Abir Chatterjee

ইস্টবেঙ্গল জিতলে বারান্দায় শুরু হত আমাদের নাচ

সল্টলেকে বড় হয়েছি আমি। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বাড়ির সবাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাই ওদের দেখাদেখি আমিও ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক হয়ে গিয়েছিলাম।

Advertisement

আবীর চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:২৩
Share:

ভক্ত: কৃশানু দে ও বিকাশ পাঁজির ছবি থাকত আবীরের পড়ার ঘরের দেওয়ালে। ফাইল চিত্র

দু’দশকের মতো সময় যুবভারতীতে গিয়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখা হয়নি।

Advertisement

ডার্বি মানেই টেনশনের আবহ। দল যত ভালই হোক না কেন। তবে এক্ষেত্রে আমার এখন একটা সুবিধা রয়েছে। শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি অনেক সময়ই বড় ম্যাচ থেকে সাময়িক ‘সুইচড্ অফ’ হয়ে যেতে পারি। তখন টেনশন স্পর্শ করে না। আর এই ম্যাচে কে জিতবে তা অনুমান করার ক্ষমতা সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সিরও নেই।

আমাদের টলিউডেও অভিনেতা, অভিনেত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। বড় ম্যাচ এলে ওঁরাও ভাগ হয়ে যান এই দুই দলে। আমি ছোটবেলা থেকেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। প্রতি বছর ডার্বি ম্যাচ এলে আমাদের নিজেদের মধ্যেও এর-ওর পিছনে কম টিপ্পনী কাটা হয় না। আর এই ম্যাচে কোনও দল যদি জিতে যায়, তা হলে তো সেটা আরও বাড়ে। তবে প্রিয় দলের জয়-পরাজয় নিয়ে এই হাসি-ঠাট্টা একান্তই আমাদের চলচ্চিত্র জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে কিন্তু মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল নিয়ে জোরদার রসিকতা চলে। তবে কখনও তা সীমা অতিক্রম করে যায় না। যখনই আমরা বুঝতে পারি পরিবেশ-পরিস্থিতি গুরুগম্ভীর হয়ে উঠছে, তখনই কিন্তু আমরা এই সব মজা-মস্করায় দাঁড়ি টেনে দিই।

Advertisement

সল্টলেকে বড় হয়েছি আমি। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বাড়ির সবাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাই ওদের দেখাদেখি আমিও ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাকা ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আমার প্রথম মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখতে যাওয়া কাকার হাত ধরেই। কাকাই চিনিয়ে দিয়েছিলেন আমার প্রিয় দুই ফুটবলার কৃশানু দে ও বিকাশ পাঁজিকে। ছোটবেলায় এই কৃশানু-বিকাশ জুটিকে নিয়ে আমি এতটাই মুগ্ধ থাকতাম, যে খবরের কাগজের পাতা থেকে ওঁদের ছবি কেটে আমার পড়ার ঘরের দেওয়ালে লাগিয়েছিলাম। তবে কোনও দিন ময়দানে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলা দেখা হয়নি আমার। ছোটবেলায় এই নিয়ে একটা আক্ষেপও ছিল আমার। সেটা বড় হওয়ার পরে দূর হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে গিয়ে আড্ডাও দিয়ে আসতে পেরেছি। ছোটবেলায় বড়দের কাছে বায়না করতাম ইস্টবেঙ্গলের একটা লাল-হলুদ জার্সি কিনে দেওয়ার জন্য। সেটা তখন না পেলেও বড় হওয়ার পরে আমার সেই সাধও পূরণ হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সেই জার্সি যত্নের সঙ্গে বাড়িতে রেখে দিয়েছি।

ছোটবেলার বড় ম্যাচ নিয়ে আরও একটা স্মৃতি মাথায় আসছে। তা হল দুই দলের ফুটবলারদের নিয়ে প্রকাশিত দু’পাতার ক্রোড়পত্র। সেখানে প্রিয় দল নিয়ে নানা অজানা তথ্য ভিত্তিক লেখা থাকত। ইন্টারনেটের আগমন তখনও হয়নি। তাই এই লেখাগুলো গোগ্রাসে গিলতাম আমরা। তার পরে স্কুলে গিয়ে শুরু হত বন্ধুদের মধ্যে লড়াই।

তবে একটা সময়ের পরে মাঠে যাওয়া নিয়মিত হত না। তাই টিভিতেই ডার্বি উপভোগ করতাম বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে, ১৯৯৭ সালের সেই বিখ্যাত ‘ডায়মন্ড’ ম্যাচের কথা। সেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটায় আমি মাঠে যেতে পারিনি। বাড়ির টিভিতেই আমার প্রিয় দলের ৪-১ জয় দেখে প্রতিবেশী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে বড় ম্যাচ জয়ের উৎসব করেছিলাম।

সল্টলেকে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই দু’দলের সমর্থক ঠাসা ম্যাটাডোরগুলি যুবভারতীতে যেত। ছোটবেলায় ইস্টবেঙ্গল জিতলে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করতাম। ওরা ফেরার পথে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেই ইস্টবেঙ্গলের জন্য আমরাও জয়োল্লাসে চিৎকার করতাম। তার পরেই বারান্দায় শুরু হত আমাদের নাচ।

এখন অভিনয়ের ব্যস্ততার জন্য সময় পাই না সে ভাবে। তবে খবর রাখি। কলকাতা লিগের ডার্বি ছিল গত সেপ্টেম্বরে। সে দিন বাড়িতে থাকায় দেখছিলাম সমর্থকদের স্টেডিয়ামে যাওয়ার দৃশ্য। মনে পড়ছিল ছোটবেলার কথা। এ বার ফের একটা বড় ম্যাচ আসছে। তবে রবিবার সেই ডার্বির দিন আমি কলকাতার বাইরে একটা অনুষ্ঠানে যেতে পারি। তবে যেখানেই থাকি না কেন, হাতের মোবাইলে চোখ থাকবে। আর যদি কলকাতার বাইরে যেতে না হয়, তা হলে তো বাড়িতে বসেই খেলা দেখব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন