ছবি: এএফপি।
এক জন সেঞ্চুরি করেই নেমে পড়েছিলেন জিমে। অন্য জন সম্পর্কে শোনা যায়, তিনি নাকি ১০ কেজি ওজন নিয়ে এক পায়ে ‘স্কোয়াট’ করতে পারেন, অন্য পা-টা শরীরের সমান্তরালে রেখে।
ফিটনেস। টিম ইন্ডিয়ার সাফল্যের এখন নতুন মন্ত্র। স্কিল তো আছেই, পাশাপাশি এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফিটনেস এখন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের লম্বা লম্বা এই সব ইনিংস খেলতে সাহায্য করছে।
প্রথম জন বিরাট কোহালি। একশো মিটার স্প্রিন্টারের মতো চেহারা, ফিটনেসও সে রকম। দ্বিতীয় জন অজিঙ্ক রাহানে। যার দুর্দান্ত পায়ের পেশি রানিং বিটউইন দ্য উইকেটস-কে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
এ তো গেল জিম ট্রেনিং। পাশাপাশি টিম সূত্রের খবর, দেশের প্রতিটা কেন্দ্রকে বলা আছে, যেখানে যেখানে কোহালিরা খেলতে যাবেন, ব্লেন্ডার যেন তৈরি থাকে। টিম সূত্রটি বলছে, ‘‘ভারতীয় প্লেয়াররা সব সময় ফলের রস আর স্মুদি-র সন্ধানে থাকে। যাতে এনার্জি লেভেলটা ঠিক রাখা যায়। এ ছাড়া খাওয়া বলতে গ্রিলড চিকেন বা গ্রিলড ফিশ। মোদ্দা কথা, কোনও অবস্থাতেই ফিটনেস নিয়ে আপস করা চলবে না।’’
জুটিতে লুটি
• প্রথম ভারত অধিনায়ক হিসেবে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি।
• নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২১১ কোহালির টেস্টে সর্বোচ্চ রান।
• বিরাট কোহালি ও অজিঙ্ক রাহানের ৩৬৫ পার্টনারশিপ চতুর্থ উইকেটে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
• নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোহালি ও রাহানে জুটি সবচেয়ে বেশি বল খেলেছে (৬৭২)।
• টেস্টে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেন রাহানে (১৮৮)।
কোহালি-রাহানে পার্টনারশিপের একটা তথ্যই বুঝিয়ে দেবে এই ফিটনেস লেভেল কোথায় পৌঁছে গিয়েছে। ৩৬৫ রান করার পথে দু’জনে মিলে খেলেছেন ৬৭২ বল। যা ইনদওরের প্যাচপ্যাচে গরমে খুব সহজ কাজ নয়। ‘‘একশো রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ৩৬৫ রান যোগ করাটা কিন্তু একটা স্পেশ্যাল ব্যাপার। কাজটা মোটেই সোজা ছিল না। গত কাল আমার যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছিল। গুছিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল। সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর ওদের উপর কর্তৃত্ব করতে চেয়েছিলাম। এই পার্টনারশিপটা অনেক কারণে আমাদের মনে থাকবে,’’ দ্বিতীয় দিনের শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে বলছিলেন রাহানে।
এই রেকর্ড পার্টনারশিপে দুই ব্যাটসম্যান দু’ধরনের ব্যাটিং করে গেলেন। বিরাট কোহালি (২১১) টেস্টে নিজের দু’নম্বর ডাবল সেঞ্চুরিটা করার পথে গোটা ইনিংসেই এগিয়েছেন রোলস রয়েসের মসৃণতায়। রাহানের (১৮৮) ইনিংসটাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম দিকটায় কিছুটা নড়বড়ে, তার পর আস্তে আস্তে রাশ নিজের হাতে তুলে নেওয়া। এ দিন ভারত ৫৫৭ রান তুলে ম্যাচ থেকে নিউজিল্যান্ডকে প্রায় ছিটকে দিয়েছে। তবে রবিবার রবীন্দ্র জাডেজা দু’বার ক্রিজে ঢুকে পড়ায় আম্পায়ার ভারতের বিরুদ্ধে ৫ রান পেনাল্টি দেন।
নিজের ইনিংসটা নিয়ে রাহানে বলছিলেন, ‘‘গত কাল আমার একটু অসুবিধে হচ্ছিল। বিরাট তখন আমায় এসে বলে, ব্যাটিংয়ের মজাটা নে। বলে, ‘ভুলে যা ওরা তোকে শর্ট বল করছে বা তোর গায়ে মারছে। ঘটনা হল, তুই এখনও নট আউট। এবং খেলাটা চালিয়ে নিয়ে গেলে তুই ওদের শাসন করবি’। দিনের ছ’নম্বর ওভারেই হেলমেটে খান রাহানে। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে পুল শটটা বার করে আনেন তিনি। সেঞ্চুরির পর আগ্রাসনটা আরও বাড়ে। এ দিন তিনটে ছয় এসেছে রাহানের ব্যাট থেকে।
টেস্টে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে রাহানে বলছিলেন, ‘‘বল হেলমেটে লাগছে না শরীরে, টিভি-তে ব্যাটসম্যানকে অস্বস্তিতে লাগছে কি না, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল হল আপনি উইকেটে টিকে আছেন কি না। টিকে থাকলে রান আসবেই। এই ইনিংসটা আরও উপভোগ করেছি, কারণ টেস্ট ক্রিকেটের মাহাত্ম্যটা কী, সেটা ভাল ভাবে বুঝতে পারলাম।’’