ক্রিকেটার কোহালিকে হারানো গেল, অধিনায়ক কোহালিকে নয়

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা-রাতে বিরাট কোহালি কী করলেন? ট্রফি-জয়ের শেষ সীমান্তে পৌঁছেও আট রানে হারার জন্য টিমের লোয়ার অর্ডারকে তুলোধোনা? নাহ্।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৪:০২
Share:

অভিনব দৃশ্য। হেরেও মাঠ প্রদক্ষিণ বিরাট-বাহিনীর। ছবি: টুইটার

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা-রাতে বিরাট কোহালি কী করলেন?

Advertisement

ট্রফি-জয়ের শেষ সীমান্তে পৌঁছেও আট রানে হারার জন্য টিমের লোয়ার অর্ডারকে তুলোধোনা?

নাহ্।

Advertisement

টিমের এক নম্বর বোলিং অস্ত্র শেন ওয়াটসনকে মোক্ষম দিনে জঘন্যতম বোলিংয়ের জন্য দোষারোপ?

ভুল।

পরপর দু’টো মেগা-টুর্নামেন্টে ভাগ্যহীন থেকে শোকতাপে মেজাজ হারানো?

খবর নেই।

বিরাট কোহালি বরং রবিবার রাতের চিন্নাস্বামী থেকে ফিরে মূহ্যমান টিমকে নিয়ে বসলেন। নিজে রক্তাক্ত হয়েও নেমে পড়লেন ছিন্নভিন্ন বাকি দশকে টেনে তুলতে।

ঘরের মাঠে আইপিএল ফাইনাল হেরে আরসিবি ক্রিকেটাররা যে কতটা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন, তা গত রাতের চিন্নাস্বামীতে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, দেখেছেন। তাঁরা দেখেছেন কোনও এক এবি ডে’ভিলিয়ার্সের চোখ ছলছল করতে। দেখেছেন, সচিন বেবি-কে বাইশ গজে দাঁড়িয়েই অঝোরে কেঁদে ফেলতে। ক্রোধ-যন্ত্রণা-হতাশার আগুনে দগ্ধ লাল জার্সি পরিহিত শরীরগুলো যে টিম হোটেলে ফিরে নিজেদের সামলে উঠতে পেরেছিল, এমন নয়। এক-আধ বার তো নয়, এ নিয়ে তিন-তিন বার হল। তিন বার ফাইনালে উঠে একবারও জিততে পারল না আরসিবি।

শোনা গেল, রবিবার রাতে টিমমেটদের অবসন্ন, বিদীর্ণ অবস্থা দেখে তাঁদের সঙ্গে নাকি বসে পড়েন কোহালি। টিমকে চাঙ্গা করতে ছোটখাটো একটা বক্তৃতাও দেন। আরসিবি অধিনায়ক নাকি বলেন যে, আমরা ফাইনালে হেরে গিয়েছি ঠিক। তার জন্য দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা হবে সেটাও ঠিক। কিন্তু আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, কোন জায়গা থেকে আমরা ফাইনালে পৌঁছেছি। অতল খাদের একেবারে শেষ ধাপে তো চলে গিয়েছিল এত ভাল টিমটা। শোনা গেল, ক্যাপ্টেন কোহালি নাকি বলে দেন যে, তিনি গর্বিত। তিনি গর্বিত টিমমেটদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। গত দু’মাস নানা ঝড়-ঝাপটা সামলে যা টিমকে আইপিএল ফাইনালে তুলেছিল।

রবিবার রাতে কোহালির ‘পেপ-টক’-এর সময় উপস্থিত থাকা কেউ কেউ এ দিন বলছিলেন যে, অধিনায়ক একেই বলে! যে নিজের চরম হতাশাবিদ্ধ মুহূর্তেও টিমের কথা ভেবে অবিচল থেকে যাবে। যে নিজের যন্ত্রণা চেপে রেখে সতীর্থদের ক্ষতে অবিরাম প্রলেপ দিয়ে যাবে। যেখানে অধিনায়ক বলে যাবে, আমার এত সাফল্য, এত রান কোনও দিন সম্ভব হত না তোমরা পাশে না থাকলে। যেখানে অধিনায়ক বলে যাবে, আমার টিমে কেউ বড়-ছোট নয়। বিদেশি হোক বা স্বদেশীয়, গুরুত্ব সবার সমান। কারণ টিমের প্রতি প্রত্যেকের অবদান সমান। একটা ক্রিস গেইলের যতটা, কোনও এক সচিন বেবিরও ঠিক ততটা। যেখানে অধিনায়ক বলে যাবে, আমরা এ বার পারিনি। কিন্তু তাই বলে যে আগামীতেও পারব না কে বলল? চলো, আগামী আইপিএলের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা আজ থেকে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি শুরু করে দিই। আর অধিনায়ক এ সবই বলে যাবে, টিমের ট্রফি-স্বপ্নের কয়েকটা পোড়া টুকরো পড়ে থাকার দিনে।

শুনলে প্রত্যক্ষদর্শীর মুহূর্তে মনে পড়বে বেঙ্গালুরু রাত। তার কয়েকটা টুকরো ছবি। আরসিবি কোচ ড্যানিয়েল ভেত্তোরি বলছিলেন না যে, ক্যাপ্টেন কোহালি তাঁকে মুগ্ধ করেছেন? বলছিলেন না যে, এই ক্যাপ্টেন না থাকলে ফাইনালে যাওয়াই টিমের সম্ভব হত না?

আসলে ডেভিড ওয়ার্নার রবিবারের চিন্নাস্বামীতে শুধু একজন কোহালিকেই হারাতে পেরেছেন। দুর্বার ওয়ার্নার হারাতে পেরেছেন শুধু ক্রিকেটার কোহালিকে। কিন্তু ক্যাপ্টেন কোহালি, তাঁকে নিঃশেষ করতে পারলেন কোথায়? বরং ঘুরেফিরে তো মনে হচ্ছে, দুঃস্বপ্নের চিন্নাস্বামী রাত থেকেই ক্যাপ্টেন কোহালির দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন