কীর্তি: নাগপুরে রবিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিশত রান করার পরে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির উচ্ছ্বাস। একই সঙ্গে ভারত অধিনায়ক হিসেবে ১২টি সেঞ্চুরি করে সুনীল গাওস্করকে টপকে যাওয়ার রেকর্ড গড়লেন বিরাট। পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে এক বছরে ১০টি সেঞ্চুরি করে বিরাট ভেঙে দিলেন রিকি পন্টিং এবং গ্রেম স্মিথের নজির। দিনের শেষে ৩৮৪ রানে এগিয়ে ভারত। ছবি: এএফপি।
রবিবারের নাগপুরে বিরাট কোহালির কাছে কি শুধু শ্রীলঙ্কার বোলাররাই হার মানলেন? খুব সহজ উত্তর হবে, হ্যাঁ। এবং এই সহজ উত্তরটা আদৌ ঠিক হবে না।
রবিবার নিজের পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরি (২৬৭ বলে ২১৩ রান) করার পথে বিরাট কোহালি হার মানালেন ক্রিকেটে তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকেও। তাঁরা হলেন ডন ব্র্যাডম্যান ও রিকি পন্টিং!
পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, অধিনায়কদের মধ্যে হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে বদলে ফেলার ব্যাপারে সবার আগে এখন কোহালিই। তাঁর ‘কনভার্শন রেট’ হল ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, একশোবার হাফ সেঞ্চুরি করলে পঁচাত্তর বারই সেটা সেঞ্চুরিতে বদলে দেন কোহালি। সেখানে ব্র্যাডম্যানের ‘কনভার্শন রেট’ ৬৭ শতাংশ। কোহালি ১৬টি ফিফটি প্লাস স্কোরের মধ্যে ১২টিতে একশোর ওপর রান করেছেন। ব্র্যাডম্যান এবং মাইকেল ক্লার্ক সেখানে ২১ ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলে ১৪টি ইনিংস সেঞ্চুরিতে বদলেছেন।
বিরাট তাণ্ডবের সামনে পিছনে পড়ে গিয়েছেন পন্টিংও। দেখা যাচ্ছে, অধিনায়ক হিসেবে এক বছরে পন্টিং এবং গ্রেম স্মিথ করেছিলেন ৯টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। রবিবারের পরে কোহালির এ বছরে সেঞ্চুরির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল দশে। ছ’টা ওয়ান ডে সেঞ্চুরি এবং চারটে টেস্ট সেঞ্চুরি।
শুধু অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকালেই হবে না। নিজের দেশেরও এক কিংবদন্তিকে এ দিন টপকে গেলেন কোহালি। তিনি সুনীল গাওস্কর। এর আগে ভারত অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল গাওস্করের। ১১টি। কোহালি সেটাও ভেঙে দিলেন রবিবারের অসাধারণ ইনিংসের পরে। যে ৩১টি টেস্টে কোহালি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে ১৬টি ইনিংসে তিনি পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করেছেন। সেঞ্চুরির সংখ্যা ১২টি।
কোহালির এমন অবিশ্বাস্য ফর্ম দেখার পরে এখন একটা প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ক্রিকেট মহলে। এই ছেলে যখন থামবেন, তখন ক্রিকেটের কোন রেকর্ড আর আস্ত থাকবে? ইডেনে নিজের পঞ্চাশতম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহালি। নাগপুরে হয়ে গেল ৫১তম। যে গতিতে তিনি এগোচ্ছেন, একশোটা আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি কিন্তু মোটেই অসম্ভব কোনও লক্ষ্য লাগছে না।
অধিনায়কের এই ইনিংস দেখার পরে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলছে বিরাট বন্দনা। তাঁর সতীর্থ থেকে শুরু করে ক্রিকেট ভক্তদের একটাই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে— অবিশ্বাস্য।
নাগপুরের পিচে কোহালির ইনিংস দেখার পরে অনেকের মনে হতে পারে, ব্যাট করাটা খুব সহজ ছিল জামথার বাইশ গজে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যিনি অনেকটা সময় পিচে কাটিয়েছেন, সেই চেতেশ্বর পূজারা কিন্তু অন্য কথা বলে গেলেন। তাঁর কথায়,‘‘এই পিচে কিন্তু রান করা কঠিন।’’ ঘটনা হল, কঠিন কাজকে সহজ করে দেখানোটাই যে ধর্ম করে নিয়েছেন বিরাট কোহালি।