪: মৌলালির যুব কেন্দ্রে ফের তাঁর মুখে হেমন্ত-মান্না-উত্তম! নিজের শহরে কি আজ সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? তিন প্রধানের বাইরে আরও একটা ছোট টিমকে এ বার কলকাতা লিগ উপহারে দেওয়ার পালা যে!
ট্রফির নাম বদলালেও, সুব্রতর মেজাজে বদল নেই। ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ক্লাব-কর্তাদের রাতের ঘুম ছুটে গেলে কী হবে, ময়দানের ‘বাবলু’-র বহিরঙ্গে যেন চার বছর আগের ডুরান্ড-জয়ী কোচের ছায়া স্পষ্ট! চাপমুক্ত। রসিকতা। ঠাট্টা-ইয়ার্কি। ফুটবলারদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। হেমন্ত-মান্নার গান গাইছেন। উত্তমের সিনেমা নিয়ে আলোচনা। ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফুটবলারদের চাপ কমাতেই কি এই টোটকা সুব্রতর? “ইতিহাস গড়তে হবে, ইতিহাস গড়তে হবে-- শুধু এটা মাথায় নিয়ে নামলে কোনও দিন জিততে পারব না। টিম অসুস্থ হয়ে পড়বে। আগে মানসিক স্বস্তির প্রয়োজন। তা হলে তো মাঠে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারবে ফুটবলাররা,” বলছিলেন টালিগঞ্জ অগ্রগামীর টিডি।
বহিরঙ্গ তো গেল, সুব্রতর অন্দরমহলের ছবিটাও কি একই রকম চনমনে? আর্মান্দো কোলাসোর লাল-হলুদ ব্রিগেড যে মানের ভয়ঙ্কর ফুটবল উপহার দিচ্ছে, তাতে যে কোনও বিপক্ষ কোচের পক্ষে একেবারে চাপমুক্ত থাকা অসম্ভব! সুব্রত নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও, তাঁর দলের প্রধান স্টপার বেলো রজ্জাক কিন্তু বাস্তব ছবিটা পুরোপুরি লুকিয়ে রাখতে পারলেন না। সোমবার সকালে যুবভারতীতে প্র্যাকটিসের পরে টালিগঞ্জের তারকা নাইজিরিয়ান স্টপার বলছিলেন, “সবচেয়ে বেশি ভয় ডুডুকে। আমাদের ডিফেন্সের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ ডুডুকে আটকানো।”
বেলোর হাবভাবে বুঝতে অসুবিধা হল না, ইতিহাস গড়ার ম্যাচে টালিগঞ্জের ত্রাস এখন ডুডু। সুব্রতর দুই বিদেশি স্ট্রাইকার কোকো-বিদেমির গলাতেও একই সুর। বিদেমি যেমন বলছিলেন, “ডুডু খুব ভয়ঙ্কর। অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলে। ওকে মাঝমাঠেই আটকাতে হবে।” পাশে দাঁড়ানো কোকো আবার বললেন, “চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার সুযোগটাও ছেড়ে দিতে রাজি। কিন্তু তাতে তো ডুডুকে আটকাতে হবে।” তবে শুধুই কী ফুটবলাররা? শোনা গেল, সুব্রত নিজেও আলাদা ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করছেন ডুডুকে আটকাতে। এমনকী শুরুতে কোন দুই বিদেশি খেলাবেন, তা নিয়েও চরম দ্বিধায় তিনি। বলছিলেন, “এখনও ঠিক করিনি বেলোকে আগে খেলাব না বিদেমি-কোকো দিয়ে শুরু করব।” টালিগঞ্জ টিডি-র কথা শুনে মনে হল, প্ল্যান ‘বি’ তৈরি রাখছেন তিনি।
তবে টালিগঞ্জের কাছে কী ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর কোনও অস্ত্র নেই? আছে। চারটে অস্ত্র আছে।
১) রাজু গঙ্গোপাধ্যায় (গোলকিপার): টালিগঞ্জের প্রাক্তন কোচ রঘু নন্দী স্বয়ং রাজুকে সেরা ফুটবলারের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আউটিং ভাল। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে গোল বাঁচানোয় দক্ষ।
২) বেলো রজ্জাক (স্টপার): দু’জন ডিফেন্ডারের কাজ একা করেন। হেড এবং ডায়াগনাল কভারিং দারুণ।
৩) গৌতম ঠাকুর (মিডিও): দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলতে না পারলেও, ব্লকিং এবং হেডিং ভাল। মাঠ জুড়ে খেলতে পারেন।
৪) ড্যানিয়ল বিদেমি (স্ট্রাইকার): প্রচুর গোল করেছেন। বক্সের সামনে বিপজ্জনক। সোমবার সকালের প্র্যাকটিসেও সুব্রতকে শান দিতে দেখা গেল তাঁর চার অস্ত্রে। এখন প্রশ্ন, আর্মান্দো-ব্রিগেডকে কি তাঁর ‘ফ্যাব ফোর’ দিয়ে আঘাত করা সম্ভব?
বাংলার বহু ফুটবলপ্রেমী থেকে টালিগঞ্জ কর্তারা শুধু নন। ‘বাবলু’-র প্রিয় ‘ভোম্বল’দা-ও আজ বিকেলে সে দিকেই তাকিয়ে!