সাডেন ডেথ

তিরাশির সানির মতো আমরাও রবিবার জ্বলে উঠব না কে বলল

নব্বইয়ের বিশ্বকাপ প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের একটা ঘটনা দিয়ে আজকের লেখাটা শুরু করি। ক্যামেরুনের কাছে হেরে নক আউটে ব্রাজিলের মুখোমুখি আর্জেন্তিনা। কোথাও একটা পড়েছিলাম, প্রেস কনফারেন্সে আর্জেন্তিনা কোচ বিলার্দোকে একটা অদ্ভুত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। কারেকা, আলেমাও, দুঙ্গা, ব্র্যাঙ্কোরা নামছে। বেঞ্চে রোমারিও-বেবেতো। বুয়েনস আইরেসের ফেরার টিকিটটা কেটে রেখেছেন তো?

Advertisement

সঞ্জয় সেন

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৫
Share:

সঞ্জয় সেনের ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার

নব্বইয়ের বিশ্বকাপ প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের একটা ঘটনা দিয়ে আজকের লেখাটা শুরু করি। ক্যামেরুনের কাছে হেরে নক আউটে ব্রাজিলের মুখোমুখি আর্জেন্তিনা। কোথাও একটা পড়েছিলাম, প্রেস কনফারেন্সে আর্জেন্তিনা কোচ বিলার্দোকে একটা অদ্ভুত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল।
কারেকা, আলেমাও, দুঙ্গা, ব্র্যাঙ্কোরা নামছে। বেঞ্চে রোমারিও-বেবেতো। বুয়েনস আইরেসের ফেরার টিকিটটা কেটে রেখেছেন তো?
বিলার্দো শুনেটুনে কিন্তু সবাইকে নির্বাক করে দিয়েছিলেন উত্তরে। বলেছিলেন যে, সুইডেনের টমাস ব্রোলিন বলে ছেলেটা ব্রাজিলের ডিফেন্স ভেঙে গোল করেছে। তা হলে আপনারা জানেন না মারাদোনা-ক্যানিজিয়া কী করতে পারে না পারে?
বিলার্দোর সঙ্গে সঞ্জয় সেনের ফুটবল বিশ্বের কোনও মিলই নেই। কোথায় উনি, আর কোথায় আমি। কিন্তু ডার্বির আগে এটা লেখার কারণ আছে। দুই পৃথিবীতে কোনও মিল না থাকলেও সঞ্জয় সেনকেও একই কথাটা ইদানিং শুনতে হচ্ছে।
উল্টো দিকে ডং, খাবরা, মেহতাব। বেঞ্চে তুলুঙ্গা, গুরবিন্দর। অপমানের টিকিটটা কেটে ফেলছেন তো?
কলকাতা লিগে আমরা প্রথম দু’টো ম্যাচ ড্র করার পরই দেখছিলাম, ইস্টবেঙ্গলের হেক্সা লিগ চ্যাম্পিয়ন নানা ভবিষ্যদ্বাণী শুরু হয়ে গিয়েছে। আর্মির কাছে আমরা হারার পর তো দেখলাম, ডার্বিতে কেউ কেউ আমাদের পাঁচ-ছ’গোল খাইয়ে দিলেন! আবার নাকি অভিশপ্ত পঁচাত্তর ফিরে আসছে!
মুশকিল হল, ডার্বিটা অত সহজ হিসেবে আবার চলে না। কলকাতার ডার্বিতে নামলাম, জিতলাম আর বাড়ি চললাম— খুব কমই হয়েছে। আর আমাদের পাঁচ-ছ’গোল দেওয়ার আগে ইস্টবেঙ্গলকে ছ’বার নয় ষাট বার ভাবতে হবে। এটা ডার্বি। স্নায়ুর লড়াই। ইতিহাস ধুয়ে জল খাওয়ার জায়গা নয়। ওরা ইট নিয়ে তৈরি থাকলে আমার ডুডু-কাতসুমিরাও পাটকেল নিয়ে তৈরি।
জানি, কলকাতা লিগ সবুজ-মেরুন তাঁবুতে আনতে গেলে অনেক যদি, কিন্তু রয়েছে। কিন্তু এই ইস্টবেঙ্গলকে হারানো অসম্ভব নয়। লাল-হলুদের হেক্সা লিগের মুকুটে আমার মোহনবাগান কাঁটা যন্ত্রণা হয়ে থাকতেই পারে রবিবারের পরে। উৎসবের আকাশে আনতে পারে বিষাদের মেঘ।

Advertisement

আসলে এটা আমার-ছেলেদের কাছে দেখিয়ে দেওয়ার ম্যাচ। সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর ম্যাচ। ডুডু জানে এই ম্যাচটায় ওর জবাব কী হবে। লালকমল, আসিফ জানে ওদের ডিউটি কী? কেন লুইস, কাতসুমি জানে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের কোন জায়গাটায় মরণকামড় দিতে হবে।

মানছি, ধারে-ভারে ইস্টবেঙ্গল আমাদের চেয়ে এগিয়ে। দু’একজন আই লিগের ফুটবলারও বেশ চনমনে মেজাজে রয়েছে। ডং কে তো নাকি ছোঁয়াই মুশকিল শুধু নয়, অসম্ভবও! দু’গোল খেয়েও তাই ইস্টবেঙ্গল জিতে যায় বার বার দু’বার।

Advertisement

সেখানে একই রক্ষণ নিয়ে আমরা পরপর দু’টো ম্যাচও খেলিনি। তবুও পুলিশের কাছে এক গোল খেয়েও তিন গোলে জিতেছি। ডুডু, কাতসুমিদের পাশে গোল পাচ্ছে কেন, লালকমলরাও। আমার রক্ষণ ওদের চেয়ে তিনট়ে গোল কম হজম করেছে (ইস্টবেঙ্গল ৮, মোহনবাগান ৫)। আর কালীঘাটের মতো অবনমনে পড়া টিম যদি তিন গোল দিতে পারে তা হলে এই ইস্টবেঙ্গলকে আমরাও কাঁদিয়ে ছাড়ার ক্ষমতা রাখি।

আর এই ডার্বির ক্রাউড পুলার ডং? ওর জন্য আমরা তৈরি। ছেলেরা ওকে মৎস মারিব খাইব সুখে— এ ভাবে মাঠে অপারেট করতে দেবে না।

মনে আছে, তিরাশিতে রেলওয়ে এফসি-র জার্সি গায়ে প্রথম বড় দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে মোহনবাগানের শ্যাম থাপা, জেভিয়ার পায়াসকে গোল করতে দিইনি। ম্যাচটা ড্র হয়। ফুটবলার জীবন থেকে জানি এই পরিস্থিতিতে কোন অ্যান্টিভেনাম দিয়ে হটফেভারিটদের দাপাদাপি থামাতে হয়।

অতীত নিয়ে বেশি হাতড়াতে আমার ভাল লাগে না কোনও দিনই। তবুও যাঁরা এই ২০১৫ তে টাইমমেশিনে চেপে সেই পঁচাত্তর সালের পাঁচ গোল শয়নে-বসনে-স্বপনে দেখছেন তাঁদের তিরাশি সালের একটা ঘটনা বলি। যদিও সেটা ক্রিকেটের।

বিশ্বকাপ হেরে ভারত সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কানপুর টেস্টে কপিলের টিম হেরে গেল। মার্শাল দুই ইনিংসেই গাওস্করকে প্রায় কাঁদিয়ে আউট করেন। পরের টেস্ট কোটলায়। দিল্লির নেটে গাওস্করকে উদ্দেশ্য করে ভেসে আসে আওয়াজ— সানি তেরে পিছে মার্শাল আ রহা হ্যায়।

সানি ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন মার্শালকেই পাল্টা মেরে। ম্যাচটাও ক্যারিবিয়ানরা জেতেনি। চ্যাম্পিয়নরা জানে, কখন জ্বলে উঠতে হয়।

রবিবারের যুবভারতীতে আমাদের টিমও যে ‘সানি-মন্ত্র’ ধার নেবে না, কে বলল? আই লিগ বলে ‘খুব ছোট’ একটা টুর্নামেন্ট আমরাও জিতেছিলাম বোধহয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন